পশ্চিম তীরের তুলকারম শহরে অভিযান চালানোর সময় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অভিযানে তাদের গুলিতে নিহত এক ফিলিস্তিনির লাশের উপর দিয়ে বেশ কয়েকবার গাড়ি চালিয়ে দেয়।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, একাধিক সিকিউরিটি ক্যামেরায় পৌচাশিক ওই কাণ্ড ধরা পড়ছে। তবে ভিডিওগুলো নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল। গত সোমবার ইসরায়েলের সীমান্ত পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের কমান্ডোরা একজন পলাতক জঙ্গিকে? ধরতে তুলকারমে অভিযান চালায়। সেখানে জঙ্গিদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষে তিন ফিলিস্তিনি বন্দুকধারী নিহত হয়। ওই অভিযানের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, রাতের বেলা ইসরায়েলি বাহিনী একটি বাড়ির সামনে হাজির হয়ে সেখানে থাকা একদল তরুণের ওপর সরাসরি গুলিবর্ষণ শুরু করে। সে সময় ওই তরুণরা পালিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে সড়ক ধরে দৌড়াতে থাকে। তাদের একজনের কাছে একটি রাইফেল ছিল। ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে দুই তরুণ পড়ে যায়। তাদের আর নড়াচড়া করতে দেখা যায়নি। ইসরায়েলি বাহিনীর একটি গাড়ি মাটিতে পড়ে থাকা দুই তরুণের মৃতদেহের কাছে যায় এবং একটি লাশের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেয়।
গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় অব্যাহত ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা এখন ২৩ হাজার ৩৫৭ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে আরো ৫৯ হাজার ৪১০ জন। বুধবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। এ ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১৪৭ জন নিহত এবং ২৪৩ জন আহত হয়েছে।’ বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা আছে। উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছতে পারছেন না।’ অন্যদিকে হামাসের হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের মতে, প্রায় ৮৫ শতাংশ গাজাবাসী ইসরায়েলি আক্রমণে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তাদের সবাই খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় ছাড়াই বসবাস করছে।
ইসরায়েলিদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া বাইডেন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের গাজা ছেড়ে যেতে চাপ দেয়া যাবে না এবং শর্তসাপেক্ষে তাদের বাড়ি ফিরতে দিতে হবে। ফিলিস্তিনিদের অন্য কোথাও পুনর্বাসনের আহবান জানিয়ে কিছু ইসরায়েলি মন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটির নিন্দা জানিয়েছেন ব্লিঙ্কেন। উত্তর গাজায় এক শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় বেশ কিছু ফিলিস্তিনি নিহতের পর তার এই মন্তব্য আসে।
মৃতদেহের ওপর গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনার পরেও বিশ্বনেতাদের মধ্যে কোনো বোদোদয় হয়নি। এখন পর্যন্ত কেউ নিন্দা জানায়নি। এ ধরনের বর্বর আচরণের পর আমরা বিশ্বনেতাদের প্রশ্ন করতে চাই তাঁরা কি ইসরায়েলকে এমন গণহত্যা চালানোর অনুমোদন দিয়েছেন? এ ধরনের বর্বরতা অতীতে কোথাও সংঘটিত হয়েছিল? যেসব দেশ গণতন্ত্রের কথা বলে, মানবাধিকারের কথা বলে, সভ্যতার কথা বলে তারা তিন মাস ধরে গাজায় ইসরায়েলের এই ভয়াবহতম নিষ্ঠুরতার বিষয়ে নিরব-নিশ্চুপ কেন? আর কত মানুষ হত্যা করলে, আর কত শিশু হত্যা করলে, আর কত বর্বরতা সংঘটিত করলে ইসরায়েল ক্ষান্ত হবে সে কথা বলবেন কি কোনো বিশ্বনেতা?
এ মুহূর্তের সংবাদ