নিজস্ব প্রতিবেদক »
সময়টা সোমবার সকাল সাড়ে ৭টা। স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের অর্থনীতি পরীক্ষা দিতে ঘর থেকে বের হয় নিপা পালিত (২৩)। প্রায় ১ কিলোমিটার পথ হেঁটে মূল সড়কের কাছাকাছি যেতেই ঘটে অঘটন। হাটহাজারীর বাদামতল রেজিস্ট্রার বাড়ির সামনের ড্রেনে পড়ে যান নিপা। বৃষ্টিতে সড়ক-নালার পানি একাকার হয়ে যায়। কোমর সমান পানিতে স্রোত ছিল, ফলে পা দিতেই পড়ে যান নিপা, তাতেই মৃত্যু হয় ওই শিক্ষার্থীর।
ড্রেনের পানি প্রবাহে ডুবে যাওয়ার সময় সড়কে কেউ না থাকায় কারও চোখে পড়েনি এ দুর্ঘটনা। তার লাশ ভেসে ওঠার পর চোখে পড়ে স্থানীয়দের।
গতকাল এ শিক্ষার্থীর স্বজন পল্টু পালিত বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম ওর মৃগী রোগ থাকার কারণে তার ভেতরে হয়তো প্রাণ আছে। তাই দেরি না করে আমরা হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে ডাক্তার বেশ কিছু পরীক্ষা করান। ইসিজি করানোর পর ডাক্তার জানান, আরো প্রায় আধঘণ্টা আগে তার মৃত্যু ঘটেছে। পরীক্ষা না থাকলে তো ও এই অবস্থার মধ্যে বের হতো না।’
জানা যায়, নিপা হাটহাজারী কলেজের বিএ (পাস) কোর্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। তার বাবা উত্তম পালিত এবং মা ঝিনুক পালিত। তিনি পরিবারের বড় সন্তান।
মৃত শিক্ষার্থী নিপার পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল সাড়ে ৭ টা নাগাদ সম্মান শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষার জন্য বৈরি আবহাওয়ার মধ্যেও তিনি ঘর ছেড়ে বের হন। শারীরিক ভাবে অসুস্থ থাকায় তার পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে যেতে চাইলে তিনি একা যেতে পারবেন বলে জানান। বাড়ি থেকে কিছুদূর এগোলে টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলজটের কবলে পড়েন। এসময় কোমর সমান পানির কারণে রাস্তার পাশে থাকা ড্রেনটির অবস্থান তিনি বুঝতে পারেননি। ফলে হঠাৎ পা ফসকে তিনি ড্রেনে পড়ে যান। পানির ¯্রােত বেশি থাকায় বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর লোকজন ভেসে থাকতে দেখে তাকে ড্রেনের ভেতর থেকে উদ্ধার করেন। পূর্ব থেকেই মৃগী রোগ থাকার কারণে পাড়ার লোকেরা তাকে অচেতন বলে ধরে নেন এবং তড়িঘড়ি করে পার্শ্ববতী হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎিসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মাহফুজুর রহমান খান বলেন, ‘পানিতে ডুবে ঐ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। পানিতে ডুবলে সাধারণত ফুসফুসে পানি ঢুকে, শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। পানিতে ডুবে এভাবে বেশ কিছুক্ষণ শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে মৃত্যু ঘটে। উনার ফ্যামিলি জানিয়েছে তার মৃগী রোগ ছিল। তবে, মৃগী রোগ থাকলেও সাঁতার জানলে তিনি ৫ থেকে ১০ মিনিট সার্ভাইভ করতে পারতেন।’