নিজস্ব প্রতিবেদক »
সারিবদ্ধভাবে টেবিলে সাজিয়ে রেখেছে কয়েক হাজার বই। একদল তরুণ-তরুণী দাঁড়িয়ে আছে সাজিয়ে রাখা বইগুলো ঘিরে। যারা বই নিতে আসছে তাদের হাতেও বই। তাদের কারো হাতে পুরোনো মলাটের নজরুল, আবার কারো হাতে রবীন্দ্রনাথ। কেউবা অবার নিয়ে আসছে পড়া শেষ হওয়া বই।
গতকাল সিআরবির শিরীষ তলায় এই ভিন্নধর্মী বই বিনিময়ের আয়োজন করে বইবন্ধু। সকাল ১০টা থেকে বই বিনিময় শুরু হয়। এই মেলায় বইপ্রেমীরা ৭ হাজারে অধিক বই বিনিময় করে। শেষ হয় বিকাল পাঁচটায়।
ব্যাগে করে পড়া শেষ হওয়া পাঁচটা বই নিয়ে আসা নাজমা আক্তার বলেন, ‘নিজের সংগ্রহে অনেক বই আছে। আমার ইচ্ছে ছিল বইগুলো কারো সাথে বিনিময় করে পড়া হয়নি এমন বই নিব। ফেইসবুকে জানতে পারি বই বিনিময়ের কথা। অধীর অগ্রহে এই দিনটার জন্যই অপেক্ষায় ছিলাম। নিজের সংগ্রহে থাকা পাঁচটি বই দিয়ে পড়া হয়নি এমন পাঁচটি বই নিলাম।’
সিআরবিতে ঘুরতে এসে বই বিনিময় উৎসব দেখে প্রশংসা করে অতীতের কথা স্মরণ করেন মাঝ বয়সী এক ভদ্রলোক। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন অনেক বই পড়তাম। খুঁজে খুঁজে বই পড়তাম। এই সময়ের ছেলে-মেয়েরা বই খুব কম পড়ে। এই উৎসবটা খুব ভালো লেগেছে। কেননা টাকার বিনিময়ে নয়, বইয়ের বিনিময়ে বই পাওয়া যায়।’
মেলা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় ৮৫ জন ছাত্র-ছাত্রী এই বই বিনিময় উৎসবে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছে। নুরুদ্দিন সায়েম নামে এক স্বেচ্ছাসেবক বলেন, ‘যান্ত্রিক এই শহরে অনেক উৎসবের আয়োজন হয়। কিন্তু বই বিনিময়ের মত উৎসব হয় না। চায়ের কাপে এখন আর বই নিয়ে ঝড় উঠে না পাড়ার চায়ের দোকানটিতে কিংবা বন্ধুদের আড্ডায়। তাই এধরনের উৎসব হলে শিক্ষার্থীরা বই ভালোবাসবে। বই পড়বে।’
এই বই বিনিময় উৎসবের প্রধান সংগঠক মহিউদ্দীন তোহা। চট্টগ্রামের এই উৎসবে ৭ হাজার বই বিনিময় হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের প্রচুর বই পেয়েছি। অংশগ্রহণও অনেক ছিল। তবে চট্টগ্রামের পাঠক থেকে ইসলামিক বই বেশি পেয়েছি।’
বই বিনিময়ের ধারণার বিষয়ে জানতে চাইলে তোহা বলেন, ‘প্রথমে শুরু করি বইবন্ধু গণপরিবহন পাঠাগারের মাধ্যেমে। আমাদের উদ্দেশ্য যানবাহনে অনেকক্ষণ বসে থাকা যাত্রীরা যাতে বই হাতে পায়। তাছাড়া চালু করেছি বইবন্ধু হাসপাতাল পাঠাগার, বইবন্ধু নৌ পরিবহন পাঠাগার, বইবন্ধু পর্যটন পাঠাগারসহ আরো অনেক ধরনের বই পড়ার কার্যক্রম। এসব কার্যক্রমের একটি অংশ বইবিনিময়।’
এত বড় একটা কর্মযজ্ঞ মানুষের টাকায় পরিচালিত হয় বলে জানান বইবন্ধু সংগঠনের এই প্রধান সংগঠক। সেই সাথে তিনি আরো জানান, ‘কেউ যদি কোন স্থানে বইবিনিময় উৎসব করতে চায় আমার সহযোগিতা করবো।’
উৎসবের একপাশে টাঙানো পোস্টারে ভিনসেন্ট স্টারেট একটি লেখায় যেন এই উৎসবের আয়োজকদের চেহারা ফুটে উঠে, আমরা যখন বই সংগ্রহ করি তখন আনন্দকেই সংগ্রহ করি।’