সুপ্রভাত ডেস্ক »
দেশের প্রেক্ষাগৃহে বিদেশি ছবি নিয়মিত আমদানির বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে নানা মহলে। নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াই বেশি। বিশেষ করে বলিউডের ছবি নিয়মিত আমদানির বিষয়ে ঘোর আপত্তি রয়েছে অনেকের। তাদের ধারণা, হিন্দি ছবি এই বাজারে ঢুকলে ঢালিউড যেটুকু টিকে আছে- সেটুকুও ভেস্তে যাবে।
এমন আলোচনা-সমালোচনার দোলনায় যখন বিষয়টি দুলছে লম্বা সময় ধরে, তখন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের কণ্ঠে মিললো পজিটিভ মতামত! তিনি মনে করেন, বছরে ১০-১২টা হিন্দি ছবি দেশের প্রেক্ষাগৃহে চালালে তার আপত্তি থাকবে না।
গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রামের অভিজাত মাল্টিপ্লেক্স স্টার সিনেপ্লেক্সের নতুন শাখা উদ্বোধনের সময় এমন অভিমত জানান মন্ত্রী। তার ভাষ্যে, ‘বছরে ১০-১২টা হিন্দি ছবি আসার ক্ষেত্রে আমার ব্যক্তিগত আপত্তি নেই। তবে দেশের সিনেমা সংশ্লিষ্ট সব মানুষ ও সংগঠনকে একমত হতে হবে। না হলে কিছুই সম্ভব হবে না।’ খবর বাংলাট্রিবিউনের।
হিন্দি ছবির বিষয়ে মন্ত্রীর অনাপত্তিপত্র মিললেও মুগ্ধতা রয়েছে দেশের ছবি ও প্রযোজকদের নিয়েও। ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘রুহেলকে (স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তা) ধন্যবাদ জানাই, সে শুধু সিনেমা হল বানায়নি, সিনেমাও বানিয়েছে। তার প্রযোজিত ‘ন ডরাই’ আমি দেখেছিলাম। মুগ্ধ হয়েছি। আমি আশা করি, রুহেলের হাত ধরে চট্টগ্রাম ও সারাদেশে আরও অনেক সিনেমা হল চালু হবে। কদিন আগে কলকাতায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবে ‘হাওয়া’ দেখার জন্য এক কিলোমিটার দীর্ঘ লাইন হয়েছে। আমি অবাক হয়েছি। ফলে আমাদের সিনেমা শিল্প কিন্তু থেমে নেই। এগিয়ে চলছে। এই অগ্রগতি ধরে রাখতে হবে আমাদের।’
টানা ১৮ বছর রাজধানী শাসন করে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় স্টার সিনেপ্লেক্স পতাকা ওড়ালো বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। বাংলাদেশের সিনেমা হলের অন্ধকার দূর করে আলো ছড়ানো এই অভিজাত মাল্টিপ্লেক্সটি প্রথমবার ঢাকার বাইরে নিজেদের শাখা চালু করলো।
চট্টগ্রাম শহরের চকবাজার এলাকায় (নবাব সিরাজ উদ্দিন রোড) বালি আর্কেড শপিং কমপ্লেক্সে অবস্থিত সুপরিসর এই মাল্টিপ্লেক্সের রয়েছে তিনটি হল। যার আসন সংখ্যা যথাক্রমে ৮৬ (হল-১), ১৯৬ (হল-২) এবং ১২৫ (হল-৩)টি। ৩ ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রামের দর্শকরা এই মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা উপভোগ করতে পারবেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় হয়ে গেল জমকালো উদ্বোধন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে ঢাকা থেকে উড়ে এলেন তারকা দম্পতি রাজ-পরী। চকবাজারের অত্যাধুনিক এই মাল্টিপ্লেক্সে এসে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছে এই দম্পতি।
বরাবরের মতো নান্দনিক পরিবেশ, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত সাউন্ড সিস্টেম, জায়ান্ট স্ক্রিনসহ বিশ্বমানের সিনেমা হলের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা নিয়ে হলগুলো নির্মিত হয়েছে বলে জানান স্টার সিনেপ্লেক্সের চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান রুহেল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি তুলে ধরেন ভালো ছবি, আধুনিক হল নির্মাণের পাশাপাশি বক্সঅফিসের গুরুত্বও।
রুহেল বলেন, ‘শুধু হলিউডের ওপর আমরা নির্ভরশীল থাকতে চাই না। দেশেও ভালো ছবি হওয়া দরকার। সামনে কিন্তু তেমন কোনও দেশিয় ছবি নেই। তাই আমি চাই সংশ্লিষ্টরা এদিকে নজর দেবেন। আমরা একশ সিনেমা হল করার ঘোষণা দিয়েছি। মনে হচ্ছে সেটার দিকে অনেকটা এগিয়ে গেছি। চট্টগ্রামের পর রাজশাহী, কুমিল্লাসহ অন্যান্য জেলায় শাখা চালু হবে আমাদের। এটার সঙ্গে এখন দরকার ভালো ভালো ছবি। আমরা ছবি নির্মাণের প্রস্তুতিও নিচ্ছি। কিন্তু এই কাজগুলো একার নয়, সবার।’
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ৮ অক্টোবর রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে যাত্রা করে দেশের প্রথম মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হল ‘স্টার সিনেপ্লেক্স’। বর্তমানে ঢাকায় ৫টি শাখা রয়েছে এর। ধানমন্ডির সীমান্ত সম্ভার (সাবেক রাইফেলস স্কয়ার), মহাখালীর এসকেএস (সেনা কল্যাণ সংস্থা) টাওয়ার, মিরপুরের সনি স্কয়ার এবং বিজয় স্মরণি সামরিক জাদুঘরে শাখাগুলো অবস্থিত। এ ছাড়া বগুড়া ও রাজশাহীতে নতুন শাখার নির্মাণ কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।