সুপ্রভাত ডেস্ক »
কক্সবাজারের পর্যটন স্পট পেঁচারদ্বীপের প্যারাবন নিধনে নেমেছে একটি প্রভাবশালী চক্র। পাশাপাশি প্রতিদিন নির্বিচারে কাটা হচ্ছে প্যারাবনের বাইন, কেওড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় গাছ। এরপর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে। এর আগে, কিংশুক ফার্মস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান মাছের ঘের তৈরির জন্য এই প্যারাবনের ২০ হাজারের অধিক গাছ কেটেছিল। পরে পরিবেশবাদীদের চাপের মুখে নিধন বন্ধ করে তারা। তবে স্থানীয় আরেক প্রভাবশালী এবার এই প্যারাবন ধ্বংসে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে আগুন। ইতোমধ্যে প্যারাবনের বড় একটি অংশ নিঃশেষ হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় হারুন বিন হাসেম, সাবেক ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিন ও আমীর হোসেনের নেতৃত্বে এই ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কের রামুর খুনিয়াপালংয়ের পেঁচারদ্বীপের জাদুঘর এলাকায় এ ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। এতে নির্বিচারে কাটা পড়ছে বাইন ও কেওড়াসহ নানা প্রজাতির গাছ। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ায় ধ্বংস হয়ে গেছে জীববৈচিত্র্যসহ পাখির আবাসস্থল।
ইতোমধ্যে প্যারাবন দখল করে দেওয়া হয়েছে সীমানা পিলার। কিংশুক ফার্মস আনুমানিক ২০ একর এবং হারুন-কামাল সিন্ডিকেট পাঁচ একর জায়গা দখলে নিয়েছে। এ অবস্থায় জীববৈচিত্র্য ও পাখির আবাসস্থল ধ্বংসে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী ও পরিবেশবিদরা।
এলাকাবাসী জানান, প্রায় ২০ বছর আগে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের পশ্চিমে পেঁচারদ্বীপের জাদুঘর এলাকার পশ্চিম পাশে ভরাখালে প্যারাবন সৃজন করেছিল উপকূলীয় বনবিভাগ। সেটি এখন ঘন প্যারাবন, খালের জোয়ার-ভাটা, জীববৈচিত্র্য ও পাখির আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। জায়গাটি সরকারি ১ নম্বর খাস খতিয়ানের ছিল। কিন্তু এখন বন্দোবস্তমূলে খতিয়ানভুক্ত ব্যক্তিমালিকানাধীন কথা বলে সেখানে এই ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে।
খতিয়ানভুক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে কেনার কথা বলে স্থানীয় হারুন বিন হাশেম ও সাবেক ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে প্যারাবনটিতে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছেন। স্থায়ী দখলে গত ২ মার্চ সীমানা পিলার স্থাপন করেন তারা। এরপর গাছ নিধন শুরু করেন। বৃহস্পতিবার সকালে হারুন নিজে উপস্থিত থেকে স্থানীয় জাগির হোসেনকে দিয়ে কেটে ফেলা গাছের ডালপালায় আগুন ধরিয়ে দেন।
জাগির হোসেন বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘এলাকার কিছু মানুষ লাকড়ির জন্য কিছু গাছ কেটে নিয়ে গেছে। এর কিছু ডালপালা ও ঝোপঝাড় পরিষ্কার করার জন্য আগুন দেওয়া হয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হারুন দাবি করেন, ‘সেখানে আমার কোনও জমি নেই। প্যারাবনে সীমানা পিলার দিয়ে দখল করে গাছ কাটার বিষয়ে ও আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় আমি জড়িত নই।’ খবর বাংলাট্রিবিউন।
কিংশুক ফার্মস লিমিটেডের ম্যানেজার মশিউর রহমান লিটন দাবি করেন, ‘জমিগুলো খতিয়ানভুক্ত। আমার কোম্পানির কেনা সম্পত্তি। আমাদের জমিতে মৎস্য খামার করতে কাজ করছি। সরকারি কোনও প্যারাবন কাটা হয়নি।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম সোহেল বলেন, ‘স্থানীয় মানুষের কিছু বসতভিটার মালিকানা দাবি করে আসছিলেন হারুন। এ নিয়ে সমস্যা দেখা দিলে সীমানা পিলার বসানো হয়। প্যারাবনের কিছু অংশ কেটে ফেলেছে দেখেছি। তবে কে বা কারা কেটেছে জানা নেই। প্যারাবনে আগুন দেওয়ার খবর পাইনি।’
এ বিষয়ে খুনিয়াপালং ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) আবছার কামাল বলেন, ‘ব্যক্তিমালিকানাধীন কিছু জমিতে সীমানা পিলার দেওয়ার কথা শুনেছি। সেখানে প্যারাবন কাটা ও আগুন ধরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে জানি না।’
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, ‘দিনদুপুরে যেভাবে প্যারাবন দখল, হাজার হাজার গাছ নিধন করে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে সেটি উদ্বেগজনক। পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় এসব জীববৈচিত্র্য বিধ্বংসী কর্মকা- চালানো হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তা আরও উদ্বেগজনক। এসব পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকা- বন্ধ করে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ওই এলাকায় কিংশুক ফার্মস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে প্যারাবন কাটা, সীমানা দেয়াল দেওয়া ও স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে পরিবেশের ক্ষতি করার বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এর উত্তর পাশে প্যারাবন কেটে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে জানা নেই। এ বিষয়ে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’