এবার ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেছেন, পাহাড় কাটা যাবে না। যথেষ্ট হয়েছে। পাহাড়ে আর একটি কোপও নয়। পাহাড় রক্ষায় কোনো ছাড় নয়। এই বিষয়ে জেলা প্রশাসন, সিডিএ, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং সিটি করপোরেশনকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।
গত ১৯ অক্টোবর চট্টগ্রামে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও এলআরডির যৌথ আয়োজনে ‘চট্টগ্রামের পাহাড় কাটা বিপর্যয় রোধে করণীয়’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী আরও বলেন, ইতোমধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় ল্যান্ড জোনিং কার্যক্রম শুরু করেছে। কোন পাহাড় কী অবস্থায় আছে তা নির্ধারণ করে পাহাড় রক্ষা করতে হবে। আমি ক্লিয়ারলি বলতে চাই পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। আমাদের আরও বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০১০ (সংশোধিত)-এ পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং এটি আমলযোগ্য অপরাধ। তারপরও একদিনের জন্যও পাহাড় কাটা বন্ধ হয়নি কোথাও। স্বাধীনতার পর ১৯৭৬ সাল থেকে পরবর্তী ৩২ বছরে চট্টগ্রাম নগর ও আশপাশের ৮৮টি পাহাড় সম্পূর্ণ এবং ৯৫টি আংশিক কেটে ফেলা হয়। এক গবেষণায় উঠে এসেছে, ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচ থানা এলাকায় পাহাড় ছিল ৩২.৩৭ বর্গকিলোমিটার, যা ২০০৮ সালে কমে দাঁড়ায় ১৪.০২ বর্গকিলোমিটারে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এ স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা-সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করা যাবে না।
এই সভায় বেলার প্রধান নির্বাহী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এই বিষয়ে ভূমিমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, আমরা এই সভায় আপনার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আশা করি। পাহাড় কাটায় শাস্তি হয় না। এটা প্রতিষ্ঠিত। পাহাড় কাটায় তাৎক্ষণিক শ্রমিকদের গ্রেপ্তার করা হয়। মালিকরা ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে যায়। এ সময় মন্ত্রী বলেন, একটা ভবন ভেঙে গেলে তা নির্মাণ করা সম্ভব। একটি খাল ভরাট হয়ে গেলে সেটাও খনন করা সম্ভব। কিন্তু পাহাড় বানানো সম্ভব নয়। পাহাড়, নদী ও সমুদ্রের মিলন চট্টগ্রাম এই প্রবাদ আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক বলেন, চট্টগ্রামের অবশিষ্ট পাহাড়গুলোর সমন্বিত জরিপ করা হবে। আয়তন উচ্চতা ইত্যাদি জরিপ করে দুই মাসের মধ্যে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসকের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাতে চাই। তাতে নির্বিচারে পাহাড় কাটা কিছুটা কমতে পারে।
প্রবন্ধকার প্রফেসর ড. কামাল হোসাইন তাঁর প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, ‘এক সময় এ নগরীতে ছোট বড় প্রায় ২০০টি পাহাড় ছিল। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ১২০টি পাহাড়।’
কাজেই বোঝা যাচ্ছে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ। এখন থেকে কঠোর না হলে বাকি পাহাড়গুলো রক্ষা করা সম্ভব হবে না। অতীতে পাহাড় রক্ষায় অনেকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এমনকি উচ্চ আদালতও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন কিন্তু বন্ধ হয়নি পাহাড় কাটা। তাই এবার দেখতে চাই ভূমিমন্ত্রীর নির্দেশ কতটুকু বাস্তবায়িত হয়।
এ মুহূর্তের সংবাদ


















































