সুপ্রভাত ডেস্ক
করযোগ্য আয় না থাকলেও একজন টিআইএনধারী ব্যক্তিকে আয়কর সনদ নিতে হলে দুই হাজার টাকা কর দেওয়ার বিধান রেখে ২০২৩-২৪ সালের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপিত হয়েছে। বর্তমানে সরকারি ৪৪ ধরনের সেবা পেতে হলে রিটার্ন দাখিলের প্রাপ্তি স্বীকার কিংবা কর সার্টিফিকেট দেখানো বাধ্যতামূলক। ফলে স্বাভাবিকভাবেই করদাতা দুই হাজার টাকা দিতে বাধ্য।
বাজেট ঘোষণার পর থেকে এমন বিধান নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক ও আগামী নির্বাচনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাধ্যতামূলক দুই হাজার টাকার কর দেওয়ার বিধান বাতিলের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। যদিও বিতর্ক এড়াতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য আগামী ২৬ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানা গেছে। খবর ঢাকা পোস্ট।
এ বিষয়ে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধির কারণে অনেক করদাতা কর জালের বাইরে চলে যাবে। রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা হিসেবে টিআইএনধারীদের কাছ থেকে বছরে দুই হাজার টাকা কর সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি আমাদের কাছে যৌক্তিক মনে হয়েছে। তবে বিভিন্ন মহল থেকে নেতিবাচক বক্তব্য আসার পর সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে আপাতত এমন বিধান বাতিলের সুপারিশ এসেছে। এনবিআর ওই সুপারিশ আমলে নিয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর ওপর নির্ভর করছে বলে জানি। এনবিআর পক্ষে ও বিপক্ষে তাদের উপস্থাপনা তুলে ধরবে, যার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২৬ জুন প্রস্তাবিত বাজেট পাসের সময় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে।
গত ১ জুন বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘মূলত যারা ৩৮ ধরনের (প্রস্তাবিত আয়কর আইনে আরও ৫টি সেবা যুক্ত করা হয়েছে) সরকারি সেবা নেবেন, তাদের কর শনাক্তকরণ নম্বরের (টিআইএন) সঙ্গে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণও জমা দিতে হবে। প্রস্তাবটি পাস হলে যারা এসব সেবা নেওয়ার জন্য আয়কর রিটার্নের প্রমাণ জমা দেবেন, করমুক্ত আয়সীমার নিচে আয় থাকলেও তাদের এই ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে।’ এর পরের দিন ন্যূনতম আয়করের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘কাদের টিআইএন থাকতে হয়, টিআইএন বাধ্যতামূলক কাদের, সেই লিস্টটা যদি সামনে নেন, তাহলে সেখানে দেখবেন টিআইএন বাধ্যতামূলক আমদানিকারক, রপ্তানিকারক, ট্রেড লাইসেন্সধারীর জন্য, কমিশন এজেন্সির জন্য। টিআইএন বাধ্যতামূলক পিস্তলের লাইসেন্সের জন্য। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বাড়ি, গাড়ির জন্য।
সাধারণ গরিব মানুষের কোনো অসুবিধা হবে না, সাধারণ গরিব মানুষের তো টিআইএন বাধ্যতামূলক নয়।’
যদিও এফবিসিসিআইসহ একাধিক সংগঠন এই বিধান বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে। আর গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ন্যূনতম কর আরোপের প্রস্তাবকে বৈষম্যমূলক বলে জানিয়েছে। বাজেটোত্তর এক সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, সরকারি সেবা নিতে গেলে যদি কারও করযোগ্য আয় নাও থাকে, তবু তাকে দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে। যার করযোগ্য আয় নেই, তার ওপর এটা চাপিয়ে দেওয়াটা একটা বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত।