সুপ্রভাত ডেস্ক »
প্রধানমন্ত্রীর কথায় অবসর ভেঙে ফিরলেও নেতৃত্বে ফিরছেন না তামিম ইকবাল। বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের বাসভবনে বৃহস্পতিবার রাতে বৈঠকে বসেন তামিম। সেখানেই নিজের সিদ্ধান্তের কথা বিসিবি প্রধানকে জানান তিনি। সভা শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তা জানিয়ে দেন আনুষ্ঠানিকভাবে। আমরা অনেক আলোচনা করেছি। আমার সমস্যা, কী সমস্যা ছিল, কী হবে সামনে, সবকিছু নিয়ে। আমি একটা ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেটা উনাদেরকে বলেছি, কারণও জানিয়েছি… আজকে থেকে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব থেকে পদত্যাগ করছি।’
চোট কাটিয়ে মাঠে ফেরার পথে পুনবার্সন প্রক্রিয়ার জন্য এই মাসের শেষে এশিয়া কাপেও তামিম খেলতে পারবেন না বলে জানান বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস। এশিয়া কাপ শেষে দেশের মাঠে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে মাঠে ফিরতে পারবেন বলে আশা করছেন এই ওপেনার নিজে এবং বোর্ড।
পিঠের নিচের অংশের এই চোট নিয়ে অনিশ্চয়তাই নেতৃত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করেছে বলে জানান তামিম। সিদ্ধান্তের কথা এই বৈঠক থেকেই ফোনে জানিয়েছেন তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও। ‘ইনজুরি একটা ইস্যু। আমি ইনজেকশন দিয়ে এসেছি (লন্ডন থেকে)। কিন্তু ইনজেকশনটাও কিন্তু হিট অ্যান্ড মিসের মতো। আমার কাছে মনে হয়, দলের জন্য… সবসময়ই একটা কথা বলে এসেছি, সবকিছুর ওপরে আমি সবসময়ই দলের কথাই ভাবি। আমার মনে হয়, দলের কথা চিন্তা করে আমার সরে যাওয়াটাই হবে সবচেয়ে ভালো।’ ‘আমরা একসঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছি আজকে। আমার ম্যাসেজটা উনাকে দিয়েছি। উনিও বুঝেছেন এবং যা বলার আমাকে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলেছেন। তবে মূল ব্যাপার হলো এটি যে, আমার কাছে মনে হয়েছে, দলের ভালোর জন্য আমার অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাওয়া উচিত এবং মনোযোগ দেওয়া উচিত শুধু খেলোয়াড় হিসেবে ও যখনই সুযোগ আসবে, চেষ্টা করা উচিত নিজের সেরাটা দেওয়ার।’
গত ৫ জুলাই আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের যে ম্যাচের পর আচমকা অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন তামিম, সেই ম্যাচটিই হয়ে থাকল তার নেতৃত্বের শেষ ম্যাচ। চট্টগ্রামে ওই ম্যাচের পরদিন সংবাদ সম্মেলন ডেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায়ের ঘোষণা দেন তামিম। নাটকীয় ঘটনাপ্রবাহের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নির্দেশে’ পরদিনই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেন ৩৪ বছর বয়সী ক্রিকেটার। খবর বিডিনিউজ।
মাস দেড়েকের ছুটিও পান তিনি। তখন এই ব্যাটসম্যান বলেছিলেন, নেতৃত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন ছুটি থেকে ফেরার পর। তবে বিসিবি সভাপতি বলেছিলেন, তামিমকেই তারা নেতৃত্বে রাখতে চান। অবসর প্রত্যাহারের সপ্তাহ দুয়েক পর পরিবারের সঙ্গে কয়েক দিনের জন্য দুবাই যান তামিম। সেখান থেকে লন্ডনে যান পিঠের নিচের অংশের চোটের চিকিৎসার জন্য। লন্ডনে দুই দফায় ইনজেকশন নিয়ে তিনি দেশে ফেরেন। দুবাই যাওয়ার আগে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তামিম বলেছিলেন, দেশে ফেরার পর বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধানের সঙ্গে দেখা করে একান্তে কথা বলবেন। শেষ পর্যন্ত শুধু ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধানই নন, ক্রিকেট বোর্ডের প্রধানও থাকলেন সেই আলোচনায়। তামিম সেখানে জানালেন তার সিদ্ধান্ত। ওয়ানডেতে তামিম বাংলাদেশকে প্রথম নেতৃত্ব দেন ২০১৯ বিশ্বকাপের পরপর শ্রীলঙ্কা সফরে, নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা চোটের কারণে না থাকায়। পরের বছর মাশরাফি নেতৃত্ব ছাড়ার পর তাকেই দেওয়া হয় পাকাপাকি দায়িত্ব। কোভিডের কারণে যদিও তার নেতৃত্বের অধ্যায় শুরু হতে দেরি হয় কিছুটা। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে শুরু হয় তার পথচলা। সেটিই এবার শেষ হলো। সব মিলিয়ে ৩৭টি ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে জয় এসছে ২১টি, পরাজয় ১৪টি। ফলাফল হয়নি দুই ম্যাচে। সাফল্যের শতকরা হার ৬০ শতাংশ। বাংলাদেশকে ৫টির বেশি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেওয়া অধিনায়কদের মধ্যে সাফল্যের হারে তিনিই সফলতম।