কাউন্সিলর পদে ১৭৩ জন
সংরক্ষিত ১৪ ওয়ার্ডে ৫৭ জন নারী
মেয়র প্রার্থী সাতজন
দুই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হবে না
প্রথমবারের মতো ভোট ইভিএমে
নিজস্ব প্রতিবেদক :
শেষ হলো প্রচারণা। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচন আগামীকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হচ্ছে।
সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করতে, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের পাশাপাশি রাস্তায় টহল দেয়া শুরু করেছে বিজিবি। আজ মধ্যরাত থেকে লাইসেন্সধারী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চলাচলে বিধি-নিষেধ যেমন আরোপ করা হয়েছে তেমনি যানবাহন চলাচলের উপরও নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রস্তুত প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই প্রার্থী ছাড়া আরও পাঁচজন প্রার্থী রয়েছেন। দুই প্রধান দলের বাইরে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ছাড়াও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন।
অপরদিকে ৪১ ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৭৩ জন প্রার্থী এবং সংরক্ষিত ১৪টি ওয়ার্ডে ৫৭ জন নারী প্রার্থী রয়েছেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আওতাধীন ৪১টি ওয়ার্ডের ৭৩৫টি কেন্দ্রের ৪ হাজার ৮৮৬ বুথে ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন ভোটার রয়েছে। মোট ভোটারের মধ্যে ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ জন পুরুষ এবং ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন নারী ভোটার রয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছেন ৩৯ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডে ১ লাখ ২১ হাজার ৭৩৮ জন। সবচেয়ে কম ভোটার, ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডে ১৮ হাজার ২০৭ জন।
শেষ নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হয়েছে, এখন ভোটের জন্য অপেক্ষা। নগরবাসী চট্টগ্রামের উন্নয়নের স্বার্থে আমাকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।’
অপরদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আমরা হামলা ও পুলিশের গ্রেফতার আতঙ্ক মাথায় নিয়ে প্রচারণা শেষ করলাম। তবে নগরবাসী ভোট দেয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। এখন শুধু ভোটের অধিকারটুকু নিশ্চিত করতে হবে। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। শঙ্কামুক্ত নির্বাচন চাই। আমাদের নির্বাচনী এজেন্টরা যাতে ভয়হীন এবং গ্রেফতার আতঙ্ক ছাপিয়ে কাজ করতে পারে সেই আশ্বাস চাই।
এদিকে নির্বাচনী পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, বেশিরভাগ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় গোলযোগের শঙ্কা রয়েছে। নগরীতে নির্বাচনী সহিংসতায় খুন হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে। সর্বশেষ গত রোববার দিবাগত রাতে ফিরিঙ্গীবাজার ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সালাহ উদ্দিনের বাসায় গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। পাঠানটুলী ওয়ার্ডে একজনের মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। প্রায় সব ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় কাউন্সিলর ভোটে সংঘর্ষ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। নগরীর সড়কগুলোতে টহল দেয়া শুরু করেছে বিজিবি। আর নির্বাচনী কেন্দ্রে পুলিশের সাহায্যকারী হিসেবে থাকবে আনসার বাহিনী।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব ধরনের লাইসেন্সধারী অস্ত্র বহন নিষিদ্ধ করেছে মেট্রোপলিটন পুলিশ। এক আদেশে বলা হয়েছে লাইসেন্সধারী আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন এবং আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চলাচল নিষিদ্ধ। যদি কেউ এই আদেশ লঙ্ঘন করে তাহলে দ্যা আর্মস অ্যাক্ট ১৯৭৮ এর বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তাসহ নগরীর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছে। নদী এলাকার নিরাপত্তার জন্য নৌ-টহল এবং পুলিশকে সহযোগিতা করার জন্য সাদা পোশাকেও পুলিশ মোতায়েন থাকবে। নগরীতে টহল পুলিশের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে পুলিশ চেকপোস্টসহ বিভিন্ন স্থানে স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন থাকবে। যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য কাউন্টার টেরোরিজম, সোয়াত ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট প্রস্তুত থাকবে। প্রিজাইডিং অফিসার ও তার সহকারীগণের ভোট কেন্দ্রে নিরাপদে আসা যাওয়া, ভোটকেন্দ্রের মালামাল আনা নেওয়া এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ নগরীর সকল ভোটারগণ যাতে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেজন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তামূলক সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
অপরদিকে নগরীতে যানবাহন চলাচলের উপরও বিধিনিষেধ আরোপ করেছে মেট্রোপলিটন পুলিশ।
নির্বাচনী এলাকায় সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ (২০১৮ সালের ৪৭ নং আইন) এর ৩২(১) ধারা অনুযায়ী ভোটগ্রহণের পূর্ববর্তী মধ্যরাত (আজ ২৬ জানুয়ারি) ১২টা থেকে নির্বাচনের দিন (২৭ জানুয়ারি) মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত বেবী টেক্সি /অটোরিকশা/ইজিবাইক এবং স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন যন্ত্রচালিত যানবাহন, ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, ট্রাক, লরি, টেম্পো চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করা হয়েছে। তবে মোটরসাইকেল চলাচলে সোমবার মধ্যরাত থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। নির্বাচনের দিন অফিস আদালত খোলা থাকবে বলে গণপরিবহন নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। একইসাথে রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী/তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের (পরিচয়পত্র থাকতে হবে) ক্ষেত্রে এই চলাচল শিথিলযোগ্য। তাছাড়া নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত দেশি-বিদেশি সাংবাদিক (পরিচয়পত্র থাকতে হবে), নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনে বৈধ পরিদর্শক এবং জরুরি কাজে নিয়োজিতদের (যেমন- অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি) ক্ষেত্রে উল্লিখিত যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।
দুই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হবে না
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় ১৮ নম্বর বাকলিয়া ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হারুনুর রশিদ বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী তারেক সোলেমান সেলিম মারা যাওয়ায় এ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন।
প্রথমবারের মতো ভোট হবে ইভিএমে
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবারই প্রথমবারের মতো সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট হতে যাচ্ছে। এর আগে গত নির্বাচনে কেবল জামালখান ওয়ার্ডে ইভিএমে নির্বাচন হয়েছিল। পরবর্তীতে গত সংসদ নির্বাচনে কোতোয়ালী-বাকলিয়া আসনে ইভিএমে ভোট হয়েছিল। তবে এবার সিটি করপোরেশনের সবকটি কেন্দ্রেই ইভিএমে ভোট হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারি শুরু হয়ে যাওয়ায় স্থগিত করা হয়েছিল নির্বাচন। ফলে তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদ আগস্টে শেষ হওয়ার পর সরকার নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজনকে ছয় মাসের জন্য প্রশাসকের দায়িত্ব দেন। আর এ সময়ের মধ্যে সিটি করপো রেশন নির্বাচন সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় নির্বাচন কমিশন ২৭ জানুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে এবং গত ৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় প্রচারণা।