নিজস্ব প্রতিবেদক
স্বস্তির জন্য আষাঢ়ের শুরু থেকে বৃষ্টির অপেক্ষায় চাতক দৃষ্টিতে ছিলো নগরবাসী। পুরো আষাঢ় মাসে বৃষ্টি হয়নি বরং তাপমাত্রা ও আদ্রতা ছাড়িয়েছে গ্রীষ্মকেও। শেষমেষ শ্রাবণের প্রথম পক্ষ শেষে বৃষ্টি নেমেছে নগরজুড়ে। এতে গরম থেকে কিছুটা স্বস্তি মিললেও ভোগান্তি বেড়েছে জলজটে। কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও বিশ্বকলোনি ও টাইগার পাসের পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে টাইগারপাসের পাহাড়ধস প্রায় সকলের চোখে আসলেও নজরের আড়ালে চলে যায় বিশ্বকলোনির পাহাড় ধস।
জানা যায়, ভোর রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে প্রথম পাহাড় ধস হয় বিশ্বকলোনির এইচ-ব্লকের একটি পাহাড়ে গতকাল সকাল সাড়ে সাতটার দিকে। ওই স্থানে দ্বিগুণের বেশি বসতি রয়েছে। সবাই দখলসূত্রে জায়গা নিয়ে পাহাড়ের নিচে, মাঝে ও উপরে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি গড়েছে। নিজবাড়িতে খুব কম লোকজন থাকেন, অধিকাংশ থাকেন ভাড়ায়। স্বল্পভাড়ায় থাকার জন্যই এমন ঝুঁকিপূর্ণ বসতি তাদের। এলাকাটি একটু নিভৃতে বলেই প্রশাসনের দৃষ্টির আড়াল বলে জানান স্থানীয়রা।
অন্যদিকে নগরীর প্রসিদ্ধ এলাকা টাইগার পাসেও গতকাল সকাল পৌনে ৯টায় ছোট আরেকটি পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। চলন্ত একটি মাইক্রোবাস ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় পাহাড়ের একটি অংশ ধসে পড়ে। এতে বন্ধ হয়ে পড়ে সড়কটির যান চলাচল। আনুমানিক একঘণ্টায় সড়ক থেকে মাটি সরানোর কাজ শেষ করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস। পরবর্তীতে যান চলাচল পুনরায় স্বাভাবিক হয়।
মুরসালিন রহমান নামের এক পথচারী বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধস হয়েছে। এমনিতেই পাহাড়গুলো ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিদিন সকালেই এই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাই। আজকের (শুক্রবার) ঘটনায় এখনতো ভয় নিয়েই এই পথ দিয়ে চলাচল করতে হবে। এছাড়া সড়কটি সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। সাইকেল ও মোটরসাইকেলও ফুটপাতে ওঠে যায়। এ বিষয়গুলো আন্তরিকভাবে না দেখলে মানুষের সমস্যা আরও বাড়বে।’
পাহাড় ধস নিয়ে জানতে চেয়ে পরিবেশ অধিদফতরের চট্টগ্রাম মহানগরীর পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাসকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। অন্যদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) বলেন, ‘বিশ্বকলোনি পাহাড়ের উপর থেকে একটি মাটি পড়ে গেছে। মূলত ওখানে মানে পাহাড়টির চূড়ায় একটি গাছ থাকায় সে গাছটি পড়ে যায়। ওখানে মাটি ও গাছ সরিয়ে জান-মালের নিরাপত্তায় কাজ করা হয়েছে। আমাদের একটি টিম খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান।’
পাহাড় ধস ও জলজট নিয়ে কথা বললে নদী গবেষক ও পরিবেশবিদ ড. ইদ্রিস আলী বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি, চট্টগ্রামের প্রাণ-প্রকৃতিকে রক্ষার করার জন্য আন্তরিক উদ্যোগ নিতে হতে হবে। চট্টগ্রাম শহরে থাকা প্রায় পাহাড়গুলো অবৈধ দখলদারদের হাতে। এ অবৈধ দখলগুলো থেকে পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ করলে তারা এক পাহাড় ছেড়ে অন্য পাহাড়ে আশ্রয় নিবে। তাই পাহাড়গুলো কাঁটাতার বা সীমানা প্রাচীর দিয়ে রক্ষা করে এরপর যেসব পাহাড় অবৈধ দখলে আছে সেগুলো নিয়ে ভাবা প্রয়োজন। আর এখন যেহেতু বৃষ্টি শুরু হয়েছে, জানমাল রক্ষায় ঝুঁকিপূর্ণ বসতি থেকে লোকজনদের সরিয়ে আনা দরকার। আর নগরীর ভেতরে ছড়িয়ে থাকা খালগুলোর পানি প্রবাহ ঠিক করলে জলাবদ্ধতার সমস্যা থাকতো না।
প্রসঙ্গত, গত বছরের বর্ষায়ও টাইগারপাস এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায়ও কোনো প্রাণহানি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে গতকাল (শুক্রবার) বিশ্বকলোনির যে পাহাড়টির কিছু অংশ গাছসহ ধসে পড়েছে তার পাশের একটি পাহাড় ২০১২ সালের ২৬ জুন ধসে পড়ে। ওই ঘটনায় ৮ জনের মৃত্যুও হয়। এরপর দুর্ঘটনায় স্বজন হারানোরা ঘটনাস্থল থেকে বাসা ছেড়ে চলে গেলেও সেখানে নতুন বসতি গড়েছে অন্য পরিবার।