বাংলা গানকে বাংলা গানের মতো করেই চর্চা করা উচিত

সাক্ষাৎকারে শিল্পী সাফায়েত জামিল দিদার »

সুনীল সমুদ্রবেষ্টিত বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার সম্ভাবনার লীলাভূমি দেশের একমাত্র পাহাড় সমৃদ্ধ দ্বীপ মহেশখালী। যেখানে সুমদ্রের ভায়োলিনে কুহেলিয়া, বাঁকখালী নদী আপনসুরে গান গেয়ে যায়। হরিৎ মৈনাক শির তুলে জলের সাথে করে মিতালি। এমনই শান্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠা একজন নিভৃতচারী শিল্পী সাফায়েত জামিল দিদার। তাঁর সাথে একান্ত আলাপচারিতায় ওঠে এসেছে অজানা অনেক কথা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কবি মিজান মনির।

মিজান মনির : কেমন আছেন?
দিদার : ভালো আছি, ভাই।
মিজান মনির : বঙ্গোপসাগরের মাঝে একটি দ্বীপে বসে গান নিয়ে হৈ-হুল্লোড় করে সময় পার করছেন। যান্ত্রিক জীবনে এত ব্যস্ততার মাঝেও সাংগীতিকসত্তা লালন করে চলেছেন কীভাবে?
দিদার : বর্তমান মোবাইল মেটার যুগে এসেও সেদিকে খুব বেশি ঢুঁ না-মেরে প্রতিদিন সবুজ অরণ্যের পটভূমি মৈনাক পাহাড়ের পাদদেশে কিংবা সুনীল সাগরের কোলঘেঁষে বসে গান গাই। গানে-গানে আড্ডা দিই। এগুলোয় আমাদের যান্ত্রিক জড়তা ও অবসাদ থেকে মুক্তি পাওয়ার খোরাক এখন।
মিজান মনির : বলতে গেলে এখন শতভাগ ডিজিটাল মিডিয়ার যুগ। বিষয়টাকে কীভাবে দেখেন?
দিদার : যেকোনো কিছুর সঙ্গে যদি নিজেকে আপডেট না রাখি, তা হলে পিছিয়ে পড়ার আশংকা প্রবল। তাই সব সময় নিজেকে আপডেট রাখাটা সময়ের দাবি। জীবনাচরণ ও চিন্তাধারায় সমকালীন অনুষঙ্গকে গ্রহণ করতে হবে। তাই ডিজিটাল মিডিয়া মাধ্যমটাকে পজিটিভলিই দেখছি।
মিজান মনির : সম্প্রতি আপনার গাওয়া ‘ভালোবাসার ময়না’ তথা ‘পাখিরে’ গানটি তরুণদের মুখে-মুখে ফিরছে। এতে আপনার অনুভূতি কেমন?
দিদার : নিঃসন্দেহে এটা খুবই আনন্দের খবর একজন শিল্পীর কাছে। আমার অনুভূতিও এর ব্যতিক্রম নয়।
মিজান মনির : গান গাওয়াটা কখন থেকে শুরু?
দিদার : ছোটোবেলা থেকেই। যখন বেতারে গান শুনতাম অনুরোধের আসরে, তখন থেকেই।
মিজান মনির : দেশের সুপরিচিত শিল্পী বিজয় মামুনের তত্ত্বাবধানে নিজের কথা ও সুরে যে গান করেছেন, তাতে সাড়া কেমন পেলেন?
দিদার : খুবই আশাব্যঞ্জক। তাই তো আর থেমে থাকি নাই। লেগে আছি প্রাণের খোরাক গানের জগতে।
মিজান মনির : জন্মভূমি মহেশখালী নিয়ে গাওয়া আপনার গানটা বেশ পরিচিতি এনে দিয়েছে আপনার, আপনিও কি তাই মনে করেন?
দিদার : অবশ্যই। এটা আমার শেকড়ের গান। আর শেকড়ের সাথে মানুষের সম্পর্কটা অনেক গভীরেই গাড়া থাকে। তাই শ্রোতারা এ ধরনের গানগুলো বেশি পছন্দ করে। এ গানের গীতিকার কবি সাইয়্যিদ মঞ্জু। তিনি গানটি খুব যত্ন সহকারে মনের মাধুরী দিয়ে লিখেছেন।
মিজান মনির : ভিউচর্চা নিয়ে কী বলবেন?
দিদার : আমি কখনোই ভিউ দিয়ে শিল্পীর মূল্যায়ন করি না। অনেক বাজে গানেরও বেশি ভিউ হয় দেখলাম। ভালো গানের ভিউ না-হলেও ভালো গান সব সময়ই ভালো।
মিজান মনির : আগের মতো এখনকার গান মানুষের হৃদয় স্পর্শ করতে পারছে বলে কি মনে করেন?
দিদার : এটা সত্য, আমাদের আগের প্রজন্মের শিল্পীদের গান অনেক বেশি জীবনঘনিষ্ঠ ও সুরেলা ছিল। সেজন্যে তাঁদের গান মানুষের মুখে-মুখে ফিরতো।
মিজান মনির : একটি জনপ্রিয় গান থেকে দু-চার লাইন নিয়ে নতুন গান তৈরির চর্চা চলছে, এ নিয়ে কী বলবেন?
দিদার : একধরনের অস্থির ও অমনোযোগী প্রজন্ম এই কাজটা করছেন। পাশের দেশের এই প্রবণতা দেখে তারাও নকল করছে। তবে আমি সব সময় নকলকে নকলই বলবো। আমি মনে করি, বাংলা গানের আলাদা ঢঙ। তাই বাংলা গানকে বাংলা গানের মতো করেই চর্চা করা উচিত।
মিজান মনির : জ্যেষ্ঠ শিল্পীদের অবমূল্যায়ন হচ্ছে বলে অভিযোগ, আপনি কি একমত?
দিদার : দেখুন, শিল্পীদের কখনও সরাসরি রাজনৈতিক মতবাদে ফেলে কালো তালিকাভুক্ত করা উচিত নয়। কারণ শিল্পীদের কোনো দল হয় না। শিল্পীরা সর্বজনীন। তাঁরা দেশ ও মানুষের জন্যেই গান লেখেন, গান গান। অন্যদিকে আমাদের দেশে বেশির ভাগ সময় শিল্পীকে মূল্যায়ন করা হয় মৃত্যুর পর। কিন্তু তখন মূল্যায়ন করে কী হবে? বেঁচে থাকতেই শিল্পীদের প্রাপ্য সম্মান দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
মিজান মনির : গান নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে বলুন।
দিদার : জীবননিষ্ঠ সুন্দর ও সুস্থ ধারার গান নিয়ে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই।
মিজান মনির : নতুন মৌলিক গান ভক্তেরা আবার কবে শুনতে পাবে?
দিদার : আশা করি, খুব শীঘ্রই নতুন গান নিয়ে আসবো।
মিজান মনির : অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় করার জন্য।
দিদার : আপনিও ভালো থাকুন, গানের সঙ্গে থাকুন।