পিঁপড়া ও বাঘ

আশরাফ আলী চারু :

গ্রীষ্মকাল চলছে। বনের পিঁপড়াদের সামান্য অবসর নেই। যে যেখানে খাবার পাচ্ছে তাই সংগ্রহ করছে। লাইন ধরে ধরে খাবার সংগ্রহ করে এনে গর্তের গোডাউনে ভরে রাখছে। এসব দেখে সেই বনের এক বাঘ হাসতে লাগলো। বাঘের হাসি দেখে এক পিঁপড়া বাঘকে জিজ্ঞেস করলো, মামা, হাসছো যে!

এমনি আর হাসি। তোদের কা- দেখে আর বাঁচি না। টাটকা খাবার তোদের বুঝি ভালো লাগে না তাই না?

মানে?

বুঝলি না, তাই না? এই মনে কর যে খাবার সংগ্রহ করে আনছিস এগুলো তো রেখে দিবি, তাই না? এরপর ছয়মাস ধরে খাবি। তবে কি এগুলো পচা-বাসি খাবার হয়ে গেল না? না, তোদের ব্যস্ততা দেখে আর বাঁচি না। এই বলে আবার হাসতে লাগল বাঘ।

পিঁপড়া বাঘের সাথে আর কথা বাড়ালো না। সময়ের অপেক্ষায় রইল।

মাসকয়েক পরের ঘটনা। বাঘ পরিবারে নতুন অতিথি এসেছে। ফুটফুটে ছানাগুলো বাঘিনী কোথায় যেন লুকিয়ে রেখেছে। এ সময় বাঘ পরিবারে খুব অভাব। সারা বন ঘুরে কোথাও কোনো খাবার জোগাড় করতে না পেরে বাঘ তাঁর নিজের ফুটফুটে ছানাগুলোকেই খুঁজে বেড়াচ্ছে। কোথাও খুঁজে না পেয়ে পিঁপড়াটাকে জিজ্ঞেস করলো- সে জানে কি না?

এবার পিঁপড়া বলল- বাঘ মামা, আমাদের খাবার সংগ্রহ দেখে হাসি পায় তোমার। আমরা পচা-বাসি খাই বলে তোমার ঘেন্না লাগে! জানো মামা, আমরা সঞ্চয় করে রাখি অভাব যেন আমাদের ছুঁতে না পারে। আমরা শীতের সময় এ খাবার সবাই মিলেমিশে খাই। শীত থেকে নিজেদের বাঁচাই। পৃথিবীর কোনো প্রাণীই আমাদের মতো দীর্ঘ মিলিয়ন মিলিয়ন বছর বাঁচতে পারেনি শুধু নিয়ম না মানার কারণে। খুব তো অহংকার করেছিলে, আজ ক্ষুধা নিবারণের জন্য নিজের ছানাদের খুঁজে বেড়াচ্ছ। ছি, মামা ছি। পরের কাজকে নেতিবাচক না ভেবে নিজেকে শুধরাও।

ভাবতে শেখো। ইতিবাচক হতে শেখো।

পিঁপড়ার উচিত কথায় বাঘ লজ্জিত হলেও পিঁপড়াকে বুঝতে দিল না। পা বাড়াতে বাড়াতে বলে গেল, মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে তোদের  নিজেদের টিকিয়ে রাখার যুক্তিটি অমূলক নয়।