নিজস্ব প্রতিবেদক »
কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই নিউমার্কেট ও স্টেশন রোডে অভিযান পরিচালনা করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। অভিযানে ফুটপাত থেকে সাত শতের বেশি হকারকে উচ্ছেদ করা হয়। দিনে উচ্ছেদ করে ফুটপাত মুক্ত করলেও রাতে পুনরায় ফুটপাতে বিকিকিনি করতে দেখা যায়। তবে চসিক ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কোন হুমকি ধামকি বা প্রলোভনে কাজ হবে না : মেয়র
গতকাল (বৃহস্পতিবার) ফুটপাত দখলমুক্ত করার ঘোষণার আট দিন পর অভিযান পরিচালনা করে চসিক। সাতজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযানে ৭০০ হকারকে উচ্ছেদ করার বিষয়টি নিশ্চিত করে সিটি মেয়রের একান্ত সচিব মো. আবুল হাশেম।
তিনি বলেন, ‘সাতজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান হয়েছে। এতে ২৫০ পুলিশ, ৩০ জন র্যাব, ২০০ শ্রমিক, বিপুল সংখ্যক চসিকের নিরাপত্তা ও আনসার সদস্য সহযোগিতা করেছেন। ফুটপাতে দোকান বসাতে বসাতে অনেকে সেখানে স্থায়ী অবকাঠামো গড়ে তুলেছিল। সেগুলোও উচ্ছেদ করা হয়েছে। আজকের অভিযানে সাত শতের বেশি হকারকে উচ্ছেদ করে ফুটপাত দখলমুক্ত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটও আমাদের সাথে আছেন। এখন পর্যন্ত কোনো বাধা আসেনি।’
জানা যায়, নগরীর সব ফুটপাত উদ্ধার করে পথচারীদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী গত ৩০ জানুয়ারি সংস্থাটির মাসিক সভায় ব্যাপক অভিযান চালানোর ঘোষণা দেন। অতীতে বিভিন্ন সময় মেয়ররা হকার উচ্ছেদে অভিযান চালালেও তীব্র বাধার মুখে পড়তে হয় তাদের। উচ্ছেদ হওয়া ফুটপাত বেশিদিন দখলমুক্ত রাখাও সম্ভব হয়নি। তবে এবার ফুটপাত দখলমুক্ত করা বিষয়ক পুরো পরিকল্পনা গোপন করে সিটি মেয়রের নির্দেশে গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অল্প সময়ের অভিযানে নিউমার্কেটের পুরো এলাকা ফুটপাত হকারদের উচ্ছেদ করে দখলমুক্ত করা হয়। তবে বেলা সোয়া ১টার পর উচ্ছেদের প্রতিবাদে পুরাতন রেলস্টেশন এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন হকাররা। মিছিল নিয়ে নিউ মার্কেট মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন তারা।
এ সময় ফুটপাত হকার সমিতির সভাপতি নুরুল আলম লেদু বলেন, ‘স্বাধীনতার যুদ্ধের পর থেকে ফুটপাতে ব্যবসা করছে হকাররা। আজ চসিকের এ অভিযানে ৫ থেকে ৬ হাজার হকারের রুটি রুজিতে আঘাত করা হয়েছে। হকারদের পেটে লাথি মেরেছে। মেয়র বলেছিলেন, তিনি হকারদের পুনর্বাসন ছাড়া ফুটপাত থেকে কোন হকারদের উচ্ছেদ করবেন না। আজ (বৃহস্পতিবার) তিনি হকারদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখেননি। সামনে রমজানের মাস। এসময় আমাদের ব্যবসায়ে আঘাত করে তিনি এক কলঙ্কজনক অধ্যায় সৃষ্টি করেছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।’
বিক্ষোভ সমাবেশের পরেই হকার সমিতির নেতারা চসিক কার্যালয়ে গিয়ে মেয়রের সঙ্গে দেখা করতে চেষ্টা করেন। এ বিষয়টি জানিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক লোকমান হাকিম বলেন, ‘আমরা এখনও মেয়রের সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করছি। মেয়রের সঙ্গে কথা বলে দেখি কি করা যায়।’
দুপুর থেকে সন্ধ্যা নাগাদ নিউমার্কেট এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, উচ্ছেদের পর কাটাতার দিয়ে ঘিরে রেখেছে চসিক। ভাসমান দোকান, ঝুপড়ি, চৌকি ও ভ্যানগাড়ি না থাকায় সড়কগুলো এখন আগের চেয়ে অনেকটা বড় মনে হচ্ছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কের পাশে, যেখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয় সেখানে কিছু ফল ও জুতোর দোকানিরা বসে আগের মতোই পণ্যবিক্রি শুরু করেন।
এ প্রসঙ্গে চসিকের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম জানান, ‘অবৈধ স্থাপনায় দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রাখবে। অভিযানের সময় বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সহায়তা করছেন। উচ্ছেদের পর এলাকাটি কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা হয়েছে। যাতে ফের দখল না হয়। এরপর চসিকের পক্ষ থেকে নজরদারিতে রাখা হবে।’
পুনরায় কিছু হকার ফুটপাতে বসে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিটি মেয়রের প্রটোকল অফিসার আজিজ আহমদ বলেন, ‘মেয়র মহোদয় সুন্দর একটি নগরী গড়ে তুলতে চান। এজন্য তার নির্দেশে ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে। তিনি চসিকে আরও কিছু ম্যাজিস্ট্রেটকে যুক্ত করতেও কাজ করছেন। সিএমপির কর্মকর্তাদের সঙ্গেও তিনি কথা বলেছেন। এ ব্যাপারে পুলিশও চসিককে পর্যাপ্ত সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে অভিযানের কোনো পরিকল্পনা তিনি কাউকে আগে থেকে জানাচ্ছেন না।’
অভিযান প্রসঙ্গে সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘নিউমার্কেট মোড়ের হকার উচ্ছেদ এক শ্রেণির চাঁদাবাজদের কারণে খুবই কঠিন। এ চাঁদাবাজদের কারণে মানুষ স্বস্তিতে হাঁটতে পারত না, সড়কে জ্যাম লেগে থাকত। আমি সাহস করে এবং নিজের উপর ঝুঁকি নিয়ে চট্টগ্রামের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছি। উদ্ধার হওয়া জায়গা রক্ষায় কাঁটাতারের বেড়াও দিয়েছি। পাশাপাশি উদ্ধার হওয়া জায়গায় নিয়মিত মনিটরিং চলবে। কোন হুমকি, ধামকি বা প্রলোভনে কাজ হবে না।’