গাজীপুরে সংঘটিত হলেও সংবাদটি উদ্বেগজনক। আমাদের শিশুরা কেমন পরিবেশে বড় হচ্ছে, তারা কী দেখে, কী শিখে বড় হচ্ছে তা এখন গভীরভাবে ভাবাচ্ছে অভিভাবক ও সচেতন মহলকে। এবার শোনা গেল ‘অ্যালার্মিং’ একটি সংবাদ।
ফায়ার গেমসে আসক্ত হয়ে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে গাজীপুরের ছয় বছরের শিশু রাফিয়া মুনতাহা। পরে নিজেই আবার আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। এতে তার শরীরের ১২ শতাংশ পুড়ে গেছে। শিশুটি এখন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তার মা জিন্নাত জাহান সংবাদমাধ্যমকে জানান, তার মেয়ে নিজে নিজেই সার্চ করে ঘরের স্মার্টটিভি ও স্মার্টফোনে বিভিন্ন ওয়েব সিরিজের কার্টুন দেখে থাকে। সেখানে ফায়ার গেমসসহ অন্যান্য আরও অনেক কার্টুন দেখে থাকে। সে সব ওয়েব সিরিজের কার্টুনগুলোতে দেখা যায় নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে আবার নিভিয়ে ফেলে। কার্টুন তো কার্টুনই। ছোট শিশু না বুঝে সেসব কার্টুন দেখে চুলার সামনে গিয়ে তার শরীরের সুতির জামার এক অংশ তার দুই হাত দিয়ে ধরে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে আবার নেভানোর চেষ্টা করে কিন্তু নেভাতে পারে না। দাউ দাউ করে শরীরে আগুন ধরে যায়। পরে বাসার লোকজন তাকে জাপটে ধরে আগুন নিভিয়ে ফেলে। ততক্ষণে তার শরীরের অনেক অংশ পুড়ে যায়। রাফিয়া মুনতাহা নামের শিশুটি গাজীপুর নবারন বিদ্যাপীঠ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্লেতে পড়াশোনা করে।
বার্ন ইনস্টিটিউটের সহকারী পরিচালক সূত্রে জানা গেছে, শিশুটির শরীরের ১২ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এই ঘটনাটি একটি সতর্কবার্তা দিচ্ছে আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক এক করুণ পরিস্থিতির। ছয় বছরের একটি শিশুর হাতে আমরা স্মার্ট ফোন তুলে দিয়েছি (আসলে সেটা তার মা অথবা বাবার)। স্মার্ট টিভিতে সার্চ করে গেম দেখার সুযোগ করে দিয়েছি বা তার আব্দার মিটিয়েছি। এটার মধ্য দিয়ে এই শিশুর মনোজগৎকে আমরা কী অন্ধকার ও বিভ্রান্তির মুখে ঠেলে দিয়েছি। যখন শিশুর জন্য একটি খোলা আকাশের দরকার, প্রকৃতির সান্নিধ্যে বেড়ে উঠবার সময় তখন তার হাতে মোবাইল ও টিভির রিমোট ধরিয়ে দিয়েছি। আসলে আমরা বাবা-মায়েরা শিশুদের শিশুকালকেই হত্যা করেছি। আর এটা করতে গিয়ে শিশুদের ঠেলে দিয়েছি এক বিপজ্জনক ভবিষ্যতের দিকে। এটার দায় আমরা অভিভাবক এবং একই সঙ্গে সমাজবিদদেরকেও নিতে হবে। কারণ সময় থাকতে সতর্ক না হলে ভবিষ্যৎ আরও ভয়াবহ হতে পারে।
এ মুহূর্তের সংবাদ