বুদ্ধিজীবী দিবসে স্মরণ করি জাতির বরেণ্য সন্তানদের

১৪ ডিসেম্বর শুধু বাঙালির নয়, বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসেরও কলংকজনক অধ্যায়। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চের মধ্যরাতে পাকিস্তানি সেনারা আধুনিক অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এদেশে পরিকল্পিত গণহত্যা শুরু করে। সাধারণ বাঙালিদের হত্যার পাশাপাশি তারা বেছে বেছে হত্যা করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান সাংবাদিক, চিকিৎসক, শিক্ষক, নাট্যকার, সংস্কৃতিকর্মী তথা বুদ্ধিজীবীদের। তবে বুদ্ধিজীবীদের সবচেয়ে বেশি হত্যা করা হয় ১৯৭১ এর ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে, যখন পাকিস্তানি সেনা শাসকরা বুঝতে পারে তাদের দিন শেষ হয়ে আসছে, পরাজয় তাদের সুনিশ্চিত।
১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালিত হলেও দেশের সকল বুদ্ধিজীবীদের এই দিনেই হত্যা করা হয়েছে তেমন নয়। শুরুতেই পাকিস্তানিদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন দেশের বরেণ্য সন্তানরা। এই হত্যাযজ্ঞ চলেছে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
নয় মাসব্যাপী মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত সকল বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়ে থাকে। বেছে বেছে দেশের বরেণ্য সন্তান তথা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার মতো ঘটনা বিশ্বের কোথাও সংঘটিত হয়নি। কোনো যুদ্ধে এত কম সময়ে এত লোককে হত্যা, এত নারী ধর্ষণ এবং এত বুদ্ধিজীবী হত্যা করার ঘটনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া আর কোথাও ঘটেনি। বাঙালির আত্মশ্লাঘার বিষয় যে, এই জাতির স্বাধীনতা দিবস ছাড়াও একটি বিজয় দিবস আছে। বাঙালির কষ্ট ও দুঃখের বিষয় যে, তাদের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আছে।
বুদ্ধিজীবীদের কেন হত্যা করা হয়েছিল তা বলতে গেলে শান্ত, নির্বিরোধী, ঘরকুনো বাঙালিকে কেন যুদ্ধে যেতে হলো, মুক্তিযুদ্ধ কেন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল তার পূর্বাপর বিশ্লেষণ করতে হবে।
১৯৪৭ এর দেশ ভাগে বাঙালির প্রকৃত কোনো অর্জন হয়নি। বরং এক ঔপনিবেশিক শাসক থেকে আরেক নব্য ঔপনিবেশিক শাসকের কবলে পড়েছিল তৎকালীন পূর্ব বাংলা পরে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ। ফলে প্রকৃত স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা এ দেশের মানুষের অন্তরে রয়েই গেল। এই আকাক্সক্ষার প্রথম অঙ্কুরোদগমন ঘটে বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। সেদিনের সে ভাষা আন্দোলন, যা ছিল মূলত সাংস্কৃতিক আন্দোলন, তা-ই বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম ধাপ আর একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে তার চূড়ান্ত পরিণতি।
জাতির বরেণ্য সন্তানদের পবিত্র রক্তস্নাত বাংলাদেশ। আমরা অশেষ ঋণী তাঁদের কাছে। তাই প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর আমরা শ্রদ্ধার অর্ঘ্য নিবেদন করি তাঁদের স্মৃতির প্রতি এবং শপথে পুনর্বার শানিত হই এই স্বাধীনতাকে অর্থবহ করব বলে।