নিজস্ব প্রতিবেদক »
শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, গতানুগতিক শিক্ষা থেকে বেরিয়ে যুগোপযোগী ও প্রযুক্তিগত শিক্ষায় মনোনিবেশ করতে হবে। প্রযুক্তিগত শিক্ষা, ভাষাগত দক্ষতা ও ফ্রিল্যান্সিংয়ে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সেক্টরে শিক্ষার্থীদের আরও বেশি সম্পৃক্ত হয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজেদের মেধার স্বাক্ষর রাখতে হবে।
গতকাল রোববার সকাল ১১টায় নগরের বায়েজিদ আরেফিন নগর এলকায় সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ’র স্থায়ী ক্যাম্পাসে দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে সভাপতির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার কোনো বয়স নেই, মৃত্যু পর্যন্ত জ্ঞান অর্জন করে যেতে হবে। সদ্য ডিগ্রিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করেন। তিনি আশা প্রকাশ করে, তারা তাদের কর্মজীবনেও একইভাবে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।’
চাকরি আমাদের কাছে আসবে না কর্মদক্ষতার মাধ্যমেই চাকরি নিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে প্রায়োগিক দক্ষতার ক্ষেত্রে আমাদের অনেক ঘাটতি রয়েছে। যেমন উচ্চশিক্ষা নিয়েও কিছু উপস্থাপন করতে পারি না, যোগাযোগ করতে পারি না, বাংলা ভাষাতেই আমাদের অনেকের কষ্ট হচ্ছে ইংরেজি তো অনেক দূরের কথা। আমাদের অনেক ডিগ্রিধারী দু’কলম লিখতে পারেন না। সেজন্য বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের দক্ষ করে তুলতে হবে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষা দর্শনটাকে আমাদের ধারণ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বলেন, কেরানি তৈরির বিদ্যা থেকে বেরিয়ে এস। হাতে-কলমে বাস্তবিক, প্রায়োগিক শিক্ষার জন্য মাঠে ময়দানে নামতেই হবে। আপনার মনোজগতে সুবিশাল পরিবর্তন আনতে হবে। শুধু জ্ঞান অর্জন করার জন্য শিক্ষা। এটির সঙ্গে কর্মস্থানের কোনো সম্পর্ক নাই। নতুন করে শেখার মানসিকতা থাকতে হবে। জীবন থেকে শিখতে হবে। লাইফ লং লার্নিংয়ের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।’
শিক্ষা উপমন্ত্রী আরও বলেন, ‘গত ১২ বছরে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সরকার উচ্চশিক্ষাকে দেশবাসীর দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। শিক্ষায় ডিজিটাল পদ্ধতির প্রবর্তন, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, অধিকতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিও অন্তর্ভুক্তিকরণ, এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে সরকার উচ্চশিক্ষার পরিধিকে সম্প্রসারণ করে যাচ্ছে। সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীরা তাদের অর্জিত জ্ঞান, মেধা ও সৃজনশীলতাকে দেশপ্রেম, সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজে লাগিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যাবে।’
কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও লেখক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ শিক্ষার্থীদেও উদ্দেশে বলেন, কর্মমুখর পৃথিবী তোমাদের ডাকছে, সামনে অনেক কাজ, এ ঘনবসতিপূর্ণ দেশের উন্নয়নে সামান্য প্রাকৃতিক সম্পদ হলো আমাদের পুঁজি। কিন্তু আমাদের রয়েছে ১৬ কোটি অসামান্য সম্পদ- মস্তিষ্ক। সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি এই মস্তিষ্ককে শানিত করার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আমি বিশ্বাস করি তোমরা সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছ। তোমাদের অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা দিয়ে এখন আমাদের সীমিত সম্পদে জাপান কিংবা কোরিয়ার মত মূল্যসংযোজন করতে হবে। তাহলেই আমরা সম্পদশালী দেশে পরিণত হবো। মানব সম্পদের থেকে মূল্যবান কোনো সম্পদ নেই এবং আমাদের তা রয়েছে যথেষ্ট।’
উপাচার্য অধ্যাপক প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘সমাবর্তন নিঃসন্দেহে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যই অত্যন্ত মর্যাদা, সম্মান ও গৌরবের। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আমাদের প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থীরা আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে কর্মযজ্ঞে নিজেদের মেধার স্বাক্ষর রাখতে যাচ্ছে। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান, একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন বিশ^দ্যিালয়ের উপাচার্যবৃন্দ।
দ্বিতীয় সমাবর্তনে ভালো ফলাফলের জন্য চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ১০ জন, ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড ৩৯ জন, ডিন অ্যাওয়ার্ড ৩৮ জন এবং গ্রাজুয়েট একাডেমিক এক্সিলেন্স অর্জন করেন ৯ জন শিক্ষার্থী। এতে রাষ্ট্রপতি ও সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি চ্যান্সেলর আবদুল হামিদের অনুমোদনক্রমে সমাবর্তন অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিগ্রি প্রদান করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি। তাছাড়া বিভিন্ন বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে মোট ৭ হাজার ৮শ’ ৫৩ জন শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়।