মৃত্যুর আগে বাঁশখালীর মুবিনুলের আকুতি
নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁশখালী »
সীতাকুণ্ডে ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে প্রথম মৃত্যু মবিনুলের লাশ যখন গতকাল রোববার বিকাল ৫টায় গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে তখন শোকার্ত গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। ওই সময় বাড়ির উঠানে হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন শোকার্ত মবিনুলের বাবা ফরিদুল আলম। এক পর্যায়ে তিনি প্রলাপ করে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলতে থাকেন ‘রাত ৯টা বাজে মুবিনুল আঁরে ফোন গোরি কদ্দে বাবা কন্টেইনার ডিপোত আগুন লাইগ্যে, তুঁই আগুনের আওয়াজ উনর না। মোবাইলত্তুন উনঅ। পোয়ার এই হতা উনি তারে কই যে বাবা এডেত্তুন সরি যা গই। আঁর পোয়া সরি গেইল কিনা নঅ জানি। মোবাইলে যোগাযোগ করেও আর নঅ পাই। রাত ১১ টায় ফোন গোরি আঁর পোয়া আবার কইয়েদে- ‘বাবা আঁর ট্যাং এক্কান উড়ি গিয়ই, আঁই বাইচতাম নঅ। এই হতা বলেই মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়’। (কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লেগেছে। তুমি আগুনের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছ। মোবাইল থেকে শুন। ছেলের এই কথা শুনে তাকে বলি বাবা ওখান থেকে সরে যাও। আমার ছেলে ওখান থেকে সরে গেলো কিনা জানিনা। মোবাইলে যোগাযোগ করেও আর পাইনি। রাত ১১টায় ছেলে আমাকে ফোন করে আবার জানায় আমার এক পা উড়ে গিয়েছে বাবা। আমি আর বাঁচবনা। এই কথা বলার পরেই তার ফোন বন্ধ হয়ে যায়।)
কিছুক্ষণ পর শুনি আমার ছেলে মারা গেছে। মোবাইলে কল দিলেও কেউ রিসিভ করে নি।
মা মোজাম্মেলা বেগম ছেলে মবিনুলের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সাথে সাথে প্রতিবেশীদের কান্নাও যেন থামে না। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ছনুয়া শেলবন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ মাঠে জানাজা শেষে মবিনুলের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
সীতাকুণ্ড বিএম কন্টেইনার ডিপোতে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে ১২ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতেন মবিনুল হক পারভেজ (২৬)। ৩ মাস আগে নগরীর হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ থেকে অর্থনীতি বিষয়ে অনার্স পাশ করে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে চাকরি নেন। পাশাপাশি ওই কলেজে মাস্টার্সেও লেখাপড়া করছেন। তাঁর বাড়ি বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের মধুখালী ইসহাক মুন্সি পাড়ায়। তাঁর বাবা বাঁশখালী ছনুয়া শেলবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। মা মোজাম্মেলা বেগম গৃহিনী। বড় ভাই মো. আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল পেকুয়া উপজেলায় একটি ওষুধ কোম্পানির চাকরি করেন।
এদিকে সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের শোর্কাতে বাঁশখালীর ১৪ ইউনিয়নে ১৫ জুন অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের সকল প্রার্থীরা ঘোষণা দিয়েই গতকাল রোববার একদিনে জন্য নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ রাখেন।