বাঁশখালীতে অধিকাংশ আওয়ামী লীগ নেতার অবস্থান নৌকার বিপক্ষে

নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁশখালী

বাঁশখালীতে নৌকা ছেড়ে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা এবং স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা ঈগল এবং ট্রাক প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের সুস্পষ্ট অবস্থান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও বার্তা এবং স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছেন।
এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাঁশখালী থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে দুইবার এমপি হওয়া ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী নানান ঘটনার জন্ম দিয়ে বর্তমানে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছেন। অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুজিবুর রহমান (ঈগল প্রতীক) এবং দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল্লাহ কবির লিটন (ট্রাক প্রতীক) নিজ নিজ অবস্থানকে শক্ত মনে করছেন। এই তিন প্রার্থী ছাড়া আরও ৭ জন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. খালেকুজ্জামান (বেঞ্চ), ছনুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জিল্লুর করিম শরীফি (কংগ্রেস পার্টি থেকে ডাব), ন্যাপের প্রার্থী আশীষ কুমার শীল (কুঁড়েঘর), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহিউল আলম চৌধুরী (মোমবাতি), ইসলামী ঐক্যজোটের শফকত হোসেন চাটগামী (মিনার), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের আবদুল মালেক আশরাফী (চেয়ার), এনপিপির মামুন আবছার চৌধুরী (আম)।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাঁশখালীর ১টি পৌরসভার মেয়র এবং ১৪টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের মধ্যে ৫ জন ছাড়া বাকি ১০ জন এখন নৌকার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন।
কাথরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ২৬ ডিসেম্বর নিজের ফেসবুক আইডিতে ট্রাক প্রতীকের প্রার্থীর সাথে গণসংযোগের ছবি তুলে স্ট্যাটাস দিয়েছেন ‘৩১ বছর পর অবস্থান পরিবর্তন করলাম।’
ছনুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা হারুনুর রশিদ ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর সাথে নির্বাচনি প্রচারণার ছবি তুলে নিজ ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ঈগলের জন্য ভোট চেয়েছেন।
চাম্বল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর হোসেন বলেন ৩৩ বছর রাজনীতি করছি। আমার পাড়ার সড়কটিও করতে পারিনি, এমপি সাহেব কখনো ভাঙা রাস্তা মেরামতের কথাও বলেনি। বাঁশখালীর এত উন্নয়নের টাকা গেল কই? তাই নৌকা ছেড়ে এখন ঈগলের জন্য ভোট খুঁজছি। কিন্তু আওয়ামী লীগ রাজনীতি ছাড়ছি না। একই বক্তব্য দিয়েছেন পুঁইছড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দাশ।
সাধনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আমান উল্লাহ বলেন, এমপি সাহেব লোকজন দিয়ে সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রশিদের ওপর হামলা করেছেন। আওয়ামী লীগের কোন সদস্যও নয় সেই রকম এক আলোচিত পলাতক জঙ্গি পরিবারের ভাইকে আওয়ামী লীগের প্যাড করে সহসভাপতি বানিয়ে দিয়েছেন। দীর্ঘ ১০ বছর কোন নেতা কর্মীর খবর নেয়নি। তাই আমরা নৌকা ছেড়ে ঈগল করছি।
বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক শ্যামল দাশ বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কোন কমিটিই নেই। আওয়ামী লীগের শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নামের দুটি পদ দিয়েই কমিটি ঘোষণা করে সরকারের দেয়া সব উন্নয়ন তছনছ করে দিচ্ছে। তাই ঈগল প্রার্থীর পক্ষ নিয়েছি। তবে আওয়ামী লীগের বিরোধী নই।
বীর মুক্তিযোদ্ধা (দক্ষিণ জেলা কমান্ডার) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে লোকজন দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাঁশখালীর পৌরসভার সাবেক মেয়র সেলিমুল হক চৌধুরীকে পিটিয়েছেন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখেরখীলের আলী আশরাফের জানাজায় গার্ড অব অনার দিতে দেননি। বিষয়টি নির্বাচনের আগে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়েছিলাম। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ওপর হামলাকারী এমপি প্রার্থী নৌকা পেলেও আমরা তাকে ভোট দিতে পারি না। তাই আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীকে আমরা বেঁচে নেব।
নৌকা প্রতীক প্রার্থী এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর নির্বাচন পরিচালনাকারী ও বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন হচ্ছে প্রত্যেক ভোটারদের মত প্রকাশের কেন্দ্রবিন্দু । নির্বাচনে যেহেতু আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নেতারা ব্যক্তিগত অভিমত নিয়ে কাজ করতে পারেন অসুবিধা নেই। তবে নৌকা বিপুল ভোটে জিতবে। আমাদের সাথে অনেক নেতা আছেন।
উল্লেখ্য, এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম ১৬ বাঁশখালী আসনে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৭৭৫ জন ভোটার ১১৪টি কেন্দ্রে ৭৬৩টি বুথে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। বাঁশখালীর নৌকা প্রার্থী এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে গত ২৬ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হারুণ মোল্লা বাদি হয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও সাংবাদিকদের পেটার অপরাধে মামলা দায়ের করেছেন।
বাঁশখালী থানার ওসি তোফায়েল আহমদকে মোবাইলে হুমকি দেয়ার অপরাধে বাঁশখালী থানায় ২২ ডিসেম্বর এমপি’র বিরুদ্ধে করা জিডির তদন্ত চলছে। নির্বাচনের আগে মুক্তিযোদ্ধাকে পেটানো, প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শনসহ নানান ঘটনা ঘটানোর কারণে তিনি আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন।