গ্রামে মৃত্যু ও শনাক্ত ঊর্ধ্বমুখী
স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণ ভয়াবহ হবে: সিভিল সার্জন
মোহাম্মদ কাইয়ুম »
সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও করোনায় বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। চলতি বছরের মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা নিম্মমুখী হলেও গত ১০ দিনেই সে চিত্র ভিন্ন। চট্টগ্রামে গত ১০ দিনে আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যাও ঊর্ধ্বমুখী। এরই মধ্যে গতকাল ৭ জনের মৃত্যু দেখেছে চট্টগ্রামবাসী। যা গত ৪৯ দিনে সর্বোচ্চ। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে নগরে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি থাকলেও বর্তমানে উপজেলায় মৃত্যু ও সংক্রমণ দুটোই বেড়েছে। উপজেলাগুলোতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় নতুন করে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছে, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। অন্যদিকে সিভিল সার্জন বলছে, উপজেলাগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সীমান্তবর্তী জেলার মতো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, চলতি মাসেই চট্টগ্রামে নগরে ২৫ জন এবং উপজেলায় ৩৮ জনসহ করোনায় মারা গেছেন ৬৩ জন। এর মধ্যে গতকাল রোববার ৭ জনসহ গত ১০ দিনেই মারা গেছে ৩১ জন। তবে করোনায় দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় উপজেলার তুলনায় নগর এগিয়ে থাকলেও বর্তমানে সে চিত্র ভিন্ন। গত ১০ দিনে নগরের ১৩ জনের মৃত্যুর বিপরীতে উপজেলায় মৃত্যু হয়েছে ১৮ জন। পাশাপাশি এ সময়ে নগরে ২ হাজার ৯৭ জনের বিপরীতে উপজেলাগুলোতে আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ২০৪ জন। নগরের তুলনায় উপজেলা পর্যায়ে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরুতে এপ্রিল মাসে চট্টগ্রামের মৃত্যুর সংখ্যা আশংঙ্কাজনকহারে বাড়তে থাকে। পাশাপাশি আক্রান্তের সংখ্যাও ছিল নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এপ্রিলে চট্টগ্রামে মোট ৯ হাজার ৯১৮ জনের আক্রান্তের পাশাপাশি করোনার মারা গেছেন ১৩১ জন। তবে সে সময় করোনার নিয়ন্ত্রণে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও লকডাউনের কারণে মে মাসের শুরু থেকে আক্রান্ত ও মৃত্যু দুটোই কমতে থাকে। লকডাউনের কারণে চট্টগ্রামে মে মাসে এপ্রিলের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৪৩৮ জন। সে সাথে মৃত্যুও কমে দাঁড়ায় ৯৮ জনে। কিন্তু গত ৮ মে দেশে প্রথমবারের মতো করোনার ভারতীয় ধরনের শনাক্তের পরপরই সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও ভারতীয় ধরন ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা বেড়ে যায়। সর্বশেষ গত ১৪ জুন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক চট্টগ্রামেও করোনার ভারতীয় ধরন ছড়িয়ে পড়ার খবর দেয়। এরপর থেকে চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে চট্টগ্রামেও আক্রান্ত ও মৃত্যু দিনদিন বৃদ্ধি পেতে থাকে।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রব মাসুম বলেন, বর্তমানে উপজেলা পর্যায়ে শহরের চেয়ে সংক্রমণ একটু বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকজন করোনা রোগীর মধ্যে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের লক্ষণ দেখতে পেয়েছি। উপজেলা পর্যায়ে সংক্রমণ বৃদ্ধির পেছনে করোনার ভারতীয় ধরন ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। যদি আগের মতো উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মানা না হয় সেখানে করোনা আরো ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়বে। যদি আমরা ঘর থেকে বের হলে হাত ধোয়া ও মাস্ক পরার অভ্যাস না করি তাহলে সংক্রমণ অনেক দ্রুত ছড়াবে। সেজন্য সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই।
এ বিষয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি সুপ্রভাতকে বলেন, সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও সংক্রমণও বাড়ছে, মৃত্যুও বাড়ছে। যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে, সংক্রমণ আরো বাড়বে। উপজেলায় পর্যায়ে সংক্রমণ ও মৃত্যু আগের তুলনায় বেশি জানিয়ে সিভিল সার্জন আরো বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে নগরে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি থাকলেও বর্তমানে উপজেলাগুলোতে দুটোই বেশি। ফটিকছড়িতে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় চলমান লকডাউনে ফটিকছড়িতে সংক্রমণ কমে এসেছে। পাশাপাশি হাটহাজারীতেও সংক্রমণ কমেছে। তবে এখন সংক্রমণ সীতাকুণ্ড ও মিরসরাইয়ের দিকে বেশি। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সীমিত আকারের লকডাউনে যথাযথভাবে মেনে চললে পজিটিভ দিক আসতে পারে। তবে আগের মতো স্বাস্থ্যবিধি না মানলে চট্টগ্রামের অবস্থাও সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর মতো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, মূলত সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্যই লকডাউন দেওয়া হয়েছে। এ লকডাউন কার্যকরের জন্য নগরে জেলা প্রশাসকের ১২টি মোবাইল কোর্ট, বিআরটিএর তিনজন ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি প্রত্যেকটা উপজেলায় তিনটা করে টিম কাজ করবে।