জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদবৃদ্ধিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে যারা এর জন্য দায়ী তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। প্রকল্প পরিচালকদের প্রকল্প এলাকায় থাকতে হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, বড় বড় সেতু নির্মাণে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করতে হবে, সেতু এমন ভাবে নির্মাণ করতে হবে যাতে পানিপ্রবাহ এবং নৌ চলাচল বাধাপ্রাপ্ত না হয়। পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণের সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দানকালে প্রধানমন্ত্রী এসব অভিমত দেন বলে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান সাংবাদিকদের অবহিত করেন। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির কয়েকটি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি ও প্রকল্প কাজের সময় বৃদ্ধি নিয়ে ইতিপূর্বে ক্ষোভ ও প্রকাশ করেছেন। উন্নয়ন প্রকল্পগুলি যথাসময়ে শেষ না হওয়ার কারণ একাধিক; প্রকল্প প্রণয়নে ত্রুটি, প্রকল্পে একই কর্মকর্তাকে একাধিক দায়িত্ব প্রদান, প্রকল্প পরিচালকের নিয়মিত প্রকল্প পরিদর্শন না করা ও সমস্যা চিহ্নিত করে যথাসময়ে ব্যবস্থা না নেওয়া প্রকল্প নির্মাণের মধ্যেই নতুন আইটেম যোগ করা, নির্মাণে মন্থর গতি, নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা প্রভৃতি। পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান প্রকল্পের অতিরিক্ত ব্যয়ে এবং কেনাকাটায় অনিয়ম দুর্নীতির কথাও ইতিপূর্বে সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন।
প্রকল্প প্রণয়নের সময় কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ সরকারি বেসরকারি মহলে সমালোচিত হয়েছে। প্রকল্পের অতিরিক্ত ব্যয়ের অনেক দৃষ্টান্ত পত্র পত্রিকায় আসে কিন্তু এক্ষেত্রে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দৃষ্টান্ত কম। মাঠ পর্যায়ে প্রকল্প প্রণীত হলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন এতগুলো ধাপে ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধির কারণগুলি যথাযথভাবে চিহ্নিত হয় না। প্রকল্প শেষ হতে যত দেরি হবে, ব্যয় তত বাড়বে, তাতে অসাধু কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাভ হবে কিন্তু ক্ষতি হবে জনগণের। প্রকল্প প্রণয়ন ব্যক্তি না গোষ্ঠী স্বার্থে-এরকম প্রশ্নও উত্থাপিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেকের বৈঠকে নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ এবং সতর্ক করে দেওয়ার পরও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি নেই। অনিয়ম দুর্নীতির খবর নিয়মিত গণমাধ্যমে আসছে। কর্মকর্তাদের ঢালাও বিদেশ ভ্রমণ প্রকল্পের তেমন কাজে আসে না, এসব কর্মকর্তারা অন্য দফতরে বদলি হয়ে গেলে তাদের বিদেশের অভিজ্ঞতা কোন কাজে লাগে না, জনগণের অর্থের অপচয় হয় কেবল। আইএমইডির সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্ত্তী উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শনে গিয়ে যে ধারণা পেয়েছেন তা হলো, কাজের গতি মন্থর, কোনো প্রকল্পের কাজই নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না, উন্নয়ন প্রকল্পে নি¤œমানের উপকরণ ব্যবহার হচ্ছে, যেখানে প্রকল্প নেয়ার দরকার নেই, সেখানেও প্রকল্পের নাম ঢুকানো হয়েছে। এতে বোঝা যায় প্রকল্প পরিদর্শন বা কাজে নজরদারি নিয়মিত হয় না। একটি জাতীয় পত্রিকায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন (আইএমইডি) বিভাগের এতদসংক্রান্ত প্রতিবেদন একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একথা ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, দেশের উন্নয়ন কাজ চলে জনগণের অর্থে। প্রকল্পের কাজ সময়মতো না হলে বিদেশি সাহায্যদাতারাও অখুশি হন। দেশের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। জনগণ উপযোগিতা ঠিকমতো পায় না। যারা প্রকল্প অনুমোদন করেন তাদের প্রকল্পের যৌক্তিকতা, উপযোগিতা, প্রকল্প ব্যয় – এসব ব্যাপারে যাচাই বাছাই যথার্থ হওয়া প্রয়োজন।