বাংলাদেশ-ফ্রান্স দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে : প্রধানমন্ত্রী

সুপ্রভাত ডেস্ক »

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর এক যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। খবর বাসসের।

তিনি বলেন, ‘আমার পিতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে যে বন্ধুত্বপূর্ণ বন্ধনের সূচনা করেছিলেন তা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে।’

শেখ হাসিনা তাঁর বিবৃতিতে আরও বলেন, ‘আজ ফ্রান্স ও বাংলাদেশের মধ্যে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি ঐতিহাসিক দিন যা পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে বিকশিত হচ্ছে।’

এর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি আজ (গতকাল) অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দ্বিপাক্ষিক সমগ্র বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা করেছেন।

তিনি বলেন, ফ্রান্স বাংলাদেশের সার্বভৌম নীতি, স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা ও সমর্থন প্রকাশ করেছে, বিশেষকরে চলমান ভূ-রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে।

তিনি বলেন, ‘আমরা উভয়েই আশা করি বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে এই নতুন কৌশলগত পদক্ষেপ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’

তিনি আরও বলেন, গত দেড় দশকে বাংলাদেশে সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা, উন্নয়ন ও সুশাসনের ওপর ভিত্তি করে এই নতুন সম্পর্কের ভীত রচিত হয়। তিনি আরও বলেন, ‘ফ্রান্স সরকার জনগণের মৌলিক ও মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বশীল ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কর্মকা-ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।’

সরকার প্রধান আরো বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির দর্শনীয় ও ধারাবাহিক অগ্রগতিতে ফরাসি সরকারের আস্থা ও প্রশংসা ব্যক্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিএসপি প্লাস প্রকল্পের অধীনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য সুবিধা বাংলাদেশের জন্য অব্যাহত রেখে ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে ফ্রান্স।

তিনি বলেন, ‘তাই বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে আমি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর নেতৃত্বে ফ্রান্স সরকার ও ফ্রান্সের জনগণকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’

বৈঠকে তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতির লক্ষে তারা বিশদ আলোচনা করেছেন এবং ‘আমরা কিছু ঐকমত্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি।’

বাংলাদেশের বিশ্বস্ত উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে শেখ হাসিনা বলেন, অবকাঠামো উন্নয়নে ফ্রান্স আমাদের অব্যাহত সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।

তিনি বলেন, তারা বাংলাদেশের কৌশলগত নিরাপত্তা অবকাঠামো নির্মাণে উন্নত ও বিশেষায়িত প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানে আগ্রহ দেখিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নেতৃস্থানীয় এবং দায়িত্বশীল আবাসিক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে কাজ করবে ।

সরকার প্রধান উল্লেখ করেন, ‘আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় ফ্রান্সের নেতৃত্বকে স্বাগত জানাই এবং একটি টেকসই তহবিল গঠনের জন্য প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর আহ্বানের প্রশংসা করি।’

এছাড়া বৈঠকে শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত বিনিময় নিয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে কার্যকর আলোচনা হয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।

বৈঠকের শুরুতেই শেখ হাসিনা প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ এবং তাঁর প্রতিনিধিদলের সম্মানিত সদস্যদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে ফ্রান্সের সরকার ও ফ্রান্সের জনগণের প্রতি শুভেচ্ছা জানান এবং দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের আরও সমৃদ্ধি কামনা করেন।

এরআগে, সকাল ১০টা ২০ মিনিটে ফরাসি প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছলে শেখ হাসিনা টাইগার গেটে ফুলের তোড়া দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান। পরে দুই নেতা একান্ত বৈঠকেও মিলিত হন।

দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আগে শেখ হাসিনা ও ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ একটি ফটো সেশনেও অংশ নেন। দুই নেতার উপস্থিতিতে দুটি চুক্তিও সই হয়।

ভারতের নয়া দিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান শেষে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে রোববার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছেন ম্যাক্রোঁ।

এটি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ প্রথম বাংলাদেশ সফর। এরআগে প্রথম ফরাসি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফ্রাঁসোয়া মিতেরাঁ ১৯৯০ সালের ২০-২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সফর করেন।