নিজস্ব প্রতিবেদক :
বার্ধক্যজনিত কারণে বায়তুশ শরফের পীর, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের শরিয়া কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং দেশের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা শাহ কুতুব উদ্দিন বুধবার বিকেল ৪ টায় ঢাকার ধানম-ি আনোয়ার খাঁন মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।
পীরের মৃত্যুর বিষয়টি বুধবার সন্ধ্যায় সুপ্রভাতকে নিশ্চিত করেছেন তারই ভাগ্নে আবু জাহেদ মোহাম্মদ সাদেক। তিনি জানান, পীর সাহেব দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিসে ভুগছিলেন। দাফনের জন্য মরহুমের মরদেহ চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হচ্ছে। কয়েকদিন আগে তাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
এর আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে নগরের মেট্রোপলিটন হাসপাতালের আইসিউতে ভর্তি হন তিনি। অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজধানী ঢাকার ধানম-ির আনোয়ার খান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পীর সাহেব মাওলানা কুতুব উদ্দিনের মরদেহ বুধবার রাতের মধ্যে নগরের দেওয়ানহাটের বাইতুশ শরফ মাদ্রাসায় আনা হবে বলে জানান ভাগ্নে আবু জাহেদ মোহাম্মদ সাদেক। সেখানেই তার জানাজার নামাজ পড়ানো হবে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানাজার নামাজের সময় নির্ধারিত হয়নি।
মাওলানা কুতুব উদ্দীন লোহাগাড়ার আধুনগর ইউনিয়নের সূফী মিয়াজী পাড়া গ্রামের সন্তান। লেখাপড়া করেছেন চুনতী হাকিমিয়া আলিয়া মাদ্রাসা ও চট্টগ্রাম শহরের দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসায়। তিনি ১৯৫৯ সালে স্বর্ণপদকসহ প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করে কামিল পাশ করেন। হাদিস বিশারদ ও কুরআনের তাফসিরকারক মাওলানা কুতুব উদ্দীন আরবি, ফার্সি ও উর্দু ভাষাবিদ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান। কর্মজীবনে তিনি বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে দেশের সেরা অধ্যক্ষের পুরস্কারও অর্জন করেন। তিনি নগরের ডবলমুরিং থানা এলাকার ধনিয়ালা পাড়ায় অবস্থিত বায়তুশ শরফের প্রতিষ্ঠাতা প্রখ্যাত সূফীসাধক মাওলানা মীর মুহাম্মদ আখতার (রহ) এবং বায়তুশ শরফের প্রধান রূপকার শাহ সূফী মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল জব্বার (রহ) এর সান্নিধ্যে অবস্থান করে আধ্যাত্মিক সাধনায় নিমগ্ন হন। ১৯৯৮ সাল থেকে আমৃত্যু তিনি বায়তুশ শরফের পীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর লেখা একাধিক ধর্মীয় গ্রন্থ সমাদৃত হয়েছে।
এর আগে বুধবার দুপুরে নগরের বেসরকারি একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বায়তুশ শরফ দরবারের কেন্দ্রীয় মসজিদের খতীব মাওলানা নুরুল ইসলাম।
তিনি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। একই দিন চট্টগ্রামে দুজন ইসলামী ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে চট্টগ্রামের ধর্মপ্রাণ মুসলিম ও বায়তুশ শরফ দরবারের ভক্তবৃন্দের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
প্রখ্যাত আলেম মাওলানা নুরুল ইসলামের বাড়ি লোহাগাড়া উপজেলার বড় হাতিয়া আখতরাবাদ কুমিরাঘোনা এলাকায়। মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলে ও মেয়ে পাঁচ মেয়ে রেখে যান। মাওলানা নুরুল ইসলাম বায়তুশ শরফ আঞ্জুমানে ইত্তেহাদ বাংলাদেশের সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি বায়তুশ শরফ দরবারের মরহুম পীর শাহসুফী আলস্নামা শাহ আবদুল জব্বারের (রহ) জামাতা। তিনি সাতকানিয়ার চুনতি হাকিমিয়া আলিয়া মাদরাসা থেকে দাখিল, আলিম, ফাজিল এবং চট্টগ্রাম ওয়াজেদিয়া কামিল মাদরাসা থেকে কামিল পাশ করেন। একই সাথে তিনি চট্টগ্রাম তিন পার্বত্য এলাকা বায়তুশ শরফ কমপেস্নক্স সমূহের মহাপরিচালক ছিলেন। রাঙামাটি জেলার লংগদু ও মাইনীমুখ এবং বান্দরবানের পাহাড়ী এলাকায় বায়তুশ শরফ দরবারের প্রতিষ্ঠিত মসজিদ, এতিমখানা ও মাদ্রাসাগুলোর তদারকি করতেন।
বায়তুশ শরফ সংশিস্নষ্টরা জানান, মাওলানা নুরুল ইসলাম আমৃত্যু বায়তুশ শরফ দরবারের অধীনে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন। বায়তুশ শরফের অধীনে থাকা হাজার হাজার এতিমের অভিভাবক ছিলেন মাওলানা নুরুল ইসলাম। তার সুললিত কন্ঠে মিলাদ শরীফ, জিকির, কাসিদায়ে গাউসিয়া শরীফ পরিচালনায় মাওলানা নুরুল ইসলামের খ্যাতি রয়েছে।