
নিজস্ব প্রতিবেদক »
উৎস-এর উদ্যোগে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে তথ্য ভিত্তিক উদ্যোগ শেয়ার করার লক্ষ্যে একটি নলেজ শেয়ারিং সভা গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির আর্ট গ্যালারি হলে অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, গণমাধ্যমকর্মী, উন্নয়নকর্মী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। ‘কানেক্টিং ডটস: এক্সপোজিং ভাউ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উৎস’র নির্বাহী পরিষদ সদস্য শুভ্রা বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘সহিংসতা প্রতিরোধ শুধু আইন প্রয়োগের বিষয় নয়, বরং সামাজিক পরিবর্তনেরও একটি প্রক্রিয়া। এ ধরনের তথ্যভিত্তিক উদ্যোগ সমাজে সচেতনতা এবং আস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।’
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন উৎস’র নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা কামাল যাত্রা। তিনি বলেন, ‘সহিংসতার ঘটনাগুলো অনেক সময় আড়ালে থেকে যায়। আমরা চাইছি প্রতিটি ঘটনা তথ্য আকারে লিপিবদ্ধ হোক, বিশ্লেষণ করা হোক, যেন নীতি নির্ধারণ ও সাপোর্ট সেবায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়। ভাউ ট্র্যাকার এবং আমারকথা ডটকম সেই প্রক্রিয়াকে বাস্তব রূপ দিয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রকল্প পরিচিতি, ভাউ ট্র্যাকার ও অ্যানোনিমাস রিপোর্টিং টুলস নিয়ে প্রেজেন্টেশন দেন উৎস’র প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর মুহাম্মদ শাহ্ আলম । সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন উন্নয়ন সংস্থা মমতা’র ডেপুটি ডিরেক্টর স্বপ্না তালুকদার, সংশপ্তক এর নির্বাহী পরিচালক লিটন চৌধুরী, স্বপ্নীল ব্রাইট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মো. আলী সিকদার এবং সুপ্রভাত বাংলাদেশ-এর সহযোগী সম্পাদক কামরুল হাসান বাদল।
তাদের বক্তব্যে উঠে আসে প্রকল্পের স্থায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা। তারা পরামর্শ দেন, ভাউ ট্র্যাকার ও আমারকথা ডটকমকে সরকারি চলমান সেবা কাঠামোর সাথে যুক্ত করে দেওয়া হলে এর প্রভাব আরও বিস্তৃত হবে এবং প্ল্যাটফর্মগুলো টেকসই রূপ পাবে।
স্বপ্না তালুকদার বলেন, ‘ডিজিটাল রিপোর্টিং টুল নারীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করছে। তবে এ ধরনের উদ্যোগ দীর্ঘমেয়াদে চালু রাখতে হলে সরকারি সামাজিক সেবা ও আইনগত সহায়তা ব্যবস্থার সাথে যুক্ত করা জরুরি।’
লিটন চৌধুরী বলেন, ‘তথ্যভিত্তিক সাংবাদিকতা এবং সিএসও’র সমন্বয় আমাদের অ্যাডভোকেসিকে শক্তিশালী করেছে। এখন সময় এসেছে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে এই টুলগুলো একীভূত করার।’
মো. আলী সিকদার মন্তব্য করেন, ‘আমারকথা ডটকম’ নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে একটি আন্দোলনের অংশ হয়ে উঠতে পারে। এই আন্দোলনকে টেকসই করতে হলে সরকার, গণমাধ্যম ও সিভিল সোসাইটি একসাথে কাজ করতে হবে।
কামরুল হাসান বাদল বলেন, ‘গণমাধ্যম বহুদিন ধরে নারী নির্যাতনের খবর প্রকাশ করছে। কিন্তু সব খবর প্রকাশিত হয় না। ভাউ ট্র্যাকার সেই শূন্যতা পূরণ করছে। সরকার এই টুলকে গ্রহণ করলে তথ্যভিত্তিক নীতিনির্ধারণ আরও শক্তিশালী হবে।’
সভায় ইয়ুথ অ্যাম্বাসেডরদের পক্ষে অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন মাসুমা আকতার মিম। তিনি জানান, ‘আমাদের মতো তরুণরা এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সচেতনতা বাড়াতে এবং অন্যদের উৎসাহিত করতে পারছে।’
মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন উন্নয়ন কর্মী সৈয়দ মামুনুর রশীদ, সেজুঁতি মজুমদার জুঁই, মো. ফোরকান ও রেশমা শাহীন। তারা মত দেন, প্রকল্প শেষ হলেও এই প্ল্যাটফর্মগুলো যেন বন্ধ না হয়ে যায়, বরং সরকারি সেবা ও সামাজিক সংগঠনগুলোর সহযোগিতায় নিয়মিতভাবে চালু থাকে ।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন উৎস’র ব্যাবস্থাপক (অর্থ ও প্রশাসন) মো. আনোয়ার হোসেন, প্রোগ্রাম অফিসার রীপা পালিত, হিসাব কর্মকর্তা তাসলিমা আকতার এবং স্বেচ্ছাসেবক সাজ্জাদ হোসেন।