রিমন সাখাওয়াত »
সত্তরোর্ধ্ব মাজেদা বেগম। করোনা ভাইরাসের টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন গত বছরের মার্চে। এদিকে বুস্টার ডোজ কার্যক্রম শুরু হলেও মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা না আসায় নিতে পারছেন না বুস্টার ডোজ। মেয়ের জামাই শেখ ফজলুল করিম ক্ষুদে বার্তা না আসার কারণ জানতে হাজির হলেন চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে। এসময় তার সাথে কথা হয় সুপ্রভাতের।
তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার পর প্রায় এক বছর হতে চলেছে। কিন্তু আমার শাশুড়ির বুস্টার ডোজের ক্ষুদে বার্তা আসছে না। গত ৬ মার্চ রোববার এ সমস্যার কারণ জানতে এসেছিলাম। কর্তৃপক্ষ আমার অভিযোগটি গ্রহণ করে সাথে সাথে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েছে। কিন্তু এ ক্ষুদে বার্তা আসতে সময় নিলো আরও তিনদিন। অর্থাৎ বুধবার। চাকরিজীবী মানুষ সেদিন সময় মেলাতে না পেরে শনিবার এসে শাশুড়ির বুস্টার ডোজ সম্পন্ন করলাম।’
মাজেদা বেগমের মত এমন অভিযোগ রয়েছে হাজারো মানুষের। বর্তমানে ক্ষুদে বার্তা দেওয়া হচ্ছে টিকাদান কেন্দ্র থেকে। কিন্তু সেই ক্ষুদে বার্তা পৌঁছাতে অনেক বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। ফলে বুস্টার ডোজ নিতে পারছে না টিকা প্রত্যাশীরা। প্রতিটি টিকা কেন্দ্র থেকে হাজারের বেশি ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও কাক্সিক্ষত মানুষ টিকা নিতে আসছে না। এতে ধীর গতিতে চলছে বুস্টার ডোজ টিকাদান কার্যক্রম।
ক্ষুদে বার্তা না পৌঁছানোর কারণ জানতে চাইলে চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের পরিসংখ্যান বিভাগের শওকত আল-আমিন সুপ্রভাতকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন তিন হাজার বুস্টার ডোজ টিকা প্রত্যাশীদের ক্ষুদে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেই ক্ষুদে বার্তা পৌঁছাচ্ছে না টিকা প্রার্থীর মোবাইল ফোনে। এতে এক থেকে দুই মাসও সময় লেগে যাচ্ছে। করোনা প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের টিকা প্রত্যাশীদের ক্ষুদে বার্তা পাঠানোর ক্ষেত্রে এমন সমস্যায় পড়তে হয়নি। কিন্তু বুস্টার ডোজের ক্ষেত্রে এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে।’
জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন জেনারেল হাসপাতালসহ নগরের প্রতিটি কেন্দ্র থেকে ক্ষুদে বার্তা পাঠাতে এমন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
ক্ষুদে বার্তা নিয়ে এ সমস্যার বিষয়ে জানতে কথা হয় আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বির সাথে। তিনি সুপ্রভাতকে বলেন, ‘ক্ষুদে বার্তা ঠিকমত যাচ্ছে না। বিষয়টি আমরাও লক্ষ্য করেছি। প্রচুর ক্ষুদে বার্তা একসাথে দেওয়ার কারণে হয়তো এটি লক হয়ে যাচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ক্ষুদে বার্তা যেতে মাসখানেকও সময় নিচ্ছে। আবার অনেকে ক্ষুদে বার্তা পাচ্ছে দুই তিনদিন পর। এ ক্ষুদে বার্তা মেবাইলে দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু সুরক্ষা অ্যাপসে দেখা যাচ্ছে। কারিগরি ত্রুটির কারণে মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা দেখতে পাচ্ছে না।’
অনেকে ক্ষুদে বার্তা পাওয়ার পর টিকা নিতে আসছে না। মূলত সংক্রমণ কমে যাওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে বুস্টার ডোজ নিতে অনীহা আসতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বুস্টার ডোজ দেওয়ার পরও অনেকে করোনা আক্রান্ত হয়েছে। এ কারণেও বুস্টার ডোজে অনীহা আসতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।
প্রতিদিন তিন হাজার বুস্টার ডোজ প্রত্যাশীদের ক্ষুদে বার্তা দেওয়া হলেও আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের গত এক সপ্তাহের বুস্টার ডোজ কার্যক্রমের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত শনিবার (৫ মার্চ) বুস্টার ডোজ নিয়েছেন ৪১২ জন। এরপর রোববার ২৬২ জন। সোমবার ৪১৪ জন, মঙ্গলবার ২৮৮ জন, বুধবার ৩৭৮ জন, বৃহস্পতিবার ৩৩০ জন ও শনিবার ৭৭৮ জন।
নগরে টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে বর্তমানে এস্ট্রোজেনেকা, মডার্না ও ফাইজার বুস্টার ডোজ প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্তের পর গণটিকার মত বুস্টার ডোজের ক্যাম্পেইন হতে পারে। এ বিষয়ে সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘গণটিকা কার্যক্রম শেষে করোনা ভাইরাসের বুস্টার ডোজ কার্যক্রমের ক্যাম্পেইন চলবে। এতে গণটিকার মতই দেওয়া হতে পারে বুস্টার ডোজ। অতি শীগ্রই এ বিষয়ে কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলেও জানান তিনি।’
এ বিষয়ে একই বক্তব্য জানান বিভাগীয় সহকারী পরিচালক (স্বাস্থ্য) সাখাওয়াত উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘বুস্টার ডোজের একটি ক্যাম্পেইন সামনে আসতে পারে। এতে গণটিকার মতই দেওয়া হবে বুস্টার ডোজ।’
আলাপকালে তিনি ক্ষুদে বার্তা সমস্যার বিষয়ে বলেন, ‘ক্ষুদে বার্তা নিয়ে ঝামেলা হওয়ার কারণে ক্ষুদে বার্তা ছাড়াই দেওয়া হবে বুস্টার ডোজ।’
অন্য এক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ছয়মাস পর বুস্টার ডোজ নেওয়ার একটি বিষয় থাকলেও তা এখন আর নেই। দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার চারমাস পরেই নেওয়া যাবে বুস্টার ডোজ। তাছাড়া, গণটিকার প্রথম, দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ সব একযোগে চলমান থাকবে। এরফলে কাভারেজটা বেড়ে যাবে।’