জুয়েল আশরাফ »
ট্রেনের এসি বগিতে আমার উল্টোদিকে বসা মেয়েটি আমাকে জিজ্ঞেস করল, শুনছেন? এই মোবাইলের সিম বের করার পিনটা কি আপনার কাছে আছে?
ব্যাগ থেকে একটি ফোন বের করল, সে এটিতে একটি নতুন সিমকার্ড রাখতে চাচ্ছে। কিন্তু সিমটি খুলতে একটি পিন প্রয়োজন, যা তার কাছে নেই। আমি হ্যাঁ-সূচক মাথা নেড়ে আমার ব্যাগ থেকে পিনটি বের করে মেয়েটিকে দিলাম। সে ধন্যবাদ জানিয়ে পিনটি নিল এবং সিম ঢোকানোর পর আমাকে পিনটি ফেরত দেয়।
কিছুক্ষণ পর সে আবার এদিক-ওদিক তাকাতে লাগল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোনো সমস্যা?
ওই সিমকার্ডটা কাজ করছে না।
আমি মোবাইলটা চাইলাম, সে দিল। আমি তাকে বললাম, সিমটা এখনও চালু হয়নি।
মেয়েটি জিজ্ঞেস করল, চালু হবে না কেন?
যার নামে সিমকার্ডটি তোলা সে বিস্তারিত জানাতে পারে।
মেয়েটি বিড়বিড় করঠ, ওহ।
আমি সান্ত¡না দিয়ে বললাম, এটা কোনো সমস্যা নয়।
সে এক হাতে অন্য হাত দিয়ে টিপতে থাকল। যেন কোনো কষ্টে আছে। আমি আবার বিনয়ের সঙ্গে বললাম, কোথাও ফোন করতে চাইলে আমার মোবাইল ব্যবহার করুন।
মেয়েটি বলল, এখন না, ধন্যবাদ। কিন্তু আমি জানি না এই সিমটা কী নামে কেনা হয়েছে।
আমি বললাম, একবার সচল হতে দিন, যে আপনাকে সিম দিয়েছে তার নামে হবে।
মেয়েটি বলল, ঠিক আছে, চেষ্টা করি।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনার স্টেশন কোথায়?
বলল, চিটাগাং।
মেয়েটি আমাকে জিজ্ঞাসা করল, আপনি?
আমি বললাম, আমিও চিটাগাং যাচ্ছি। আপনি চিটাগাং থাকেন নাকি?
মেয়েটি বলল, না না, চিটাগাংয়ে কোনো কাজ নেই, আমার বাড়িও নেই।
আমি কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তাই?
সে বলল, আসলে আমি আজ দ্বিতীয় ট্রেনে আছি, এবং আমাকে চিটাগাং থেকে কক্সবাজারের বাস ধরতে হবে, তারপর চিরতরে মুক্তি।
মুক্তি? কিন্তু কেমন জেল থেকে?
আমি আবারও কৌতূহলী হয়ে উঠলাম। কোন বন্দিতে ছিল এই ছোট্ট, চিন্তাহীন মেয়েটি?
মেয়েটি বলল, একই জেলে ছিলাম, যেখানে প্রতিটি মেয়ে আছে। আপনার পরিবারের সদস্যরা যেখানে বলবেন সেখানেই বিয়ে করুন। তারা যেমন বলে তেমন করুন। বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি।
আমি অবাক হলাম, কিন্তু আমার বিস্ময় লুকিয়ে হেসে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি একা দৌড়াচ্ছেন? আপনার সঙ্গে কাউকে দেখা যাবে না?
সে বলল, একা নয়, কেউ একজন একসঙ্গে আছে।
আমার প্রশ্ন শেষ ছিল না। জিজ্ঞেস করলাম, কে?
আমি চিটাগাং থেকে অন্য বাস ধরব, তারপর আমি পরের স্টেশনে তার সঙ্গে দেখা করব। তারপরে আমরা আর কারোর সঙ্গে দেখা করব না।
ওহ, তাই? এটা ভালোবাসার ব্যাপার।
সে বলল, হ্যাঁ।
আমি তাকে বললাম, আমিও প্রেমের বিয়ে করেছি।
একথা শুনে মেয়েটা খুশি হলো। বলল, বাহ, কেমন করে?
প্রেমের বিয়ের কথা শুনে সে আমার সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী হতে শুরু করে। আমি বললাম, কখন, কীভাবে, কোথায় সেটা পরে বলবো। আগে বলুন, আপনার বাসায় কে কে আছে?
মেয়েটি চট করে বলল, সেটা আমি আপনাকে কেন বলবো? এটা আমার বাড়ির যে কেউ হতে পারে, আমার বাবা-মা ভাইবোন বা হয়তো ভাই না, শুধু বোন, অথবা এমনও হতে পারে যে কোনো বোন নেই এবং দুচারজন রাগী বড়ভাই আছে।
তার মানে আমি আপনার নামও জিজ্ঞাসা করতে পারব না?
সে বলল, যে কোনো নাম আমার হতে পারে। জরিনা, সখিনা, মালেকা, গোলাপিÑ যেকোনো।
সে খুব চটপটে মেয়ে। এখানে-ওখানে একটু কথা বলার পর সে আমাকে ক্লাসের ছোট্ট বাচ্চাদের মতো টফি দিয়ে বলল, আজ আমার জন্মদিন।
আমি টফি তুলে তাকে অভ্যর্থনা জানালাম। জিজ্ঞেস করলাম, আপনার বয়স কত?
সে বলল, আঠারো।
মানে আপনি পালিয়ে বিয়ে করার বৈধ বয়সে পৌঁছেছেন।
সে হাসল।
কিছুক্ষণর মধ্যেই আমরা বেশ খোলামেলা হয়ে গেলাম। যেন আমরা একে অপরকে দীর্ঘদিন ধরে চিনি। আমি তাকে বললাম, আমার বয়স পঁয়ত্রিশ। আপনার থেকে সতেরো বছরের বড়।
সে হেসে বলল, ‘আপনি’ করে বলতে ভালো লাগছে, না?
আমি হাসলাম।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছ, তোমার মুখে দুশ্চিন্তার ছাপও নেই, আমি এই প্রথম এমন উদাসীনতা দেখলাম।
নিজের প্রশংসা শুনে খুশি হয়ে বলল, আমার প্রেমিক আমাকে আগেই বুঝিয়ে দিয়েছে যে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় একদম ঠান্ডা হয়ে যাও। পরিবারের সদস্যদের কথা একদম ভাববে না। মেজাজটা একদমই নষ্ট করবে না। শুধু আমার আর আমাদের দুজনের কথা ভাববে। আমিও তাই করছি।
আমি আবার ঠাট্টা করে বললাম, সে তোমাকে আমার মতো অচেনা যাত্রীদের থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেয়নি? মেয়েটি হেসে উত্তর দিল, না, হয়তো সে এটা বলতে ভুলে গেছে।
আমি তার বয়ফ্রন্ডের প্রশংসা করে বললাম, তোমার বয়ফ্রেন্ড খুব মেধাবী। সে তোমাকে একা বাসায় রেখে কিভাবে গেল, তোমাকে একটা নতুন সিম আর মোবাইল দিয়েছে, তিনটি ট্রেন বদলিয়েছে, যাতে কেউ ট্রেক করতে না পারে। খুব মেধাবী মানুষ।
মেয়েটি বলল, সে খুব মেধাবী, তার মতো কেউ নেই।
আমি তাকে বললাম, আমি দশ বছর ধরে বিয়ে করেছি। আমার চার বছরের একটি মেয়ে আর এক বছরের একটি ছেলে আছে। তাদের ছবি দেখো।
আমার ফোনে বাচ্চাদের ছবি দেখে তার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো, এত কিউট!
আমি বললাম, আমি ওদের জন্মের সময় কুয়েতে ছিলাম। আমার একটি পেট্রো কোম্পানিতে খুব ভালো চাকরি ছিল। আমার খুব ভালো বেতন ছিল। তারপর কয়েক মাস পরে আমি সেই চাকরিটি ছেড়ে দিলাম। দেশে এসে কাজ শুরু করি।
মেয়েটি জিজ্ঞেস করল, চাকরি ছেড়ে দিলেন কেন?
যখন আমি প্রথমবার বাচ্চাটির মুখ দেখেছিলাম, তখন মনে হয়েছিল যে আমার পৃথিবী আমার হাতে। ত্রিশদিনের ছুটিতে বাড়িতে এসেছি। ফিরে যেতে ইচ্ছে হয়েছিল, কিন্তু যেতে পারিনি। যেখানে শিশুটির শৈশব কাটতে থাকে, সেখানেই আমার পৃথিবী। আমি রোজগার করলেও লোকসানের কারবার আমার দুলাখের চাকরি, আমার শৈশবই লাখে।
সে জিজ্ঞাসা করল, স্ত্রী-সন্তানদের সেখানে নিয়ে যেতে পারেননি?
বললাম, অনেক টেকনিক্যাল বিষয়ের মধ্য দিয়ে যাওয়ার পরে সেই সময়ে এটা সম্ভব ছিল না। আমাকে বলাসবহুল জীবনযাপনের চাকরি বা পরিবার দুইটির মধ্যে বেছে নিতে হয়েছিল। আমি আমার মেয়ের জন্য পরিবার বেছে নিয়েছি। তার বড় হওয়া দেখব বলে। আমি কুয়েতে ফিরে গেলাম, কিন্তু পদত্যাগ নিয়ে ফিরে এসেছি।
মেয়েটি বলল, খুবই চিত্তাকর্ষক।
আমি হেসে জানালার দিকে তাকালাম।
মেয়েটি জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা আপনি প্রেমের বিয়ে করেছেন, তাহলে কোথায় পালালেন? আপনি কীভাবে জীবনযাপন করেছেন আর সেই সময় কীভাবে কেটেছে?
তার প্রতিটি প্রশ্ন এবং প্রতিটি শব্দে আমার মনে হলো এই মেয়েটি মেলেবেলার শিখরে রয়েছে। ঠিক একটি বোকা আর নিষ্পাপ ছোটবোনের মতো। আমি তাকে বললাম, আমরা পালিয়ে বিয়ে করিনি। তার বাবা প্রথম দেখাতেই আমাকে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
মেয়েটি জিজ্ঞেস করল, কেন তিনি আপনাকে প্রত্যাখ্যান করলেন?
আমি বললাম, প্রত্যাখ্যানের কারণ হতে পারে আমার বংশ, আমার কাজ, বাড়ি, পরিবার।
ঠিক, ঠিক। মেয়েটি সম্মতি দিল এবং আরও জিজ্ঞাসা করল, আপনি তখন কী করলেন?
আমি বললাম, আমি কিছু করিনি। তার বাবা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, সেখান থেকে আমি নিজেকে নিয়ে আলাদাভাবে ভাবতে শুরু করি। শারিকা আমাকে বলেছিল পালিয়ে যেতে। আমার স্ত্রীর নাম শারিকা। আমি অকপটে প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। সে দুদিন ধরে পীড়াপীড়ি করতে থাকে, চলো আমরা পালিয়ে যাই। আমি প্রত্যাখ্যান করতে থাকলাম। তাকে বুঝিয়ে বললাম, পলাতক দম্পতিতে ছেলেটির খ্যাতির তেমন কিছু যায়-আসে না, কিন্তু মেয়েটির পুরো পরিবারের সম্মান ধুয়ে যায়। যে ছেলেটি পালিয়ে যায় সে তার বন্ধুদের মধ্যে হিরো হিসাবে বিবেচিত হয়। কিন্তু প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়া মেয়েটিকে বলা হয় দুশ্চরিত্রা। এলাকার ছেলেরা তাকে ‘চালু মাল’ বলে ডাকে। মেয়েটির জন্য সব থেকে খারাপের অভিধান ব্যবহৃত হয়। সেই ঘটনার কলঙ্ক তার কপাল থেকে মুছে যায় না। আমি এক মত, একটি ছেলে আর একটি মেয়ে, ওজন করার এই দ্বৈতমান ভুল, কিন্তু আমাদের সমাজে এটি সামাজিক মনোভাব।
সে তার নিচের ঠোঁট দাঁতের নিচে পিষতে লাগল। পানির বোতলের ঢাকনা খুলে একটা চুমুক দিল। আমি বললাম, সেদিন যদি শারিকাকে নিয়ে পালিয়ে যেতাম তাহলে ওর মা হয়তো অনেক দিন পানিও খেতে পারতো না। তাই আমি এমন কাজ করার সাহস করিনি। আমি যাকে ভালোবাসি, ওর বাবা-মা আমার বাবা-মায়ের মতো।
মেয়েটি এক মুহূর্ত ভাবনায় পড়ে গেল। আমার সম্পর্কে আরও জানতে চাইল। জিজ্ঞেস করল, তাহলে বিয়ে করলেন কেমন করে?
আমি বললাম, শারিকার অন্য কোথাও বিয়ে ঠিক হয়েছিল। আস্তে-আস্তে সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করল। শারিকা আর তার হবুবরের কথাও ফোনে শুরু হলো। কিন্তু বিয়ে যত ঘনিয়ে আসতে শুরু করল, সেই লোকদের চাহিদাও বাড়তে থাকল।
মেয়েটি জিজ্ঞেস করল, চাহিদা মানে?
চাহিদা মানে একটাই, যৌতুকের চাহিদা। পরিবারের সবাইকে সোনার তৈরি ঘড়ি উপহার দিতে হবে। বিলাসবহুল গাড়ি, শাশুড়ি ও বোনের গলায় দামি সোনার চেইন দিতে হবে ইত্যাদি। বরপক্ষ বলল, আমাদের এখানে এমন রেওয়াজ আছে। ছেলেটিও এই পদ্ধতিতে অর্থগ্রহণের পক্ষে ছিল। আমি সেই এনগেজমেন্ট ভেঙেছি। শুধু তাকে বিয়ে করতে পেরেছি বলেই নয়, শারিকাও এমন লোভী মানুষের মাঝে সুখী হতে পারতো না। তারপর কোনোভাবে পরিবারের লোকজনকে বোঝানোর পর আমি সামনে এসে বিয়ে করি। এটা সব ভাগ্যের ব্যাপার ছিল।
মেয়েটি বলল, আপনার সঙ্গে দেখা হয়েছে, এটা ভালো। নইলে ভুল মানুষের মধ্যে আটকে যেত।
আমি বললাম, এটা জরুরি নয় যে বাবা-মার সিদ্ধান্ত সব সময় সঠিক হয়। আর এটাও জরুরি নয় যে প্রেমময় দম্পতির পছন্দই সঠিক। তাদেরও ভুল হয় বা সঠিক হতে পারে।
মেয়েটি আবার পানিতে চুমুক দিল। আমিও তাই করলাম। মেয়েটি যুক্তি দিল, আমাদের সিদ্ধান্ত ভুল হলে তাতে কিছু যায়-আসে না। তাদের দোষীবোধ করা উচিত নয়।
আমি বললাম, সিদ্ধান্তটি এমন হওয়া উচিত যাতে সন্তান এবং পিতামাতার উভয়ের সম্মতিই সর্বোত্তম হয়। খারাপ মনে করো না, আমি বলতে চাই তোমার সিদ্ধান্ত তোমাদের উভয়ের যাতে তোমার বাবা-মা জড়িত নয়। তারা তোমাকে ভালোবাসে।
সে জিজ্ঞাস করল, ভালোবাসার প্রকৃত অর্থ কী?
আমি বললাম, ভালোবেসে আছ, সব ছেড়েছ, এটাই সত্যিকারের ভালোবাসা। লাভক্ষতির কথা ভাবোনি, এটাই ভালোবাসা। তোমার মন ছিল একেবারে শূন্য। জাগতিকতার খালি জায়গাটা ভালোবাসার চেতনায় ভরে গেছে। যে মানুষগুলো ভালোবাসায় ভরেছে, তারা কি ভালোবাসার নয়। অর্থাৎ যার সঙ্গে যাচ্ছো সে প্রেমে নয়, বুদ্ধিমান হিরোগিরিতে। প্রেমে কী হয়? এত প¬্যানিং করতে পারে না, তিনটা ট্রেন বদলাতে পারে না। তার মস্তিষ্ক এত কাজ করতে পারে না। কারোর পক্ষে বলা অসম্ভব যে আমি প্রেমিক। মজনু প্রেমে পাগল হয়েছিল, মানুষ তাকে পাথর ছুঁড়ে মারতো। এমনকি প্রেমে তার পরিচয় মুছে গেছে। জগতে তাকে সবাই মজনু নামেই চেনে। অথচ তার আসল নাম কাইস। সেই নাম ব্যবহার করা হতো না। যদি সে চালাক হতো, কাইস হতো। মজনু হতো না। শিরিনের জন্য ফরহাদ পাহাড় খনন করে খাল টেনে সেই খালে রক্ত বয়ে গেল, সেটাই প্রেম। কেউ প্রেমে ফকির, কেউ যোগী, কেউ পাহাড় ভেঙে বের হওয়ার পথ পেল। কেউ অতিরিক্ত মন দেয় না। স্মার্ট হয়নি। প্রেম লোভ-লালসা আর অর্জনের নাম নয়। ভালোবাসাকে বলে আত্মসমর্পণ, যেখানে মানুষ প্রথমে নিজেকে সমর্পণ করে। যেমন তুমি করেছ, কিন্তু তোমার আত্মসমর্পণ ছিল অর্জন, অর্থাৎ তোমার প্রেমে লোভের ভেজাল ঘটেছে।
মেয়েটি হঠাৎ হারিয়ে গেল। তার হাসি আর উল্লাস হঠাৎ নীরবতায় পর্যবসিত হলো। ভাবলাম, আমি খুব বেশি কথা বলে ফেলেছি। তবুও আমি চালিয়ে গেলাম। আমি বললাম, তোমার বাবা তোমাকে ভালোবাসে। কিছুদিন পর তার ওজন অর্ধেক হয়ে যাবে। তোমার মা অনেক দিন খাবার খাবে না, পানি খাবে না। তোমার প্রেমিক বুদ্ধিমান, নিজের জন্য ভালো ভাবতো। আজকাল উঠন্ত বয়সের মধ্যে যে প্রেম দেখা যায়, সেটি প্রেম নয়। এটি সিনেমার মতো কিছু। একধরনের স্টান্টিং, সাহসী, ভিন্ন কিছু করার আগ্রহ। এছাড়া অন্য কিছু নয়।
মেয়েটির মুখের রং পাল্টে গেল। মনে হলো সে আর এখানে নেই। তার মন চলে গেছে অতীতে বেড়াতে। আমি আমার ফোন স্ক্রোল করতে শুরু করলাম। কিন্তু আমার ইন্দ্রিয় তার দিকে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই তার আর আমার স্টেশন এলো। কথাটা কোথা থেকে এলো আর কোথায় পৌঁছালো। তার মোবাইলে মেসেজটোন বেজে উঠল। দেখল, সিমটা চালু আছে। চুপচাপ সামনের টিকিটটা বের করে নিল। ব্যাগটা ছিঁড়ে দিল। আমার কাছে আমার ফোন চাইল, আমি মোবাইল দিলাম। সে নাম্বার ডায়াল করে বলল, সরি বাবা। আর কাঁদতে-কাঁদতে বাবাও ফোনে মেয়েকে সামলাতে চেষ্টা করতে লাগল। সে বলল, বাবা, তুমি একটুও চিন্তা করো না, আমি বাসায় আসছি। দুদিক থেকে আবেগের সাগর ভেসে উঠল।
আমরা ট্রেন থেকে নামলাম। সে আবার পিন চাইল, আমি পিন দিলাম। সে মোবাইল থেকে সিম বের করে ভেঙে ফেলল এবং পিনটা আমাকে ফিরিয়ে দিল।