সুপ্রভাত ডেস্ক »
একসময় মন্দির, বাসগৃহ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই সীমাবদ্ধ ছিল সরস্বতী পূজা। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিমা স্থাপন করে পূজায় অংশ নিতেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা। সেই ধারাবাহিকতায় এখনও পূজা হচ্ছে। তবে এখন পূজার পরিসর বেড়েছে। বৃহস্পতিবার নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় সর্বজনীন ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিদ্যাদেবী মা সরস্বতী পূজা।
পঞ্জিকা মতে, বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হয়ে পঞ্চমী তিথির অবস্থান ছিলো বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত। মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই তিথি শ্রীপঞ্চমী বা বসন্ত পঞ্চমী নামেও পরিচিত। শাস্ত্রীয় নিয়ম অনুযায়ী বুধবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যার পর দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস সম্পন্ন হয়।
নগরীর জেএমসেন হল মাঠ প্রাঙ্গণে ১১টি ম-পে অনুষ্ঠিত হয়েছে সরস্বতী পূজা। ম-পগুলো হলো মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ, মাস্টারদা সূর্যসেন ক্লাব, সর্বজনীন বাণী অর্চনা উদযাপন পরিষদ, জ্ঞানপিপাসু সনাতনী সংঘ, চট্টগ্রাম আইনজীবী বিজয়া সম্মিলন পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্র-যুব ঐক্য পরিষদ, বাণী অর্চনা পরিষদ, সনাতন পরিষদ, ওমরগনি এমইএস কলেজ, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ ও চট্টগ্রাম সনাতনী কর আইনজীবী কল্যাণ পরিষদ।
মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল বলেন, জেএমসেন হল মাঠে মোট ১১টি ম-পে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। সকালে পূজা শেষে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হয়। সাড়ে ১০টায় শুরু হয় পিঠা উৎসব। দুপুরে প্রসাদ বিতরণের পর সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
জীবিকার তাগিদে মানুষ ছুটছে প্রতিনিয়ত। এই যান্ত্রিক জীবনে মনে হয়, আবার যদি ফিরে যাওয়া যেতো সেই ছোটবেলায়। বাস্তবতায় না হলেও কল্পনার এ রাজ্যে ঘুরে আসতে চাইলে যেতে হবে নগরীর দক্ষিণ কাট্টলি দেবেন্দ্র মাস্টারের বাড়ি। সেখানে ৯০ এর দশকের বিভিন্ন স্মৃতি ও সংস্কৃতির আদলে নির্মিত ম-পে অনুষ্ঠিত হয়েছে সরস্বতী পূজা।
দেবেন্দ্র মাস্টার পাড়া বাণী অর্চনা পরিষদের কর্মকর্তারা জানান, ‘টিম প্রাক্তন এর ভাবনা ও সৃজনে আমরা ফিরে গিয়েছি ৯০ দশকের কোনও এক মহল্লায়। যেখানে দেখা মিলেছে আমার-আপনার স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোর। এই ছোট্ট প্রয়াসের নাম দিয়েছি ‘হারিয়ে খুঁজি ছেলেবেলা’। প্রতিমা নির্মাণ করেছেন শৈবাল পাল।
নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার সনাতন কেন্দ্রীয় মন্দিরে এবার সরস্বতী পূজা করেছেন নারী পুরোহিত বর্ণালী ভট্টাচার্য্য। সঙ্গে ছিলেন একজন পুরুষ তন্ত্রধারক। আয়োজকরা জানান, দেবী সরস্বতীর পূজা প্রাচীন যুগ থেকেই বাঙালির হৃদয় ও অন্তরে সমাদৃত হয়ে আসছে। তিনি শুক্লবর্ণ, শুভ্র হংসবাহনা, বীণা রঞ্জিত পুস্তক হস্তে অর্থাৎ একহাতে বীণা ও অন্য হাতে পুস্তক।
শুক্লবর্ণ মানে সাদা, যা স্বচ্ছতা ও নির্মলতার প্রতীক। পবিত্রতার মূর্তি আর জ্ঞানদান করেন বলে তিনি জ্ঞানদায়িনী। তাঁর বাহন রাজহংস। কারণ হাঁস অসারকে ফেলে সার গ্রহণ করে। দুধ ও জলের মিশ্রণ থেকে জল ফেলে শুধু দুধটুকু গ্রহণ করে কিংবা কাদায় মিশ্রিত স্থান থেকে তার খাদ্য খুঁজে নিতে পারে। মায়ের সঙ্গে পূজিত হয়ে শিক্ষা দিচ্ছে, সবাই যেন অসার/ভেজাল/ অকল্যাণকরকে পরিহার করে নিত্য পরমাত্মাকে গ্রহণ করে এবং পারমার্থিক জ্ঞান অর্জন করতে পারে।
বীণার জীবন ছন্দময়। বীণার ঝংকারে উঠে আসে ধ্বনি বা নাদ। বিদ্যার দেবী সরস্বতীর ভক্তরা সাধনার দ্বারা সিদ্ধিলাভ করলে বীণার ধ্বনি শুনতে পায়। বীণার সুর অত্যন্ত মধুর। তাই বিদ্যার্থীদেরও মুখ নিঃসৃত বাক্যও যেন মধুর ও সঙ্গীতময় হয়। সেই কারণেই মায়ের হাতে বীণা। তাই দেবী সরস্বতীর আরেক নাম ‘বীণাপাণি’। বিদ্যার্থীদের লক্ষ্য জ্ঞান অন্বেষণ। আর জ্ঞান ও বিদ্যার অন্বেষণের জন্য জ্ঞানের ভা-ার ‘বেদ’ তাঁর হাতে রয়েছে। সেই বেদই বিদ্যা।