সুপ্রভাতের অনুসন্ধান
ভূঁইয়া নজরুল »
২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় দুই দফায় ফলাফল প্রকাশের কথা মনে আছে কারো? সেবার গণিত নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্নপত্রের ‘গ’ ও ‘ঘ’ সেটে বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের ক্রম ভিন্ন ছিল। আর এতে উত্তরপত্র মূল্যায়নে ওএমআর (অপটিকেল মেশিন রিডার) মেশিন ভুল তথ্য দিয়েছে এবং ফলাফলে ব্যাপক ভুল হয়। তখন সুপ্রভাত বাংলাদেশ এই ভুলের তথ্য প্রকাশ করে এবং শিক্ষাবোর্ড পরিবর্তিত ফলাফল প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছিল। গত রোববার প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলেও এমন ভুল পাওয়া গেছে।
কি ভুল ছিল?
এইচএসসি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলের দিন বিষয়ভিত্তিক পাশের হারের তথ্যে ভুল ছিল। ফলাফল প্রকাশের দিন মিডিয়াকে সরবরাহ করা তথ্যাদির মধ্যে বিষয়ভিত্তিক পাশের হারের একটি শিট ছিল। সেই শিটে মানবিক বিভাগের অর্থনীতি প্রথম পত্রে পাশের হার দেখানো হয় ৬৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ, দ্বিতীয় পত্রে ৭২ দশমিক ২৩ শতাংশ, সমাজবিজ্ঞান প্রথম পত্রে ৫১ দশমিক ৯২ শতাংশ ও দ্বিতীয় পত্রে ৭০ দশমিক ১১ শতাংশ। এছাড়া যুক্তিবিদ্যা প্রথম পত্রে ৫৫ দশমিক ৪১ শতাংশ, দ্বিতীয় পত্রে ৬৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ দেখানো হয়। কিন্তু মানবিক বিভাগে গড় পাশের হার ৮৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। যেহেতু এবার কোনো অতিরিক্ত বিষয় নেই, পৃথকভাবে কোনো বিষয়ে ফেল করলে পাশের হার কমে যাওয়ার কথা। সেহিসেবে বিষয়ভিত্তিক পাশের হার ও বিভাগওয়ারি গড় পাশের হারের পার্থক্য এতো বেশি হতে পারে না।
এই চিত্র শুধু মানবিক বিভাগে নয়, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের বিষয়গুলোতে রয়েছে। প্রকাশিত ফলাফলে পদার্থ বিজ্ঞান প্রথম পত্রে পাশের হার দেখানো হয়েছে ৭৩ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, পদার্থ বিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্রে ৮৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। রসায়ন বিজ্ঞান প্রথম পত্রে ৭২ দশমিক ৮৫ শতাংশ ও দ্বিতীয় পত্রে ৭৭৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং জীব বিজ্ঞান প্রথম পত্রে ৭৬ দশমিক ৩১ শতাংশ ও দ্বিতীয় পত্রে ৭৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। কিন্তু বিজ্ঞানে গড় পাশের হার ৯২ দশমিক ২০ শতাংশ। বিষয়ভিত্তিক পাশের হার ও গড় পাশের হারে পার্থক্য অনেক।
অপরদিকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের প্রধান দুই বিষয়ের মধ্যে হিসাব বিজ্ঞান প্রথম পত্রে ৭৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ ও দ্বিতীয় পত্রে ৭৬ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং ফিন্যান্স ব্যাংকিং ও বীমা বিষয়ের প্রথম পত্রে ৬৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ ও দ্বিতীয় পত্রে ৮৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। এই বিভাগে গড় পাশের হার ৮৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ। যা বিষয়ভিত্তিক পাশের হারের চেয়ে অনেক বেশি। আর এতেই অসামঞ্জস্যতা চোখে পড়ে এই প্রতিবেদকের।
সঠিক কি?
প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করতে গিয়ে গত রোববার তা এই প্রতিবেদকের চোখে পড়ে। এনিয়ে গতকাল সোমবার ফলাফল বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে ‘পরীক্ষা ছাড়াই পাশের হারে ইংরেজির প্রভাব’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানেও ফলাফলের এই অসামঞ্জস্যতার বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। এই অসামঞ্জস্যতা নিশ্চিত করতে গতকাল শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে প্রতিবেদক যান। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কম্পিউটার শাখায় বিষয়ভিত্তিক অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও পাশের সংখ্যা শনাক্ত করে পাশের হার নির্ণয় করার নির্দেশনা দেন পুনরায়। আর তা করতে গিয়ে সুপ্রভাতের এই প্রতিবেদকের ধারণা সঠিক প্রমাণিত হয়। অর্থাৎ ফলাফল প্রকাশের দিন শিক্ষাবোর্ড থেকে বিষয়ভিত্তিক পাশের হারের যে তথ্য সরবরাহ করেছিল তা সঠিক নয়। এই প্রতিবেদকের উপস্থিতিতে বিষয়ভিত্তিক সঠিক পাশের হার আবারো নির্ধারণ করা হয়।
পরিবর্তিত তালিকায় উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোর পৃথক পৃথক পাশের হারে দেখা যায়, অর্থনীতি প্রথম পত্রে ৮৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ, দ্বিতীয় পত্রে ৯৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ, সমাজবিজ্ঞানে ৮১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, সমাজবিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্রে ৯০ দশমিক ৬৫ শতাংশ, যুক্তিবিদ্যা প্রথম পত্রে ৯১ দশমিক ৪৮ শতাংশ, যুক্তিবিদ্যা দ্বিতীয় পত্রে ৯৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ, পদার্থ প্রথম পত্রে ৯১ দশমিক ৯৪ শতাংশ, পদার্থ দ্বিতীয় পত্রে ৯৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ, রসায়ন প্রথম পত্রে ৯৩ দশমিক ৫০ শতাংশ, রসায়ন দ্বিতীয় পত্রে ৯৩ দশমিক ৬০ শতাংশ, জীব বিজ্ঞান প্রথম পত্রে ৯৩ দশমিক ৭০ শতাংশ, জীব বিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্রে ৯৩ দশমিক ৭০ শতাংশ, হিসাব বিজ্ঞান প্রথম পত্রে ৯৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ, হিসাব বিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্রে ৮৯ দশমিক ৭১ শতাংশ, ফিন্যান্স ব্যাংকিং ও বিমা প্রথম পত্রে ৮৯ দশমিক ১১ শতাংশ ও ফিন্যান্স ব্যাংকিং ও বিমা দ্বিতীয় পত্রে ৯৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
এতে ফলাফলের কোনো তারতম্য হবে না
বিষয়ভিত্তিক পাশের হারের এই পরিবর্তনে বোর্ডের সামগ্রিক ফলাফলে কোনো পরিবর্তন হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, ‘আমাদের সামগ্রিক পাশের হার নির্ভুল। একইভাবে প্রতি শিক্ষার্থীর পাশের হারও সঠিক রয়েছে। শুধুমাত্র বিষয়ভিত্তিক পাশের হার তৈরিতে ভুল হয়েছিল। এখন তা সংশোধন করে নিয়েছি। এই তথ্য শুধুমাত্র বোর্ডের ফলাফল বিশ্লেষণে কাজে লাগে। কোন বিষয়ে খারাপ করেছে বা ভালো করেছে জানার জন্য।’
তিনি আরো বলেন, বিষয়ভিত্তিক পাশের হারে শিক্ষার্থী কিংবা বোর্ডের সামগ্রিক ফলাফলের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
উল্লেখ্য, গত রোববার ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত ফলাফলে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে ৮৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাশ করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৩ হাজার ৭২০ জন। বোর্ডের ইতিহাসে যা সবচেয়ে বেশি। করোনার কারণে ২০২১ সালের পরীক্ষা যথাসময়ে নেয়া যায়নি। তাই সিলেবাস কমিয়ে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা নেয়া হয়েছিল শুধুমাত্র তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে। এই পদ্ধতিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকে তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছে। সেই পরীক্ষা নেয়া হয় গত ২ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে।