নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »
কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে প্রশাসন। মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে নদীর কস্তুুরাঘাট মোহনা থেকে এই অভিযান শুরু হয়। অভিযানে এ পর্যন্ত নদীর তীরবর্তী সীমানা পিলার দিয়ে দখল করা শতাধিক পিলার ও একই সঙ্গে ২ শতাধিক ভবন ও ঘর ভেঙ্গে দিয়েছে প্রশাসন।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান। জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পৌরসভা, পরিবেশ অধিদপ্তর, বন বিভাগ, বিআইডব্লিউটিএ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে এই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান।
বাঁকখালী নদীর তীর ঘেঁষে দখল করে কয়েক বছর ধরে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠছে। সম্প্রতি নদীতীরের ৬০০ হেক্টর প্যারাবন নিধন করে একে একে চলছে স্থাপনা নির্মাণের কাজ। নদীর কস্তুুরাঘাটের সঙ্গে খুরুশকুলের সংযোগ স্থাপনে বাঁকখালী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এই সেতুর সংযোগ সড়কের দুই পাশে প্যারাবন কেটে এর মধ্যে শতাধিক পাকা ভবন তৈরি করা হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান বলেন, সকাল থেকে শুরু হওয়া এই উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে। পর্যায়ক্রমে নদীর সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। এই জমি বিআইডব্লিউটিএকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য হাইকোর্টের রায় রয়েছে। কোনোভাবেই নদী দখলের প্রশ্নে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
অভিযান চলাকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলা
এদিকে, সকাল থেকে শুরু হওয়া এ উচ্ছেদ অভিযানে দুপুরে ২ টার পর দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকদের উপর হামলা চালিয়েছে আবদুল খালেক নামের এক দখলদার। এতে কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। উচ্ছেদ চলাকালীন সময় দুপুরে হঠাৎ করে হাতে লাঠি নিয়ে সাংবাদিক উপর হামলা চালায় আলোচিত দখলদার আবদুল খালেকের নেতৃত্বে ১০-১২ জন যুবক।
সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, হঠাৎ হাতে লাঠি নিয়ে আবদুল খালেকসহ যুবকরা গালি-গালাজ করতে করতে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় শংকর বড়ুয়া রুমি, মাইন উদ্দিন শাহেদ, তৌফিকুল ইসলাম লিপুসহ কয়েকজন ক্যামেরা পার্সনকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়।
এ সময় পুলিশসহ অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। কক্সবাজারের জৈষ্ঠ সাংবাদিক তোফায়েল আহমদ জানান, সাংবাদিকরা মূলত উচ্ছেদের সংবাদ সংগ্রহ করছেন। এখানে তাদের উপর হামলার ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান জানিয়েছেন, উচ্ছেদ চলমান রয়েছে। থাকবে। হাইকোর্টের আদেশে এ উচ্ছেদ। নদীর সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ পর্যন্ত অভিযান চলবে। সাংবাদিকদের উপর হামলাকারী আবদুল খালেকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলেন তিনি।
পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, ‘দেরিতে হলেও বাঁকখালী নদী দখল উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করায় প্রশাসন সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে অভিযানে পুরো জায়গা উদ্ধার করে নদীকে ফিরিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় দখলদারচক্র সুযোগ নিবে এবং অভিযান নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি করবে।’
কক্সবাজার শহরের কস্তুুরাঘাটের বদরমোকাম থেকে পেশকারপাড়া পর্যন্ত ৫টি দাগে নদী, খাল ও বালুচর শ্রেণির ১৪৬ একর বাঁকখালী নদীর সরকারি জমি গত দুই বছরে প্রকাশ্যে দখল করা হয়েছে। এসব জমির ১০০ একর প্যারাবন, জীববৈচিত্র্য ও পাখির আবাসস্থল ধ্বংস করা হয়েছে।