সুপ্রভাত বিনোদন ডেস্ক »
গত ৫ আগস্ট পরীমণি গ্রেফতারের মাত্র ২ দিনের মাথায় (৭ আগস্ট) তড়িঘড়ি করে সংবাদ সম্মেলন করে তার সদস্যপদ স্থগিত করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। এরপর বাংলা ট্রিবিউনের কাছে সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান দাবি করেন, এটা তার একক সিদ্ধান্ত নয়। এতে যুক্ত আছেন জ্যেষ্ঠ শিল্পী আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চন, আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, সোহেল রানাসহ সবাই।
তিনি বলেন, ‘শিল্পী সমিতির সিদ্ধান্ত জায়েদ খান একা নেন না। মিশা সওদাগরও না। পরীমণির বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটা কমিটির ২১ জন সদস্যের। এমনকি আমরা আমাদের সিনিয়র শিল্পী আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চন, উজ্জ্বল, সোহেল রানাসহ সবার সঙ্গে কথা বলে নিয়েছি।’
তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উল্টো কথা। বরং সিনিয়রদের নাম ব্যবহার করে অসত্য তথ্য দিয়েছেন তিনি। সেদিনের সংবাদ সম্মেলনে বেশিরভাগ জ্যেষ্ঠ শিল্পীর মতের প্রতিফলন হয়নি। এমনকি নায়ক আলমগীরের সঙ্গে যোগাযোগই করেনি সমিতির কেউ-ই।
বাংলা ছবির একসময়ের দর্শকনন্দিত এই নায়ক বেশ অপমানিতও বোধ করেছেন। বলেন, ‘এটা মোটেও ঠিক হয়নি। এটা সাম সর্ট অব সিনিয়রদের সঙ্গে বেয়াদবি করা। তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ না করে আমার নাম ব্যবহার করেছে। আর আমি তো তাদের উপদেষ্টা কমিটিতে নেই। আমার নাম কেন ব্যবহার করা হলো জানি না।’
অন্যদিকে, ইলিয়াস কাঞ্চন ও উজ্জ্বল যে মত দিয়েছিলেন তা অগ্রাহ্য করে সমিতি। তাদের পরামর্শ ছিল, পরীমণির সদস্যপদ স্থগিত করাটা এখনই জরুরি নয়, সবকিছু দেখে-শুনে সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার।
তবে জ্যেষ্ঠদের মধ্যে একজনই ছিলেন ব্যতিক্রম, ড্যাশিং হিরো সোহেল রানা বলে কথা! পরীমণির সদস্যপদ স্থগিতের পক্ষে মত দেন তিনি। তার মতে, মদসহ এমনভাবে আটক হওয়াটা এটি শিল্পী ও শিল্পের অপমান।
পুরো বিষয়টি নিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মিশা সওদাগর আমাকে ফোন দিয়েছে। কিন্তু পরে যে কথাগুলো এসেছে এগুলো কিছুই আমি বলিনি। আর তাকে কী বলেছি- তা আর বলতে চাই না।’
বিষয়টি নিয়ে তিনি বেশ ক্ষুব্ধ। কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়েন।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদস্যপদ স্থগিতের বিষয়ে তিনি নিষেধ করেছিলেন। তার ভাষ্যটা ছিল এমন, ‘একজন শিল্পীর নামে মাত্র অভিযোগ এসেছে। কোনও কিছুই প্রমাণিত হয়নি। অভিযোগ যখন প্রমাণিত হয়নি, কী কারণে তোমরা সদস্যপদ স্থগিত করবা? স্থগিত করাটা ঠিক হবে না।’ পরে সংবাদ সম্মেলনের আগে সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর ইলিয়াস কাঞ্চনকে ফোন করে জানান, তারা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন।
প্রায় একই ধরনের বক্তব্য ছিল চিত্রনায়ক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বলের। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘যে কোনও অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী কমিটির কাছে তো সিদ্ধান্ত নেওয়ার কর্তৃত্ব আছে। তবে আমি কোনও পক্ষে মত দেইনি। আমার মনে হয়েছে এতে তাড়াহুড়ো করার কিছু নাই। বলেছি, গো স্লো (ধীরে চলো)। ধীরে চলো, দেখো কী ঘটে। কিন্তু সেটা তো আর হলো না।’
কমিটির কোনও বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিষয়ে সিনিয়র শিল্পীদের এমন নাম ব্যবহার করা যায় কিনা- জানতে চাইলে আলমগীর বলেন, ‘এটা মোটেও ঠিক হয়নি। অন্তত আমার সঙ্গে কথা না বলে আমার নাম ব্যবহার করেছে তারা। বিষয়টি অনলাইনে (বাংলা ট্রিবিউনে) দেখার পর মিশার সঙ্গে আমার কথা হয়। আমি বলেছি, এটা ঠিক হয়নি।’
এদিকে পরীর সদস্যপদ সাময়িকভাবে স্থগিত করার ঘোষণার দিন বলা হয়েছিল সমিতির ‘ভাবমূর্তি’ রক্ষার্থে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সঙ্গে এটাও জানান, প্রয়োজনে সহকর্মী হিসেবে পরীর পাশে থাকবেন তারা। চাইলে আইনগত নানা সহযোগিতা নিয়ে পরীর পাশে দাঁড়াবেন।
তবে আটক ও গ্রেফতারের ২০ দিন পার হলেও রাজপথ, আদালত বা জেলগেটে দেখা মেলেনি সমিতির কোনও নেতার।