সুপ্রভাত ডেস্ক »
নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেবার আর মাত্র সাত দিন বাকি। বিরোধী দল বিএনপির কাছ থেকে নির্বাচনে অংশ নেবার আভাস এখনো মিলছে না। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাবার কোন সম্ভাবনা নেই। এ নিয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে নানা চিন্তাভাবনা ও বিশ্লেষণ চলছে।
এরই মধ্যে গত সোমবার এক নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে আসতে চাইলে নির্বাচনের তফসিল পরিবর্তন করার বিষয়টি ভেবে দেখবেন। এর একদিন পরেই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে নির্বাচনের তারিখ ঠিক রেখে তফসিল পরিবর্তন করবে তাতে আওয়ামী লীগের আপত্তি নেই। খবর বিবিসি বাংলা।
গত সোমবার নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওনারা যদি আসেন আমরা কমিশনাররা বসবো, আইন-কানুন দেখবো, তারপর যেটা সিদ্ধান্ত হয় সেটা করবো। আমরা তো চাই সব দল এসে একটা সুন্দর ইলেকশন হোক।’
গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘নির্বাচনের বিষয়টা অ্যাবসলিউটলি নির্বাচন কমিশনের বিষয়। সময়সীমা ঠিক রেখে তারা যদি কোন অ্যাডজাস্টমেন্ট করে সেটা নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার। আমাদের কিছু বলার নেই।’
তফসিল নিয়ে নির্বাচন কমিশন এবং ক্ষমতাসীনদের এমন বক্তব্যের কারণে অনেকেই ধারণা করছেন পর্দার আড়ালে বিএনপির সাথে কোন কথাবার্তা চলছে কিনা? মত বদলে শেষ মুহূর্তে বিএনপি নির্বাচনে আসবে কিনা সেটিও নিয়ে নানা অনুমান তৈরি হয়েছে।
এখনো পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে কিংবা তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
বাংলাদেশের ভেতরে বিএনপির সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সাথে যারা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত, তাদের কেউ কেউ এখন কারাগারে। এছাড়া মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা অনেকটাই আত্মগোপনে। দলটির ডাকা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি যখন চলছে, তখন সম্প্রতি যোগ হয়েছে তাদের বিভিন্ন নেতার বাড়ি লক্ষ্য করে ককটেল হামলা।
বিএনপির চিন্তাভাবনা কী?
তফসিল সংক্রান্ত এসব কথাবার্তা খুব একটা আমলে নিচ্ছে না বিএনপি। তাদের ধারণা একটা ‘বিভ্রান্তি তৈরি’ করার জন্যই এসব কথা বলা হচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘মূল কথা হচ্ছে সরকারের কথায় মানুষের আস্থা নেই। তারা আজকে এক কথা বলছে, কালকে আরেক কথা বলছে।’
‘আজকে বিএনপিকে খুশি করার জন্য নির্বাচনী শিডিউল দুই দিন-পাঁচ দিন পিছিয়ে দেবে আর বিএনপি তাদের উল্টো-পাল্টা কথা আস্থায় নিয়ে লাফিয়ে নির্বাচনে যাবে- এটা মনে হয় জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না’, বলেন ড. খান।
ভারতে অবস্থানরত বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদও জোর দিয়ে বলছেন, নির্দলীয় সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। এটা অনেক আগেই ঘোষণা করা হয়েছে। এ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।
‘নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী লীগ দুজনে দুজনার। তারা তফসিল আগাবে না পেছাবে এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। নির্বাচনে যাবার মতো কোন সিদ্ধান্ত আমাদের দলের মধ্যে নাই’, বলেন মি. আহমেদ।
নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে এখন কয়েকটি চিন্তাধারা কাজ কাজ করছে। দেশে এবং বিদেশে অবস্থানরত বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতার সাথে বলা কয়েকটি ধারণা পাওয়া গেল।
নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কোন দিকে যায় সেটি তারা দেখার অপেক্ষায় আছেন। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, ক্ষমতাসীনরা একতরফা নির্বাচন করে ‘পার পাবে না’।
বিএনপির কোন কোন নেতা মনে করছেন, দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার এবং তাদের মুক্তি দিলে নির্বাচনে অংশ নেবার বিষয়ে বিএনপি ইতিবাচক হলেও হতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা বলছিলেন, ‘এটা ঠিক যে নির্বাচনের পরিবেশ নেই। তারপরেও আমরা নির্বাচনে গিয়ে দেখতে পারি, পরিস্থিতি কোন দিকে যায়। প্রয়োজনে মাঠ থেকে সরে আসবো।’
কিন্তু এর বিরুদ্ধ মতও আছে বিএনপিতে। অনেক নেতা মনে করেন, নির্বাচনে যাবার ঘোষণা দিলে জনগণের কাছে বিএনপির বিশ্বাসযোগ্যতার সংকট তৈরি হতে পারে। তাছাড়া একবার নির্বাচনের মাঠে গেলে সেখান থেকে ফিরে আসাও সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি ২০১৮ সালের মতো হতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা।
তাছাড়া নেতা-কর্মীদের মামলা প্রত্যাহার কিংবা জামিনের বিষয়টি সরকারের সাথে আলোচনা বা সমঝোতার বিষয়বস্তু হতে পারে না বলে দলটির অনেক নেতা মনে করেন।
‘আমরা তো জামিনের জন্য আন্দোলন করি নাই। আমরা তো আন্দোলন করছি এদেশের মানুষের ভোটাধিকারের জন্য’, বলছিলেন বিদেশে অবস্থানরত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
‘এ অবস্থাতে নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। প্রশাসন থেকে শুরু করে সবই তাদের কন্ট্রোলে। কেয়ারটেকার সরকার আসুক আমরা নির্বাচনে যাব, তাছাড়া আমরা নির্বাচনে যাব না’, বলেন মি. মাহমুদ।