নিজস্ব প্রতিনিধি, চকরিয়া »
চকরিয়ায় দশদিন আগে মারা যাওয়া বাবার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে বেপরোয়া গতির পিকআপের চাপায় একই পরিবারের চার ভাই ঘটনাস্থনে মারা যান। এ সময় তাদের এক বোন ও অপর তিন ভাই গুরুতর আহত হন। ঘটনার ১০ ঘণ্টা পর চমেক হাসপাতালে মারা যান গুরুতর আহত আরেক ভাই।
গতকাল মঙ্গলবার ভোর পাঁচটার দিকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা মালুমঘাট স্টেশনের অদূরে বনবিভাগের নার্সারি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। হতাহত সবার বাড়ি উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাটস্থ হাসিনাপাড়া গ্রামে। তাঁরা ওই গ্রামের মৃত সরোজ সুশীলের ছেলে-মেয়ে।
নিহতরা হলেন- অনুপম সুশীল (৪৫), নিরুপম সুশীল (৩৮), দীপক সুশীল (৩৬) ও চম্পক সুশীল (৩৬) ও স্মরণ সুশীল (২৮)। আহতরা হলেন- রক্তিম সুশীল (৩৫), প্লাবন সুশীল (২৪) ও বোন হীরা সুশীল (২৭)।
দুর্ঘটনায় আহত স্মরণ সুশীলের (৪২) অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় টানা ১০ ঘণ্টা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকে বিকাল তিনটার দিকে মারা যান তিনি।
এছাড়া আহত অন্যদের মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রিস্টান হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে একসঙ্গে একই পরিবারের পাঁচ ভাই নিহত এবং অপর দুই ভাই ও বোন আহত হওয়ার ঘটনায় তাদের পরিবারে চলছে আহাজারি। এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
দুর্ঘটনার কবল থেকে অক্ষত অবস্থায় ফিরেছেন সুরেশ চন্দ্রের মেয়ে মুন্নী সুশীল (২৮)। তিনি জানান, তারা মালুমঘাট খ্রিস্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালসংলগ্ন রাস্তা পার হওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় দ্রুতগতিতে একটি পিকআপ ভ্যান তাদের চাপা দেয়। দুর্ঘটনার সময় তিনি এক ভাইয়ের ধাক্কায় মাটিতে ছিটকে পড়েন। এতে তিনি বেঁচে যান। পিকআপের নিচে পড়ে তার চার ভাই যন্ত্রণায় চিৎকার করছিলেন। ওই অবস্থাতেই পিকআপের চালক গাড়ি চালিয়ে কয়েক ফুট সামনে এগিয়ে যান। কিন্তু অবস্থা বেগতিক দেখে গাড়িটি পুনরায় পেছনের দিকে এসে রাস্তায় পড়ে থাকা আটজনকে আবার চাপা দিয়ে কক্সবাজারের দিকে পালিয়ে যায়।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, দশদিন আগে তাদের বাবা সরোজ সুশীল মৃত্যুবরণ করেন। মঙ্গলবার ছিল তাদের বাবার ক্ষৌরকর্ম এবং বুধবার শ্রদ্ধানুষ্ঠান। ধর্মীয় রীতিনুযায়ী, মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে তারা সাত ভাই ও এক বোন ক্ষৌরকর্ম করতে বাড়ির অদূরে হাসিনাপাড়া রাস্তার মাথায় যায়।
সেখানে অনুষ্ঠান শেষে তারা সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় একটি বেপরোয়া গতির পিকআপ ট্রাক এসে তাদেরকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে চার ভাই নিহত ও অপর চার ভাই-বোন জন আহত হন।
তিনি আরও বলেন, আহত চারজনকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রিস্টান হাসপাতালে নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে স্মরণ সুশীলের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনিও সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। অন্যরা মেমোরিয়াল খ্রিস্টান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঘটনার খবর পেয়ে গতকাল সকালে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান নিহতের পরিবারের সদস্যদের সান্ত¦না দিতে তাদের বাড়িতে যান। এ সময় প্রথমে মারা যাওয়া চার ভাইয়ের প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেন। অপরদিকে নিহত ৫ ভাইয়ের সৎকার কাজ করার জন্য ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর।
মালুমঘাট হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.শাফায়েত হোসেন বলেন, পিকআপ চাপায় নিহতদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। চমেক হাসপাতালে মারা যাওয়া স্মরণ সুশীলের মরদেহ নিয়ে পরিবার সদস্যরা বাড়ি ফিরেছেন। চাপা দিয়ে পালিয়ে যাওয়া ঘাতক পিকআপটি অবশেষে গতকাল বিকালে চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের রংমহল এলাকা থেকে জব্দ করা হয়েছে। ওই পিকআপে পেঁয়াজ ও আলু ভর্তি রয়েছে। পিকআপের চালককে আটক করার চেষ্টা চলছে।