সুপ্রভাত ডেস্ক »
সীতাকু-ে যে কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকা-ে ৪১ জনের মৃত্যু ঘটেছে, সেখানে নিরাপত্তার ঘাটতি ছিল কি না, তদন্ত প্রতিবেদন দেখে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
চট্টগ্রামের অগ্নিবিধ্বস্ত বিএম ডিপো সোমবার পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘প্রতিটি দুর্ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি।’
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও ছিলেন। তিনি তদন্তাধীন বিষয় বলে সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
খালিদ বলেন, ‘দেখেন আপনাদের যেমন প্রশ্ন আছে, তেমন আমারও অনেক প্রশ্ন আছে। সব প্রশ্নের উত্তর এখন দেওয়া সম্ভব না। এখন একটা তদন্ত চলছে। তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরে সব প্রশ্নের উত্তর আমরা দিতে পারব। যেহেতু তদন্ত কমিটি হয়েছে আমি এখন কোনো কথা বলতে গেলে তদন্ত ব্যাহত হবে।’
সীতাকু-ের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে শনিবার রাতে ভয়াবহ অগ্নিকা- ঘটে। আগুন লাগার পর আমদানি-রপ্তানির পণ্যবোঝাই কন্টেইনারগুলো একের পর এক বিস্ফোরিত হতে থাকে।
সেখানে চারটি কন্টেইনারে রাসায়নিক ছিল বলে সোমবার শনাক্ত করেছে সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ দল। ডিপোটি রাসায়নিক রাখার কোনো অনুমতি নেয়নি বলে আগেই জানিয়েছিল বিস্ফোরক অধিদপ্তর।
এই অগ্নিকা-ের ঘটনা তদন্ত করতে ছয়টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ডিপোগুলো নিয়ন্ত্রণকারী চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি কমিটি করেছে, ডিপো কর্তৃপক্ষ নিজেরাও করেছে একটি।
ডিপোটির ব্যবস্থাপনায় কোনো গাফিলতি ছিল কি না- প্রশ্ন করা হলে প্রতিমন্ত্রী এনামুর বলেন, প্রতিটা ইন্ড্রাস্টিতে কমপ্লায়েন্স প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এটা একটা কন্টেইনার ডিপো। এটার একটা নীতিমালা বাস্তবায়িত হয়েছে কি না, তা তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেলে ব্যাবস্থা নেব। এখান থেকে আমরা শিক্ষা নেব।’
একই প্রশ্নে নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ বলেন, ‘এটা তো আইএসপিএস যে কোড আছে, তা অনুসরণ করছিল। এখন কেন এটা হল, এত সিকিউরড থাকার পরেও, সেটা তদন্তের মধ্যে বেরিয়ে আসবে।
ডিপো কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারণে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি বেড়েছে কি না- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সেটাও তদন্তে বেরিয়ে আসবে। যদি হয়ে থাকে তদন্তে বেরিয়ে আসবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে খালিদ বলেন, ‘এ সরকার জবাবদিহিতামূলক সরকার। তদন্তের রিপোর্ট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমাদের জিরো টলারেন্স। কারণ এত বড় যে ক্ষতি হয়েছে, যে ক্ষতিটা আমাদের দেশের ভাবমূর্তির সাথে ধাক্কা লাগবে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমরা যে ব্যবসা-বাণিজ্য করি, সেটা অনেক প্রশ্নবিদ্ধ করবে। সুতরাং তদন্তে যা বেরিয়ে আসবে, আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান জানান, এই অগ্নিকা-ে এখন পর্যন্ত ৪১ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ৯ জন চিহ্নিত হয়েছেন, তিনজন নিখোঁজ।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৮২ জন, জেনারেল হাসপাতালে দুজন, পার্কভিউ হাসপাতালে ১০ জন এবং মা ও শিশু হাসপাতালে চারজন চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানান তিনি। এছাড়া ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১৪ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হতাহতদের জন্য দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে ১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নিহতদের ১ লাখ টাকা করে এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। এছাড়া শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে ২ লাখ ও ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
আহতদের ওষুধ ও খাবারের কোনো সঙ্কট নেই জানিয়ে এনামুর বলেন, ‘চিকিৎসার ব্যয় আমরা বহন করব। বাইরে থেকে যা কিছু কিনবে তার খরচ আমরা দেব।’
নৌপ্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিএম কন্টেইনার ডিপো কর্তৃপক্ষ তারাও ইতিমধ্যে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের পাশে কীভাবে দাঁড়াবে বলেছে।
‘আমরা যেটা বলতে চাই, যে মানুষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আহত হয়েছেন, এখন হাসপাতালে আছেন, তাদের কীভাবে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা যায়, সেটা নিশ্চিত করব।’
পরিদর্শনের সময় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও সীতাকু-ের সংসদ সদস্য মো. দিদারুল আলমও ছিলেন।
সেখান থেকে তারা সবাই আহতদের দেখতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান।
এর আগে দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিএম ডিপো এলাকা পরিদর্শন করলেও সেখানে সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা না বলে চমেক হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান।


















































