নিজস্ব প্রতিবেদক »
বে টার্মিনাল ও পতেঙ্গা কনটেইনার ইয়ার্ডসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বিদেশিদের আগ্রহ আছে। অনেকেই প্রস্তাব দিয়েছে। এগুলো আমরা স্টাডি করে দেখছি। আমাদের স্বার্থ কতটুকু সংরক্ষিত হবে সেটা বিবেচনা করেই আমরা সে পথে হাঁটবো।’
গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের অত্যাধুনিক টাগবোট কাণ্ডারি-৬, নিউমুরিং ওভার-ফ্লো কনটেইনার ইয়ার্ড, দ্বিতীয় ওভার ফ্লো কনটেইনার ইয়ার্ড, সুইমিং কমপ্লেক্স উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথম আমাদের দেখার বিষয় হল দেশের স্বার্থ। যেখানে আমাদের দেশের স্বার্থ, বন্দরের স্বার্থ সংরক্ষণ হবে আমরা সে জায়গায় হাঁটব। যেখানে দেশের স্বার্থহানি হবে, দেশের স্বার্থ যে জায়গায় ক্ষুণ্ন হবে, সে জায়গায় আমরা যাবো না। অবশ্যই আমাদের দেশের ও বন্দরের স্বার্থ প্রথম দেখতে হবে।’
বে টার্মিনালের কাজের ধীরগতি বিষয়ে খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘আগামী নির্বাচনের আগেই আমরা বে টার্মিনালের নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করে দেব। ২৪-২৫ সালে অপারেশনাল কাজ শুরু করতে পারব। কাজেই ধীরগতি নয়, টার্মিনাল কাজের ব্যাপারে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি। জমি অধিগ্রহণে কিছুটা দুর্বলতা দেখতে পাচ্ছি। আমাদের কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলছে। আশা করি দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে। যেটা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান, সেটা ইতোমধ্যেই বন্দর কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত করে ফেলেছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিতে পারলেই আমাদের কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বে টার্মিনালের কিছুটা অংশ বন্দর কর্তৃপক্ষ করবে। কিছুটা অংশ পিপিপি মডেলে করব। যারা আগ্রহী তারা ইতিমধ্যে প্রস্তাবনা দিয়েছে। আরো কিছু দেয়া হবে। আমাদের কার্যক্রম চলমান আছে। ডিপি ওয়ার্ল্ড, রেড সি গেটওয়ে, আদানি, সিঙ্গাপুর পোর্ট অথিরিটি, ডেনমার্ক, তুরস্ক ও ফ্রান্স থেকেও আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। তারা তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা তাদের প্রস্তাবনা দেখব। পর্যালোচনা করব। বন্দর, দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করেই তাদের সঙ্গে চুক্তিতে যাবো।’
গতকাল সকাল ১০টায় বারিক বিল্ডিং মোড় এলাকায় সার্ভিস জেটিতে বন্দরের জন্য কেনা কাণ্ডারি ৬ টাগবোট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন ‘করোনাকালে বন্দরে এসে আপনাদের সংকল্প দেখেছি দেশকে এগিয়ে নেওয়ার। বন্দরের অনেক সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে, সেগুলো পালন করেছে। এ বন্দর দেশের সব জনগোষ্ঠীর। শ্রমিকরা শ্রম দিয়েছেন, মুনাফা হয়েছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সেই মুনাফার অংশ দিয়েছে। বন্দর গতিশীল হয়েছে। সরকার প্রধান শেখ হাসিনা ১২ বছর ধারাবাহিক দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আছেন। তিনি তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তার নেতৃত্বে দেশের অগ্রগতি অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান, বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম, সচিব মো. ওমর ফারুকসহ বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের জন্য বন্দর নিরলসভাবে কাজ করছে। জীবন ও জীবিকার সঙ্গে সমন্বয় করে বন্দরকে করোনাকালে ২৪ ঘণ্টা ৭ দিন চালু রেখেছিল। তখন বিশ্ব স্থবির ছিল। আমদানি রপ্তানি নির্বিঘ্ন করতে অফডক, শিপিং এজেন্ট, এমএলও, ফিডার সার্ভিস, সড়কপথে কনটেইনার পরিবহনে করোনাকালে আগে থেকে সম্ভাব্য ব্যবস্থা নিয়েছি। আমাদের বন্দরে জাহাজের ওয়েটিং টাইম জিরো। ফরেন কারেন্সি সাশ্রয় হচ্ছে। জাহাজ ভাড়া, ইন্সুরেন্সের প্রিমিয়াম কমে গেছে। আমরা পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে ১৩৫ বছরের রেকর্ড ভেঙেছি, এ বছর ৩২ লাখ ১৪ হাজারের বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছি। কনটেইনার ধারণক্ষমতার সক্ষমতা বাড়িয়েছি। দু-তিন মাসের মধ্যে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল উদ্বোধন করতে পারবো। বে টার্মিনাল হলে বড় জাহাজ দিন-রাত ভিড়তে পারবে। মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দর হবে ডিপ সি পোর্ট। ইউরোপের সাথে সরাসরি কনটেইনার পরিবহন শুরু করেছি আমরা। এতে ভাড়া ও সময় সাশ্রয় হবে।’