নিজস্ব প্রতিনিধি, পটিয়া »
দুই সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম জেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় আরেক দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। এর মধ্যে একটি পটিয়া উপজেলায় ও অন্যটি পার্শ^বর্তী চন্দনাইশ উপজেলায়। বরকল সেতুটি বঙ্গবন্ধু টানেলের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। এ সেতু দুটির ফলে এ অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বহুমুখী অর্থনৈতিক দ্বার খুলবে। পাল্টে যাবে সামগ্রিক চেহারা। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের। কমবে বেকার সমস্যা এবং বদলে যাবে মানুষের ভাগ্য। বহুল প্রত্যাশিত পটিয়া কালারপোল অহিদিয়া আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু সেতু ও চন্দনাইশ বরকল সেতু দুটি গতকাল সোমবার সকালে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন।
সকাল ১০টায় গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটিয়ার সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর পটিয়া কালারপোল সেতু, চন্দনাইশ বরকল সেতুসহ ১০০টি সেতুর ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় নির্মিত সেতুর মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রামের এ দু’টি।
সেতুগুলোকে স্থানীয়রা ‘মিনি পদ্মা সেতু’ হিসেবে দেখছেন। উদ্বোধনের আগে সকাল থেকে উপজেলার ১৭ ইউনিয়ন ও পটিয়া পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। পটিয়া কালারপুল সেতুর দুইপাড়ে বিভিন্ন রঙের ব্যানার, ফেস্টুন, সেতু এলাকায় গেইট নির্মাণ করে প্রশাসনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্থানীয়রা উৎসবে মেতে উঠেন।
পটিয়া উপজেলায় কালারপোল সেতু উদ্বোধনে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপি, মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপি, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, সাবেক সাংসদ চেমন আরা তৈয়ব, পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতিকুল মামুন, পটিয়া পৌরসভা মেয়র আইয়ুব বাবুল, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাকিবুল ইসলাম, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিক রহমান, পটিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) রেজাউল করিম মজুমদার, পরিদর্শক (তদন্ত) রাশেদুল ইসলাম।
সওজ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পটিয়া উপজেলার শিকলবাহা খালের উপর রয়েছে পটিয়া কালারপোল অহিদিয়া আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু সেতু। খালের পশ্চিম পাড়ে কর্ণফুলী উপজেলা ও পূর্ব পাড়ে পটিয়া উপজেলা। দুই উপজেলার মানুষ ছাড়াও পাশর্^বর্তী বোয়ালখালীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের চলাচলের সহজ হয়েছে। সেতুটি পাকিস্তান আমলে সেতুটি কংক্রিটের ছিল। ২০০৭ সালে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের কার্গো জাহাজের ধাক্কায় সেতুটি খালে পড়ে যায়। এরপর ২০১৪ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) অর্থে একটি বেইলি সেতু নির্মাণ করলেও ২০১৫ সালে তা পুনরায় ভেঙে যায়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে ব্রিজের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এতে রানা বিল্ডার্স ও হাসান বিল্ডার্স নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কালারপুল সেতুর টেন্ডার গ্রহণ করে। সওজ কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সালে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ দেয়। প্রায় ১৮০ দশমিক ৩৭৩ মিটার দীর্ঘ ও ১০ দশমিক ২৫ মিটার প্রস্থের এ সেতুর উভয় পাশে ৫৫০ মিটার সংযোগ সড়ক ইতোমধ্যে নির্মাণ হয়েছে। সেতুটি বাংলাদেশ সরকারের ২৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।
পটিয়ার সেতু এলাকায় রয়েছে শিকলবাহা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, পোশাক শিল্প কারখানা, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডসহ বেশ কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। সেতুটির পূর্বাংশ কর্ণফুলী টানেলে সংযোগ সড়কে এবং পশ্চিমাংশ মইজ্জারটেক হয়ে চট্টগ্রাম নগরের সঙ্গে সংযুক্ত এবং মইজ্জারটেক-বোয়ালখালী-কানুনগোপাড়া সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে।
অপরদিকে, পাশর্^বর্তী চন্দনাইশ উপজেলা ও আনোয়ারা উপজেলা সীমান্তে চানখালী খালের উপর নির্মিত বরকল সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি সংযুক্ত হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেলের সঙ্গে। প্রায় ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পিসি গার্ডার সেতুটি ১১৭ দশমিক ৩১ মিটার এবং প্রস্থ ১০ দশমিক ২৫ মিটার। ২০১৮ সালের ১০ ডিসেম্বর সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। চন্দনাইশ উপজেলার গাছবাড়িয়া থেকে আনোয়ারা উপজেলা হয়ে বঙ্গবন্ধু টানেলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য এমএ রহিম জানান, পটিয়া কালারপোল সেতুটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি সেতু। কর্ণফুলী নদীর শাখা শিকলবাহা খালের উপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। নতুনভাবে সেতু নির্মাণের আগে এলাকার লোকজনকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চড়ে এপাড় থেকে ওপারে চলাচল করতে হতো। ফলে লোকজন নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হতো। সেতু নির্মাণ ও উদ্বোধন শেষ হলে এলাকায় শিল্পকারখানা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি মনে করেন।
পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি ও কাশিয়াইশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম জানান, পটিয়া কালারপোর অহিদিয়া আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সেতু। এটি উদ্বোধনের ফলে পটিয়া, চন্দনাইশ, বোয়ালখালী, কর্ণফুলী ও নগরীর সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়েছে।