বন্দর বিশেষজ্ঞ জাফর আলম
পৃথিবীর যত বন্দর আছে সবগুলোকেই আর্ন্তজাতিক নীতি অনুসরণ করতে হয়। চট্টগ্রাম বন্দরও এ নীতি মেনেই এতদূর অগ্রসর হয়েছে। কেননা আমাদের বন্দর ক্রমান্বয়ে তার সক্ষমতা বাড়িয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে অনেকগুলো ইক্যুইপমেন্টের (উপকরণ) পাশাপাশি নতুন করে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল যুক্ত হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই নির্মাণ কাজ শুরু হবে লালদিয়া ও বে-টার্মিনাল। এছাড়াও মাতারবাড়িতে তৈরি হচ্ছে এ অঞ্চলের একমাত্র গভীর সমুদ্রবন্দর।
পৃথিবীর প্রায় সব উন্নত পোর্টই বেসরকারিভাবে পরিচালিত হয়। প্রাইভেট অপারেটর বন্দরের সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে। সরকার বা বন্দর কর্তৃপক্ষ শুধু ক্রস ফিঙ্গার সিটেড থাকে। আর নির্দিষ্ট সময়ে তাদের লাভটা নেয়। এটাকে বলা হয় ল্যান্ডলর্ড সিস্টেম। এ নীতি অনুসরণ করে ক্রস ফিঙ্গার সিটেড থাকতে হবে চট্টগ্রাম বন্দরকে। নতুবা বিশ্বের এ প্রতিযোগিতায় চট্টগ্রাম বন্দর পিছিয়ে পড়বে। প্রাইভেট অপারেটর দেশি বা বিদেশি হোক, সেটি বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বিচার করেই নিয়োগ দেবে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের বেশ কিছু পরিবর্তন আসবে। গতিশীলতা আরও বৃদ্ধি পাবে।
মার্স্কলাইন পৃথিবীর ৮৪টি বন্দর অপারেট করে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে লালদিয়ার চর এলাকায় টার্মিনাল করতে দেওয়াটা সরকার ও বন্দর কর্তৃপক্ষের একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। এ ধরনের প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান টার্মিনাল অপারেট করলে সরকার ও বন্দর কর্তৃপক্ষকেও বেশ কিছু জায়গায় ছাড় দিতে হবে। যেমন- পৃথিবীর কোনো বন্দরের জেটিতে বা ইয়ার্ডে কাস্টমসের ফিজিক্যাল এক্সাম করা হয় না। কিন্তু চট্টগ্রাম পোর্টে তা হয়। এতে বন্দরের ডেলিভারিতে বেশ সময় লাগে। এ ধরনের ইস্যুগুলো নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। ফিজিক্যাল এক্সামিনের কাজটা বন্দর থেকে সরিয়ে ডিপোতে করা হলে বন্দরের গতিশীলতা আরও বাড়বে।
একটি বন্দরের সক্ষমতার ওপর ওই অঞ্চলের রাজস্ব ছাড়াও অবকাঠামো, যোগাযোগ ও শিল্পের উন্নয়ন হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা যত বাড়বে, চট্টগ্রামের রাস্তা-ঘাট তত উন্নত হবে, চট্টগ্রামে তত বেশি বিনিয়োগ হবে। তাই চট্টগ্রামের মানুষকেই বন্দরের উন্নয়নে সহযোগিতা করা দরকার। এরমধ্যে নদীতে ময়লা ফেলা বন্ধ করাও একটি বড় কাজ। কর্ণফুলীতে ময়লা ফেলার কারণে নদীর ড্রাফট (গভীরতা) কমে যেতে পারে। তখন বন্দরে বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে না। যত বড় জাহাজ বন্দরে ভিড়বে তত বন্দরের লাভ, ব্যবসায়ীদের লাভ ও আমাদের অর্থাৎ ভোক্তাদেরও লাভ।