চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ১৮ নভেম্বর মহাসমারোহে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উদযাপিত হয়েছে।
এ উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৯টায় চবি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার বেলুন-ফেস্টুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন এবং শান্তির প্রতীক পায়রা অবমুক্ত করেন। অতঃপর সুসজ্জিত ব্যান্ড দলের ব্যান্ডের সুরের মূর্ছনায় শুরু হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। আনন্দ শোভাযাত্রা চবি বঙ্গবন্ধু চত্বরে এসে শেষ হয়। এরপর চবি বঙ্গবন্ধু চত্বরে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার এবং অতিথিবৃন্দকে সাথে নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
সকাল ১১টায় চবি জারুলতলাস্থ অনুষ্ঠান মঞ্চে উপাচার্য অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ও চবি এলামনাই ড. হাছান মাহমুদ এমপি, অতিথিবৃন্দ এবং উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে ৫৭তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কেক কাটেন। অতঃপর অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবদুল করিম এবং সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম। সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু চেয়ার ইতিহাসবিদ প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুন। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ। এছাড়া অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন চবি সাবেক উপ-উপাচার্য ও উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মো. আলাউদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ, সাবেক চাকসু ভিপি মাজহারুল হক শাহ ও চাকসু ভিপি নাজিম উদ্দিন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চবি প্রক্টর ও ৫৭তম বিশ^বিদ্যালয় দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য-সচিব ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সহকারী প্রক্টর মরিয়ম ইসলাম।
প্রধান অতিথি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র, প্রায় ৪১ বছর আগে এখানে ছাত্র হিসেবে ভর্তি হয়েছিলাম; চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় হৃদয়ের মণিকোঠায় সবসময় সবুজ ও সতেজ। দেশের অন্য বিশ^বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাস সবচেয়ে সুন্দর। এখানে যখন আসি তখন স্মৃতিকাতর হয়ে যাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশ^বিদ্যালয়ে শুধু পাঠদান নয়, ডিগ্রি প্রদান নয়, বিশ^বিদ্যালয়ের মূল কাজ হলো জ্ঞানের চর্চা করা এবং এ জ্ঞানের চর্চার মাধ্যমে বিশ^কে জয় করা।’
উপাচার্য তার বক্তব্যে শত ব্যস্ততার মাঝেও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী চবি এলামনাই ড. হাছান মাহমুদ এমপি কে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ায় আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। একইসাথে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে চবি’র সবুজ ক্যাম্পাসে স্বাগত ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের শুভেচ্ছা জানান। উপাচার্য তার বক্তব্যের শুরুতে মহাকালের মহানায়ক, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চারনেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাৎ বরণকারী ত্রিশলাখ শহীদ, মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের এবং ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে শাহাদাৎ বরণকারী বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যবর্গ ও ’৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় হলো জ্ঞান-গবেষণার অন্যতম তীর্থস্থান। দেশে বহুমাত্রিক দক্ষতা সম্পন্ন যোগ্য ও আলোকিত মানবসম্পদ তৈরিতে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার নিরীখে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় বর্তমান প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠান সূচিত হয়। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রধান অতিথি এবং অতিথিবৃন্দকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। এ ছাড়া ৫৭তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে চবি ক্যাম্পাসকে অপরূপ সাজে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিজ্ঞপ্তি