সুপ্রভাত ডেস্ক »
কোনও সংগীতশিল্পীকে ঘিরে এমন উন্মাদনা বাংলাদেশে আর দেখা যায়নি। তার গান, লাইফস্টাইল, ফটোগ্রাফি, কনসার্ট এবং জন্মদিন- সবকিছুতেই বাড়তি উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। সীমানা পেরিয়ে তার প্রতিধ্বনি মেলে প্রবাসেও।
আর উপলক্ষ যদি হয় জন্মদিন, তবে তো সেটি বাঁধভাঙা। দিনটিকে ঘিরে বরাবরই জেমস ভক্তরা আয়োজনের কমতি রাখে না। শনিবার (২ অক্টোবর) ৫৭ বছর পূর্ণ করে ৫৮ বসন্তে পা রাখলেন কিংবদন্তি ব্যান্ড তারকা ফারুক মাহফুজ আনাম জেমস। দিনটিকে উদযাপন করতে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ভক্তরা। জেমস ভক্তদের ফেসবুক গ্রুপ ‘দুষ্টু ছেলের দল’ থেকে পাওয়া যাচ্ছে তার প্রতিধ্বনি। মিলাদ, কেক কাটা, ছিন্নমূলদের খাওয়ানো, গানের আয়োজন, রক্তদান কর্মসূচিসহ- হরেক রকমের আয়োজন।
জেমস মুখপাত্র রুবাইয়াৎ ঠাকুর রবিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মহামারির স্থবিরতা কাটিয়ে পৃথিবী এখন স্বাভাবিকের পথে হাঁটছে। তারই প্রতিধ্বনি মিলছে জেমস ভাইয়ের জন্মদিনকে ঘিরে। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন জেলার ভক্তরা দিনটি উদযাপনে নানা আয়োজন করে থাকে। তবে এবারের আয়োজন আরও বিস্তৃত মনে হচ্ছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা তো বটেই, বিদেশ থেকেও ভক্তদের নানা আয়োজনের খবর পাচ্ছি আমরা। এটা নিশ্চয়ই আমাদের জন্য আনন্দের খবর।’
এদিকে জেমসের ভক্ত-গ্রুপ ‘দুষ্টু ছেলের দল’ পেজের দেয়াল থেকে জানা গেছে, ২ অক্টোবর দিনব্যাপী চলবে জন্মদিনের নানা আয়োজন। এরমধ্যে ঢাকা, খুলনা, যশোর, নরসিংদী, রংপুর, মেহেরপুর, কুড়িগ্রাম, ভোলা, পটুয়াখালী, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় জেমসের দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনায় মসজিদ/মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন মিলনমেলায় দোয়ার আয়োজন রেখেছে। কেক কেটে সুবিধাবঞ্চিতদের সাথে নিয়ে রেখেছে গান ও আড্ডার আয়োজন। অনেক এলাকায় পথে পথে টানানো হয়েছে শুভেচ্ছা ব্যানার। কিশোরগঞ্জসহ বেশকিছু জায়গায় সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিনামূল্যে রক্তদানের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
জেমসের জন্মদিনকে ঘিরে আয়োজন রয়েছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, দুবাইতেও।
এদিকে এবারের জন্মদিনকে ঘিরে বাংলা ট্রিবিউনের মাধ্যমে ভক্ত তথা তার প্রিয় দুষ্টু ছেলেদের জন্য একটি বার্তা পাঠালেন জেমস। বললেন এভাবে, ‘যতোদিন তোমরা আছো, ততোদিন আমি আছি।’
