পাঠানটুলিতে নির্বাচনী সংঘর্ষে একজন নিহত
নিজস্ব প্রতিবেদক :
পাঠানটুলিতে নির্বাচনী সহিংসতায় মারা যাওয়ার ঘটনায় বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল কাদেরসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একইসাথে তাদের প্রত্যেককে তিনদিনের রিমান্ডও মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে নগরীর পাঠানটুলি এলাকায় আওয়ামী লীগের দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহতের ঘটনায় ১১ জনের বিরুদ্ধে ডবলমুরিং থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। নিহত আজগর আলী বাবুলের (৫৫) ছেলে সিজান মোহাম্মদ সেতু বাদি হয়ে এ মামলা করেন।
সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ দুই জনের মধ্যে একজন মারা গিয়েছেন। এদিকে মামলাটি তদন্ত করছেন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
এ বিষয়ে নগর পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (ডিবি পশ্চিম) মো. মনজুর মোরশেদ বলেন, মঙ্গলবার রাতের সংঘর্ষের পর রাতভর অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীসহ অনেককে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের ১১ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে বুধবার আদালতে হাজির করা হয়। একইসাথে তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনদিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত তা মঞ্জুর করেছেন। রিমান্ড শেষে প্রকৃত ঘটনা বুঝা যাবে।
এদিকে সংঘর্ষ এলাকায় কোনো ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি ভবনে একটি ক্যামেরা ছিল। তবে তা ভাঙ্গা পাওয়া যায়। সংঘর্ষের আগে তা ভাঙ্গা হয়েছে না সংঘর্ষ চলাকালীন ভেঙ্গেছে তাও তদন্ত করছি।
জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে নগরীর ২৮ নম্বর পাঠানটুলি ওয়ার্ডের মগ পুকুর পাড় এলাকায় আওয়ামী লীগের দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর ও বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল কাদের ওরফে মাছ কাদেরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আজগর আলী বাবুল নামের এক ব্যক্তি মারা যান। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ মাহবুব নামের একজন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। সংঘর্ষের পর নজরুল ইসলাম বাহাদুরের ক্ষুব্ধ সমর্থকরা আবদুল কাদের ও তার সহযোগীদের ধাওয়া দিলে তারা আজিম ম্যানশন নামের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। মধ্যরাতে পুলিশ এসে আবদুল কাদেরসহ ২৬ জনকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। পরে যাচাই বাছাই করে ১১ জনকে রেখে বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়। বুধবার তাদের আদালতে হাজির করা হয়। এই ১১ জনের মধ্যে ৬ জন এজাহারভুক্ত এবং ৫ জন সন্দেহভাজন। মামলায় ৩০-৪০ জন অজ্ঞাতনামাকেও আসামি করা হয়েছে।
আবদুল কাদের ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন এম কে কবির হেলাল উদ্দিন ওরফে কমার্স কলেজ হেলাল (৪০), ওবায়দুল কবির মিন্টু (৪০), আসাদুজ্জামান নূর রায়হান (২৯), ইমরান হোসেন ডলার (২৪), দিদার উল্লাহ দিদু (৪৮), মিনহাজ হোসেন ফরহাদ (২০), শহীদুল আলম সাহেদ (৩৭), জাহিদুল আলম জাহিদ (২৫), শহিদুল ইসলাম (৩৩) ও আবদুর রহমান (৪৪)।
এদিকে আজগর আলী বাবুলের মৃত্যুর জন্য এক পক্ষ অন্যপক্ষকে দায়ী করেছেন।
সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, আমি নির্বাচনী গণসংযোগ চালাচ্ছিলাম। এসময় বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল কাদের তার সমর্থকদের নিয়ে হামলা চালায় এবং গুলি করে। এতে আমার একজন কর্মী মারা যায় এবং অপরজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এদিকে আবদুল কাদের নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। আর নজরুল ইসলাম বাহাদুর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। ২০১৫ সালের নির্বাচনে নজরুল ইসলাম বাহাদুরকে পরাজিত করে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন আবদুল কাদের। এর আগে ২০০৫ ও ২০১০ সালে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন নজরুল ইসলাম বাহাদুর। এবারের চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনেও নজরুল ইসলাম বাহাদুর এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। আর দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হন আবদুল কাদের।