কিশোর চাকমার স্বপ্ন প্রতিবন্ধী আশ্রম

নিজস্ব প্রতিবেদক >>
একজন প্রতিবন্ধী। যাকে সমাজের মানুষ মনে করে সমাজের ও পরিবারের বোঝা। সমাজ মানসে লেপ্টে থাকা চিন্তাকে ভুল প্রমাণ করে একজন কিশোর প্রতিবন্ধী হয়ে ওঠলেন আরো অনেক প্রতিবন্ধীর অশ্রয়। প্রতিবন্ধীদের জন্য গড়ে তুললেন প্রতিবন্ধী আশ্রম। যেখানে রয়েছেন দৃষ্টিহীন, মানসিক ও বাক প্রতিবন্ধী।
প্রতিবন্ধীদের জন্য যিনি এই আশ্রম গড়ে তুললেন তার নাম কিশোর চাকমা। ২০০৬ সালে এসএসসি, ২০০৮ সালে এইচএসসি পাশের পর ২০০৯ সালে ঢাকায় উচ্চ শিক্ষার জন্য পড়াকালীন ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে দু’পা হারিয়ে হয়ে যান শারীরিক প্রতিবন্ধী। এরপর গল্পের শুরুটা এখান থেকেই। স্বীয় উদ্যোগে খাগড়াছড়ি জেলার বেতছড়ি মুখ এলাকায় রাস্তার পাশেই নিজের জায়গায় গড়ে তুলেছেন তার স্বপ্ন প্রতিবন্ধী আশ্রম। পুঙ্গুত্ব বরণ করে বুঝেছেন এভাবে বেঁচে থাকা কঠিন। তাই ভাবলেন দৃষ্টিহীন, মানসিক, বাক প্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু করার তাগিদ।
তিনি বলেন, আমি শুধু উদ্যোগ নিয়েছি কিন্তু মানুষের মানবিক সহযোগিতায় চলছে আশ্রমটি। আশ্রমে মোট ১৩/১৪ জন রয়েছে এবং আশ্রমে বর্তমানে ৬৫ জন সম্মানিত মাসিক দাতা রয়েছেন। মাসিক সাহায্যের পরিমাণ ২৭০০০ টাকা। তব্ওু নিজের বা আশ্রমের আয় না থাকায় প্রতিষ্ঠানটি চালাতে হিমশিম হতে হচ্ছে। দীর্ঘ ৪ বছরে আমার ক্ষুদ্র প্রতিবন্ধী বিষয়ক কার্যক্রমকে এ পর্যন্ত এগিয়ে নিতে পেরেছি নানাভাবে বহু হিতাকাক্সক্ষী পাশে দাঁড়িয়েছেন বলে। সেসব মানবতাবাদীর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। পাহাড়ের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর কল্যাণে একটি প্রতিবন্ধীবান্ধব প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণে আমার এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ। মানুষের সহযোগিতা আর ভালোবাসা-আশীর্বাদে এই প্রতিষ্ঠানটি এখনও টিকে রয়েছে এবং আলোর পথে এগোচ্ছে। সরকার যদি সুদৃষ্টি দেয়, সাথে মানবতাবাদী মানুষের সহযোগিতা পেলে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীদের সচেতন, শিক্ষিতকরণ, কর্মমুখী শিক্ষায় দক্ষতাকরণ ও কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টি করে দেয়ার লক্ষ্যসহ নানা উদ্দেশ্য নিয়ে স্বপ্ন প্রতিবন্ধী আশ্রম সামনে এগিয়ে যাবে। আমার বিশ্বাস একদিন আমাদের স্বপ্ন প্রতিবন্ধী সংগঠনের মাধ্যমে বহু প্রতিবন্ধীর স্থায়ী ঠিকানা হবে।
খাগড়াছড়ির জেলার এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা আশ্রম তৈরিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন । এছাড়া শতরুপা চাকমা, খাগড়াছড়ির সংগঠক ও উদ্যোক্তা শাপলা ত্রিপুরা, খগেন্দ্র ত্রিপুরা, শর্মিলা লারমা, জেলা প্রশাকসকসহ সমাজের অসংখ্য মানবিক গুণসম্পন্ন ব্যাক্তি সহযোগিতা করেছেন ।
আশ্রমের সাথে সব সময় সহযোগিতায় থাকা বাংলাদেশ বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্টাস্টের সদস্য ও খাগড়াছড়ি জেলা মহিলা যুগ্ন সম্পাদক রুপনা চাকমা বলেন, পাহাড়ের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে সচেতন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে, শিক্ষার আলো ছড়াতে, কারিগরী প্রশিক্ষণে দক্ষ করে কর্মসংস্থানের পথ তৈরিতে কিশোর চাকমা এক মহতী উদ্যোগ নিয়েছে যার নাম স্বপ্ন প্রতিবন্ধী আশ্রম। যে প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখে পাহাড়ের প্রতিটি প্রতিবন্ধীরা একদিন শিক্ষা দীক্ষায় এগোবে, কর্মসংস্থান হবে, পরিবারের বোঝা না হয়ে স্বাবলম্বী হবে। ইতিমধ্যে অনেকেই কিশোর চাকমার পাশে দাঁড়িয়েছেন।
স্থানীয়রা বলেন, এতদিন ধরে আশ্রমটা পরিচালনা করে আসছেন অনেক কষ্ট করে। অনেক সময় দেখেছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে লাঞ্ছনা-বঞ্চনার শিকার হতে। তবুও দমে যায়নি, তার নিজের লক্ষ্যে স্থির ছিল।
কিশোর চাকমা ব্যাক্তিগত জীবনে বিবাহিত। এক সন্তানের বাবা। স্ত্রীও তাকে প্রতিনিয়ত সাহস এবং সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। কিশোর বলেন, কেউ আমাদের প্রতিবন্ধীদের পাশে থাকতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন- বেতছড়ি মুখ, কমলছড়ি ইউনিয়ন, খাগড়াছড়ি সদর, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা, বাংলাদেশ।