সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক »
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ৩ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজের সমতা ফিরিয়েছে শ্রীলঙ্কা। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুক্রবার ৫০ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৭ উইকেটে ২৮৬ রান। শ্রীলঙ্কা রান তাড়ায় জিতে যায় ১৭ বল বাকি রেখে।
বাংলাদেশের হয়ে ওপেনিংয়ে সৌম্য সরকার করেন ১১ চার ও ১ ছক্কায় ৬৬ বলে ৬৮ রান। পরে তাওহিদ হৃদয় খেলেন ১০২ বলে ৯৬ রানের রানের অপরাজিত ইনিংস। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসের পথে ৩ চার ও ৫টি ছক্কা মারেন তরুণ এই ব্যাটসম্যান।
শ্রীলঙ্কাকে রান তাড়ায় এগিয়ে দেয় পাথুম নিসাঙ্কা ও চারিথ আসালাঙ্কার জুটি। ষষ্ঠ ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে ১৩ চার ও ৩ ছক্কায় ১১৩ বল ১১৪ রান করে নিসাঙ্কা। ৬ চার ও ৪ ছক্কায় আসালাঙ্কা করেন ৯৩ বলে ৯১ রান।
দুজনে যোগ করেন ১৮৫ রান, চতুর্থ উইকেটে যা শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ জুটি। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাতেশ ধাক্কা খায় ম্যাচের শুরুতেই। আরও একবার প্রথম ওভারে বিদায় নেন লিটন কুমার দাস। আগের ম্যাচে প্রথম বলে আউট হওয়া ব্যাটসম্যান এবার ফেরেন তৃতীয় বলে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৯০ ইনিংসে শূন্য রানে কাটা পড়লেন তিনি ১৪ বার। পরের ওভারে শূন্য রানে জীবন পান নাজমুল হোসেন শান্ত। স্লিপে পাথুম নিসাঙ্কার আঙুল গলে বল চলে যায় বাউন্ডারিতে। এক বল পরই শান্তর ব্যাটের কানা ছুঁয়ে কিপারের গ্লাভসে যায় বল। এবার শ্রীলঙ্কার কেউ বুঝতেই পারেননি তা, তাই আবেদনও করেননি কেউ।
দুই দফায় রক্ষা পেয়ে সৌম্য সরকারের সঙ্গে জুটি গড়ে তোলেন শান্ত। ৭২ বলে ৭৫ রান যোগ করেন দুজন। খবর বিডিনিউজ।
দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে এই জুটি ভাঙেন দিলশান মাদুশাঙ্কা। ৩৯ বলে ৪০ করে থামেন শান্ত। এরপর হৃদয়ের সঙ্গে আরেকটি অর্ধশত রানের জুটি গড়েন সৌম্য। জুটিতে আসে ৫৪ বলে ৫৫ রান। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে রিভার্স সুইপ খেলে সৌম্যর বিদায়ে ভাঙে এই জুটি।
দারুণ ক্যাচ নেন মাদুশাঙ্কা। নতুন ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ দ্বিতীয় বলেই ক্রিজ ছেড়ে হাসারাঙ্গাকে মারার চেষ্টায় স্টাম্পড হয়ে যান। এরপর মুশফিকুর রহিম (২৫) ও মেহেদী হাসান মিরাজ (১২) ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েও পারেননি। ১৮৯ রানে ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
নড়বড়ে অবস্থা থেকে লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে দলকে উদ্ধার করেন হৃদয়। তানজিম হাসানের সঙ্গে যোগ করেন তিনি ৬২ বলে ৪৭ রান। পরে তাসকিন আহমেদের সঙ্গে অষ্টম উইকেট জুটিতে ৫০ রান আসে কেবল ২৩ বলেই।
হৃদয় ফিফটি স্পর্শ করেন ৭৪ বলে। পরের ২৬ বলে করেন তিনি ৪৬ রান। তাসকিন অপরাজিত থাকেন ১০ বলে ১৮ করে। শেষ দুই বলে দুটি ছক্কায় ইনিংস শেষ করেন তিনি। শেষ তিন ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৪৪ রান। রান তাড়ায় শ্রীলঙ্কাও প্রথম ওভারে হারায় উইকেট। আভিশকা ফার্নান্দোকে শূন্যতে ফেরান শরিফুল ইসলাম।
দ্বিতীয় উইকেটে নিসাঙ্কা ও কুসাল মেন্ডিস পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করলেও তা দীর্ঘায়িত হয়নি। তাসকিন আহমেদ আক্রমণে এসেই ফেরান মেন্ডিসকে। শরিফুল এরপর সাদিরা সামারাউইক্রামাকে ফেরান ১ রানে। ৪৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে থাকা শ্রীলঙ্কার ত্রাতা হয়ে আসেন নিসাঙ্কা ও আসালাঙ্কা। বাংলাদেশের বোলারদের হতাশ করে বিশাল জুটি গড়ে তোলেন দুজন।
তাদের ব্যাটের দাপটে পেছনে পড়ে যায় ১৯৯৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চতুর্থ উইকেটে রোশান মাহানামা ও আর্জুনা রানাতুঙ্গার ১৭১ রানের জুটি। ১৮৫ রানের জুটি থামান মিরাজ। নিসাঙ্কা আউট হন ১১৪ রানে। একটু পর আসালাঙ্কাকে শতরানের আগে থামান তাসকিন। তবে শ্রীলঙ্কাকে বিপাকে পড়তে দেননি দুনিথ ওয়েলালাগে ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। ২ ছক্কায় ১৬ বলে ২৫ রান করে দলকে জয়ের কাছে নিয়ে আউট হন হাসারাঙ্গা। ওয়েলালাগে ফেরেন দলকে জিতিয়ে।
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ সোমবার একই মাঠে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৮৬/৭ (লিটন ০, সৌম্য ৬৮, শান্ত ৪০, হৃদয় ৯৬*, মাহমুদউল্লাহ ০, মুশফিক ২৫, মিরাজ ১২, তানজিম ১৮, তাসকিন ১৮*; মাদুশাঙ্কা ৬.৪-১-৩০-২, মাদুশান ৯-০-৬৮-১, কুমারা ৮-০-৫০-০, লিয়ানাগে ৪.২-০-৩০-০, আসালাঙ্কা ২-০-১০-০, ওয়েলালাগে ১০-০-৪৭-০, হাসারাঙ্গা ১০-১-৪৫-৪)।
শ্রীলঙ্কা: ৪৭.১ ওভারে ২৮৭/৭ (নিশাঙ্কা ১১৪, আভিশকা ০, কুসাল মেন্ডিস ১৬, সামারাউইক্রামা ১, আসালাঙ্কা ৯১, লিয়ানাগে ৯, ওয়েলালাগে ১৫*, হাসারাঙ্গা ২৫, মাদুশান ০*; শরিফুল ৯-০-৪৯-২, তানজিম ১০-০-৬৫-১, তাসকিন ৯-০-৪৯-২, মিরাজ ১০-০-৫৮-১, তাইজুল ৫-০-৪৩-১, সৌম্য ৪-০-২১-০, শান্ত ০.১-০-২-০)।
ফল: শ্রীলঙ্কা ৩ উইকেটে জয়ী। সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজের দুটি শেষে ১-১ সমতা। ম্যান অব দা ম্যাচ: পাথুম নিসাঙ্কা।