আহমেদ জুনাইদ, চবি »
১০ জুন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠিত হয় ঢাবির ভর্তি পরীক্ষা। পরীক্ষা দিতে আগের দিন রাতেই ক্যাম্পাসে চলে আসেন ভর্তিচ্ছু তামজিদ রহমান। তার পরিচিত ভাই তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল হলের পাশে এএফ রহমান হলে আসতে বলেন। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ এএফ রহমানের সামনে দাঁড়িয়েও তামজিদ হলটি চিনতে পারেন নি। তার মনে হয়েছে তিনি বিজয় হলের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। এমন পরিস্থিতির শিকার শুধু তামজিদ হননি। প্রথম দেখাতে অনেকেই এএফ রহমান হল কে বিজয় হল ভেবে ভুল করেন। মূলত যত্রতত্র ‘বিজয়’ লিখা চিকার কারণে পরিচয়ই বদলে গেছে এই হলের।
জানা যায়, এই হলে অবস্থান করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপগ্রুপ বিজয়ের কর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে বগিভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও তা মানতে দেখা যায় না তাদের। উল্টো হলে নিজেদের দখল এবং আধিপত্য জানান দিতে দেয়াল জুড়ে মারা হয়েছে এসব চিকা। কিন্তু অপরিকল্পিত এবং যত্রতত্র মারা এসব চিকা নষ্ট করছে হলের সৌন্দর্য। এমনকি ছাত্রলীগের অনেক কর্মীই এভাবে চিকা মারাকে বাড়াবাড়ি হিসেবে দেখছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এফ রহমান হলের এক ছাত্রলীগ কর্মী সুপ্রভাতকে জানান, অনেক হলেই চিকা আছে। কিন্তু আমাদের হলের মতো এতো বাজেভাবে কোথাও চিকা মারা হয় নি। এসব ব্যাপারে নেতাদের সঠিক দিকনির্দেশনা না থাকায় কর্মীরা যেখানে ইচ্ছা সেখানে চিকা মেরেছে।
মূলত এই চিকা মারা বা হল দখলের মূলে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক রাজনীতি। চবিতে ছাত্রলীগের উপগ্রুপ রয়েছে ১০ টি।
এর মধ্যে উপগ্রুপ বিজয়ের দখলে রয়েছে সর্বোচ্চ তিনটি হল- এএফ রহমান, আলাওল এবং সোহরাওয়ার্দী হল; সিক্সটি নাইনের দখলে শাহজালাল হল; সিএফসির দখলে শাহ আমানত হল; এছাড়া শহিদ আব্দুর রব হলে থাকেন বাংলার মুখ, ভিএক্স ও কনকর্ডসহ অন্যান্য গ্রুপের অনুসারীরা।
পাশাপাশি সূর্য সেন হলে রয়েছে এপিটাফ গ্রুপের অনুসারীরা। প্রতি বছর নতুন শিক্ষার্থী আসলে উপগ্রুপগুলো ব্যস্ত হয়ে পড়ে হলে শিক্ষার্থী উঠানোর কাজে। যেই হলে যতো বেশি শিক্ষার্থী উঠানো যাবে সেই হলের নিয়ন্ত্রণাধীন গ্রুপ ততো বেশি কর্মী পাবে। ক্যাম্পাসে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে পারবে। তাই হলের নিয়ন্ত্রণ হাতে রাখতে চায় প্রত্যেকটি গ্রুপ। আর এই নিয়ন্ত্রণ এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রায়ই সংঘর্ষে জড়ায় তারা। গত এক বছরে ক্যাম্পাসে প্রায় ২৪ বার সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগ। এতে আহত হয় ৬০ এর অধিক কর্মী।
এ বিষয়ে বিজয় গ্রুপের নেতা ও ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক নজরুল ইসলাম সবুজ বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন থেকে বগি ভিত্তিক রাজনীতি চর্চা হয়ে আসছে। আমরা বগিভিত্তিক রাজনীতির পক্ষে নয় তবুও হলগুলোর দেয়ালে কর্মীরা হয়তো তাদের আবেগ থেকে চিকা মেরেছে। সেটা শুধু আমাদের গ্রুপ না প্রত্যেক গ্রুপের কর্মীরা এটা করে থাকে। যদি এএফ রহমান হলের বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আপত্তি থাকে সেক্ষেত্রে বিষয়টা আমরা গুরুত্বের সাথে দেখবো।
শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেল জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে বগি ভিত্তিক রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু অনেক গ্রুপের নেতারাই বিষয়টি মানতে চান না। তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে কে আমরা জানিয়েছি। হলগুলোতে যত্রতত্র এসব চিকা দেখার পর আমরা প্রশাসনকে বলেছিলাম এগুলো মুছে দেওয়ার জন্য। কিন্তু প্রশাসন এতদিনেও কেন এ বিষয়ে নীরব,তা বুঝতে পারছি না।
এএফ রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. কাজী এসএম খসরুল আলম কুদ্দুসী বলেন, হলের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কিছুদিন আগে আমরা পুরো হলটি পরিস্কার করি। কিন্তু পরদিনই দেখি দেয়ালে এভাবে চিকা মারা। ব্যাক্তিগতভাবে আমার কাছে বিষয়টি বাজে লেগেছে। যেহেতু এখানে ছাত্র সংগঠনগুলোর চিকা মারা হয়েছে, তাই তাদের নেতাদের বিষয়টি দেখা উচিত। এছাড়া আমি একা চাইলে তো হবে না, চিকা অপসারণ করতে প্রশাসনেরও সহযোগিতা প্রয়োজন। সর্বোপরি হলের সৌন্দর্য রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার।