আরমান খান, লংগদু (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
পাহাড়ের অনুর্বর পাথুরে মাটিতেও বিদেশী ফল চাষে সফলতা অর্জন করলেন কৃষক নাজমুল হোসেন। বছর দুই আগে নরসিংদী জেলার শিবপুরের সফল চাষী জামাল উদ্দিনের নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করেন নাজমুল। এরপর বাড়ীর পাশের পাহাড়ি জমিতে যত্ন নিয়ে চারাগুলো রোপণ করেন। দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তার গাছগুলোতে ফলন আসতে শুরু করেছে।
পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদুতে কৃষক নাজমুল হোসেনের এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগের বিষয়ে জানতে সম্প্রতি উপজেলা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে বগাচত্বর ইউনিয়নের মহাজনপাড়া গ্রামে তাঁর বাগানে গিয়ে কথা বলেন এই প্রতিবেদক।
নাজমুল জানান, আমাদের ইউনিয়নে বেশিরভাগ মানুষই কৃষি কাজের সাথে জড়িত। বিশেষ করে রেডলেডি পেঁপে, আম, নানা ধরনের সবজি চাষ করেন এখানকার কৃষকরা। আমিও আসবাবপত্র ব্যবসার পাশাপাশি ফলের বাগান করার উদ্যোগ নেই। প্রতিবেশি একজন কৃষি উদ্যোক্তা আবু তালেব ভাই আমাকে রামবুটান চাষের পরামর্শ দেন। আমি ইউটিউব দেখে এই বিদেশি ফল চাষ সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেই। পরে নরসিংদী থেকে ৩৫টি চারা সংগ্রহ করি। প্রতিটি চারা কিনতে খরচ হয়েছে তিন হাজার টাকা হারে। এরপর বাড়িতে আনতে আরো প্রায় পনেরো হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। যেহেতু দামি চারা তাই খুব যত্ন নিয়ে চারাগুলো রোপণ করি এবং নিয়মিত দেখভাল করতে থাকি।
এত দামি ফলের আবাদ করেছি শুনে অনেকেই আমাকে পাগল বলতো। অনেকে তো আমার নামই দিয়েছে রামবুটান নাজমুল। আমি শুধু প্রার্থনা করতাম যাতে আমার চারাগুলোর কোনো ক্ষতি না হয়। এভাবেই প্রায় দুই বছরের কিছু কম সময় লেগেছে ফলন আসতে। এখন প্রায় সব গাছেই ফলন এবং ফুল চলে এসেছে। আমার এই রামবুটান ফল বারোমাসি জাতের। সারা বছরই গাছে ফলন থাকবে। বর্তমান বাজারে এক কেজি রামবুটানের মূল্য একহাজার থেকে বারোশত টাকা। তবে আমি এখনো কোনো ফল বিক্রি করিনি। আমার বাগানের রামবুটান প্রতিবেশিদের মাঝে বিতরণ করেছি। কারণ এটা বিদেশি ফল এবং প্রতিবেশিরা সকলেই আমাকে সহযোগিতা করেছে। আশা করছি মাস খানেক পর আরো কিছু গাছের ফল পরিপক্ক হবে। তখন ফল বিক্রি করতে পারবো।
স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা আবু তালেব জানান, আমি শিক্ষকতার পাশাপাশি ফল চাষে খুবই আগ্রহী। আমার বাড়িতে সব ধরনের ফলের গাছ রয়েছে। আমার অনেক বন্ধুরা মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে থাকেন। তারাই মুলত আমাকে পরামর্শ দিলেন এই ফল চাষ করতে। পাহাড়ি এলাকায় এই ফল চাষের খুব সম্ভাবনা রয়েছে। আমার পৈত্রিকবাড়ি নরসিংদী হওয়াতে সেখান থেকেও জানতে পারি এই ফলের বানিজ্যিক সম্ভাবনার কথা। এরপর আমি কয়েকজনকে পরামর্শ দেই রামবুটানের চাষ করতে। তাদের মধ্যে একমাত্র নাজমুল হোসেন রামবুটান চাষে আগ্রহী হয়। এরপর আমি তাকে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছি। তার সবগুলো গাছেই ভালো ফলন এসেছে এবং বানিজ্যকভাবেও তিনি লাভবান হবেন আশা করি।
এ বিষয়ে বগাচত্বর কৃষি ব্লকের দায়িত্বরত উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন জানান, রামবুটান একটি লিচু জাতীয় বিদেশি ফল। সারা বছর এই ফলের উৎপাদন হওয়াতে বাজারে এর চাহিদা আছে। এবং এটি সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল। পাহাড়ি এলাকায় এই ফলের আবাদের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। চাষিদের এই উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব সময় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, রামবুটান চাষ লংগদুতে এটাই প্রথম। যেহেতু কৃষক নাজমুল রামবুটান চাষে সাফল্য পেয়েছেন আশা করছি তাকে দেখে বাকিরাও এই ফল চাষে আগ্রহী হবেন। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতার পাশাপাশি এই ফলের বানিজ্যিক সম্ভাবনার বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে আসছি।