সুপ্রভাত স্পোর্টস ডেস্ক »
তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতে নিউজিল্যান্ড দলের কোচ গ্লেন পকন্যাল এক প্রকার হঙ্কার দিয়ে রেখেছিলেন, আগুনের জবাব আগুন দিয়েই দেওয়া হবে। আমরা পরের ম্যাচে লড়াইয়ের জন্য মুখিয়ে আছি। অথচ বাঘের লাগানো আগুনে নিজেরাই পুড়ে মরলো। বাঘের থাবায় ভস্ম হয়ে গেল কিউইরা।
টি-টোয়েন্টিতে এটা বাংলাদেশের নবম সিরিজ জয়। একাধিক ম্যাচের সিরিজ এর আগে বাংলাদেশ জিতেছে পাঁচটি। যেসব সিরিজে মাত্র একটি টি-টোয়েন্টি ছিল, এমন সিরিজ জয় আছে তিনটি।
বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে ৫ বল আগে কিউইদের ৯৩ পেরিয়ে ৬ উইকেটে জিতেছে মাহমুদউল্লাহর দল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় শেষ ও পঞ্চম ম্যাচটি হয়ে উঠলো নিতান্তই নিয়ম রক্ষার।
নাসুম ১০ রানে ৪ আর মোস্তাফিজ ১২ রানে ৪ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাট হাতে বাংলাদেশের নায়ক অধিনায়কই। ৪৮ বলে অপরাজিত ৪৩ এসেছে তার ব্যাটে। ৩৫ বলে ২৯ করে প্বার্শনায়ক নাঈম।
এই জয়ে পাঁচ ম্যাচ সিরিজ এক ম্যাচ বাকি থাকতে ৩-১ ব্যবধানে নিশ্চিত করল স্বাগতিকরা।
সহজ রান তাড়ায় গিয়ে সাবলীল শুরু আসছিল না। ব্যাট বল নিতে ভুগতে হচ্ছিল ওপেনারদের। পাওয়ার প্লে কাজে লাগানোর তাগদা থেকে তৃতীয় ওভারে গিয়ে পড়ে প্রথম উইকেট। ১ চারে ৬ রান করে লিটন স্লগ সুইপে তুলে দেন ক্যাচ। সাকিব আল হাসান এসেই বাউন্ডারি পেয়ে গিয়েছিলেন, নাঈম শেখের সঙ্গে জুটি জমে উঠার আভাস ছিল।
চার-ছয়ে থিতু হওয়া নাঈমের ব্যাটে কিছু গুরুত্বপূর্ণ রান বেরিয়ে আসে। তবে সাকিব আবার ব্যর্থ। ৮ রান করে এজাজ প্যাটেলের বল ক্রিজ থেকে বেরিয়ে হন স্টাম্পিং। ২৪ রানের এই জুটি ভাঙ্গার পর দ্রুতই আরেক উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। মাত্র ৩ বল খেলেই বিদায় নেন মুশফিকুর রহিম। এজাজের ফুললেন্থের বল স্লগ সুইপ করতে গিয়ে হয়ে যান বোল্ড। সিরিজে এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান দ্বিতীয়বার ফেরেন ০ রানে।
৩২ রানে ৩ উইকেট হারনোর পর রানের গতিও হয়ে পড়ে মন্থর। তবে কঠিন পরিস্থিতি দারুণভাবে সামলেছেন মাহমুদউল্লাহ-নাঈম। এক, দুইয়ের উপর খেলে গেছেন তারা। দ্বাদশ ওভারে ফিফটি পেরিয়ে যায় দলের রান। থিতু হয়ে সুযোগ পেয়ে ছক্কাও হাঁকান বাংলাদেশ অধিনায়ক।
ক্রমশ বাংলাদেশের সমীকরণ হতে থাকে সহজ। আরও সহজ হওয়ার সময়ে গিয়ে আসে বাধা। চতুর্থ উইকেটে ৩৪ রানের জুটির পর অহেতুক রান নিতে গিয়ে কাটা পড়েন ৩৫ বলে ২৯ করা নাঈম।
ম্যাচ জিততে তখনো ৩৩ বলে ২৭ রান চাই বাংলাদেশের। টি-টোয়েন্টি বিচারে তা মামুলি দেখালেও কন্ডিশন বিচারে মোটেও তা না। আঁটসাঁট বল করে সেই কাজটা কঠিনই করতে যাচ্ছিলেন কিউই বোলাররা। ১৭তম ওভারে এজাজের ওভার থেকে আসে মাত্র ১ রান, পড়তে পারত উইকেটও। ক্রিজ থেকে বেরিয়ে সহজ স্টাম্পিংয়ের সুযোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
২৫ রানে জীবন পাওয়া মাহমুদউল্লাহ টিকে গিয়ে খেলা করে দেন সহজ। ১৯তম ওভারের প্রথম বলে টিকনারকে ছক্কায় উড়িয়ে ম্যাচ নিয়ে আসেন বাংলাদেশের মুঠোয়। পরের ওভারের প্রথম বলে চার মেরে খেলাও শেষ করে দেন তিনি।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে যাওয়া নিউজিল্যান্ড ইনিংসে ত্রাস ছড়ান নাসুম। প্রথম ওভারেই উইকেট তুলে নেন তিনি। ফ্লাইট দিয়ে টার্ন আদায় করার পাশাপাশি তার বলের নিয়ন্ত্রণ ছিল দেখার মতো। তার ঝলকে ৫২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে সফরকারীরা। মাত্র ১০ রানে ৪ উইকেট নেন এই বাঁহাতি স্পিনার। সাকিব বল হাতে খুব একটা সুবিধা করতে না পারলেও মোস্তাফিজ ছিলেন দারুণ ছন্দে। নিউজিল্যান্ডের শেষটা মুড়ে দিয়ে ১২ রানে ৪ উইকেট তুলেন কাটার মাস্টার। এক প্রান্তে উইল ইয়ং লড়াই করলেও তিন অঙ্কে যাওয়া হয়নি তাদের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড: ১৯.৩ ওভারে ৯৩ (রবীন্দ্র ০ , অ্যালেন ১২, ল্যাথাম ২১, ইয়ং ৪৬, নিকোলস ১ , গ্র্যান্ডহোম ০, ব্ল্যান্ডেল ৪ , ম্যাকনকি ০, এজাজ ৪, টিকনার ২, হামিশ ০* ; নাসুম ৪/১০ , সাকিব ০/২৫, শেখ মেহেদী ১/২১, মোস্তাফিজ ৪/১২ , সাইফুদ্দিন ১/১৬, মাহমুদউল্লাহ ০/৭)
বাংলাদেশ: ১৯.১ ওভারে ৯৬/৪ (নাঈম ২৮, লিটন ৬, সাকিব ৮, মুশফিক ০, মাহমুদউল্লাহ ৪৩*, আফিফ ৬*; বেনেট ০/১৭, এজাজ ২/৯ , ম্যাকনকি ১/৩০, রবীন্দ্র ০/৮, গ্র্যান্ডহোম ০/৩, টিকনার ০/১৩)
ফল: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: নাসুম আহমেদ।
সিরিজ: বাংলাদেশ ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে (৫ ম্যাচ সিরিজ)