তবে এদিনও তিনি নতুন কোনও গানের খবর দেননি ভক্তদের জন্য। যারা দীর্ঘ সময় তৃষিত হয়ে আছেন ‘গুরু’র নতুন গানের জন্য। এটুকু জানালেন, হোম স্টুডিওতে প্র্যাকটিস চলছে, গানও সৃষ্টি হচ্ছে। তবে সেটি প্রকাশের জন্য অস্থিরতা নেই তার। বরং পুরনো অনেক লেনদেন বুঝে নিতে চাইছেন নতুন করে। তাই তো সম্প্রতি আদালত চত্বরেও অভিযোগ নিয়ে হাজির হতে দেখা গেছে এই নগর বাউলকে। অভিযোগ, একটি টেলিকম প্রতিষ্ঠান তার অনুমতি ছাড়াই গান বিকিকিনি করছে।
এদিকে আজ (২ অক্টোবর) জন্মদিনকে ঘিরে বাড়তি কোনও আয়োজন থাকছে না জেমসের ঘরে। পারিবারিকভাবে বড় জোর একটা কেক কাটা হবে। তবে অংশ নেবেন না কোনও জন্মদিনের আয়োজনে, রাখেননি কোনও শো। সারাদিন থাকবেন বাসায়। জানান জেমস মুখপাত্র রুবাইয়াৎ ঠাকুর রবিন।
নগর বাউল জেমসের জন্ম ১৯৬৪ সালে, নওগাঁয়। তবে তার বেড়ে ওঠা এবং সংগীতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার পুরোটাই ঘটে চট্টগ্রামে।
বাড়ি ছেড়ে চট্টগ্রামের ১২ বাই ১২ স্কয়ার ফিটের বিউটি বোর্ডিং থেকে শুরু করে ঢাকার ঝকঝকে প্রশস্ত ফ্ল্যাট- মাঝে টানা ৪০ বছরের সংগীত ভ্রমণ এই রক তারকার। ১৯৮৬ সালে শুরু করেন ব্যান্ড ফিলিংস-এর ‘স্টেশন রোড’ দিয়ে। এরপর ‘জেল থেকে বলছি’ (১৯৯৩), ‘নগর বাউল’ (১৯৯৬), ‘লেইস ফিতা লেইস’ (১৯৯৮) এবং ২০০০ সালে নগর বাউল ব্যান্ড গঠন করে প্রকাশ করেন ‘দুষ্টু ছেলের দল’ (২০০১) অ্যালবামটি। ব্যান্ডের পাশাপাশি একক, মিশ্র অ্যালবাম ও প্লেব্যাকে উপহার দেন অজস্র জনপ্রিয় গান।
জেমসের একক অ্যালবামের ক্যারিয়ার গ্রাফ এমন—‘অনন্যা’ (১৯৮৮), ‘পালাবে কোথায়’ (১৯৯৫), ‘দুঃখিনী দুঃখ করোনা’ (১৯৯৭), ‘ঠিক আছে বন্ধু’ (১৯৯৯), ‘আমি তোমাদেরই লোক’ (২০০৩), ‘জনতা এক্সপ্রেস’ (২০০৫), ‘তুফান’ (২০০৬) এবং ‘কাল যমুনা’ (২০০৮)।
এরপর থেকে প্লেব্যাকের বাইরে ব্যান্ড বা একক কোনও গানে পাওয়া যায়নি জেমসকে। এরমধ্যে প্লেব্যাকের জন্য পেয়েছেন দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও। শুধু দেশীয় প্লেব্যাক নয়, বলিউডেও রাজত্ব করেছেন এই রকার। তার গাওয়া ‘ভিগি ভিগি’ (২০০৫, গ্যাংস্টার), ‘চাল চালে’ (২০০৬, ও লামহে), ‘আলবিদা’ (রিপ্রাইস), ‘রিশতে’ (২০০৭, লাইফ ইন আ মেট্রো) এবং ‘বেবাসি’ (২০১৩, ওয়ার্নিং থ্রিডি) গানগুলো এখনও বিশ্বের বিভিন্ন মঞ্চ ও টিভি রিয়েলিটি শোতে উঠে আসছে নানাভাবে।
গানের বাইরেও গেল ক’বছর জেমস মন বসিয়েছেন ছবি তোলায়। তার ফটোগ্রাফির বিষয়, মডেল, নাগরিক জীবন ও প্রকৃতি। যে ছবিগুলোর মাধ্যমে নেটিজেনদের গানের তৃষ্ণা অনেকটাই মেটান ছবিয়াল জেমস।
ব্যক্তিজীবনে জেমস তিন সন্তানের জনক। স্ত্রী বেনজির সাজ্জাদকে নিয়ে ভালোই আছেন তিনি।