নিজস্ব প্রতিবেদক »
কেনাকাটাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন। হাট-বাজার থেকে মাছ-মাংস কিংবা মুদির দোকান থেকে পণ্যসামগ্রী দোকানিরা পলিথিন ব্যাগে ভরে দেয়। ওই পলিথিনের ব্যাগ যাচ্ছে ডাস্টবিনে অথবা নালা-নর্দমা-খালে। চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ পলিথিন বর্জ্যে ভরে যাওয়া খালগুলো।
সরকারিভাবে নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে মাঝে-মধ্যে অভিযান পরিচালনা করা হলেও কমছে না পরিবেশ ক্ষতিকারক এটার ব্যবহার। এক্ষেত্রে অভিযানের পাশাপাশি ব্যক্তি সচেতনতা জরুরি বলে জানান জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার।
নগরের এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে চট্টগ্রাম শহরে প্রতিদিন তিন হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এরমধ্যে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ হিসাবে ২৪৯ টন হচ্ছে প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য। কর্ণফুলীর নাব্য সংকট কাটাতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং” নামের ৩০২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। এ সময় প্রকল্পের বেশিরভাগ সময় গেছে নদীর তলদেশে জমে ওঠা পলিথিন পরিষ্কার করতে। শুধু চাক্তাই ও রাজাখালী খালের মুখ থেকে প্রতিদিন গড়ে ২৫ টনের মতো পলিথিন উত্তোলন করা হয়েছে বলেও প্রকল্প সূত্রে জানা যায়।
শীত মৌসুমে নগরের সব খালগুলোতে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় খালের তলদেশের পলিথিনের স্তরগুলো ভেসে উঠে। খালের মাঝখানে, দু’পাশে এসব পলিথিনের স্তূপের কারণে বর্ষা মৌসুমে পানি চলাচল ব্যাহত হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এছাড়া বিভিন্ন হাটবাজার দেখা যায়, অবাধে পলিথিনের ব্যাগ করে তরিতরকারি, মাছ-মাংস থেকে শুরু করে সব ধরনের বাজার সামগ্রী বিক্রি করা হচ্ছে। এমনকি ছোটো পলি করে চা, রান্না করা তরকারিওতে।
রুহুল আমিন নামের এক দোকানি বলেন, বর্তমানে কাগজের প্যাকেট, ব্যাগের দাম অনেক বেশি। এক কেজি মালামাল বিক্রি করলে ৫ টাকা লাভ হয়। কাগজের প্যাকেট দিলে ১-২ টাকা চলে যায়। এখন ১০ টাকা দিয়ে ১০০ গ্রাম পলিথিন কিনলে ৫০ থেকে ৬০ কেজি মালামাল বিক্রি করা যায়।
অথচ সরকার ২০০২ সালে পলিথিন উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। আইনে বলা হয়েছে ‘সরকার নির্ধারিত পলিথিন সামগ্রী উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকরণে প্রথম অপরাধের দায়ে অনধিক ২ (দুই) বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ২ (দুই) লাখ টাকা অর্থদণ্ড (জরিমানা) বা উভয় দণ্ড এবং পরবর্তী প্রতিটি অপরাধের ক্ষেত্রে অন্যূন ২ (দুই) বছর, অনধিক ১০ (দশ) বছরের কারাদণ্ড বা অন্যূন ২ (দুই) লাখ টাকা, অনধিক ১০ (দশ) লাখ টাকা অর্থদণ্ড (জরিমানা) বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন অপরাধীরা’।
বিক্রি, বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের দায়ে অনধিক ১ (এক) বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড (জরিমানা) বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। ‘পরবর্তী প্রতিটি অপরাধের দায়ে অন্যূন ২ (দুই) বছর, অনধিক ১০ (দশ) বছরের কারাদণ্ড বা অন্যূন ২ (দুই) লাখ টাকা, অনধিক ১০ (দশ) লাখ টাকা অর্থদণ্ড (জরিমানা) বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন অপরাধীরা’।
পলিথিনের ব্যবহারে আইনের যথাযথ প্রয়োগের বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বনবিদ্যা ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, ‘পরিবেশ দূষণের দায়ে কল-কারখানাকে জরিমানা কিংবা নদ-নদী ও জলাশয় দূষণ বা দখলকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা আমরা দেখতে পাই। কিন্তু দুঃখের বিষয় পরিবেশ বিধ্বংসী পলিথিনের ব্যবহার রোধে আইনের প্রয়োগ তেমন আমরা দেখতে পাই না । এ কারণে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে বলে মনে করি।’
আরেকটা বিষয় হলো, পলিথিন ব্যবহার এটা যে অপরাধ তা অনেকে জানে না। এ জন্য সচেতনতারই বেশি দরকার, তবুও মনে করছি আইনের প্রয়োগটা বাড়াতে হবে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ হওয়াটা পরিবেশের জন্য খুবই দরকার।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, আমরা নিষিদ্ধ এই পলিথিন ব্যবহার বন্ধে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করেছি। পলিথিনের কারখানায় অভিযান চালিয়ে তাদের জরিমানা করা হয়েছে এবং বিভিন্ন বাজারেও আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। পলিথিন ব্যবহারের খারাপ দিকগুলো তুলে ধরে মানুষদের সচেতন করছি। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যেগেও পলিথিন ব্যবহার না করার জন্য বিভিন্ন প্রোগ্রামের আয়োজন করা হচ্ছে। মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পেলেই এটার ব্যবহার কমবে।