স্বাধীনতার অর্ধশতক পার হওয়ার পরেও দেশে কোনো সুষ্ঠু গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে উঠলো না। পর্যাপ্ত পরিমাণে বড় যানবাহন যেমন বাস সার্ভিস না থাকার কারণে ছোট ছোট যানবাহনে সয়লাব হয়ে আছে নগর। এ কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গুনতে হচ্ছে বেশি ভাড়া। অন্যদিকে বাড়ছে যানজট।
এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনা পোহাতে হয় নারীদের। নগরে নারীযাত্রীদের জন্য আলাদা বাস সার্ভিস না থাকায় সাধারণ বাসে পুরুষদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বাসে উঠতে হয়। অনেক সময় হেলপাররা নারী যাত্রীদের তুলতেও চায় না। তুললেও পর্যাপ্ত আসন না থাকায় দাঁড়িয়েও যেতে হয়। আর নারীদের জন্য যে কয়েকটি আসন সংরক্ষিত থাকে তা বসার জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়। সুপ্রভাতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যাত্রীসংখ্যা বাড়াতে ইঞ্জিনের ওপর ওয়েল্ডিং করে সংরক্ষিত আসন বানানো হয়েছে। যেখানে ইঞ্জিনের গরমে যুৎসই করে বসার উপায় থাকে না। ব্রেক কষলে ছিটকে পড়ার আশংকা থাকে সব সময়।
আবার কোনো বাসে এসব আসনে ট্রাকের টায়ার বিছানো থাকে। মাঝেসাঝে টায়ারের ওপর কাঠের তক্তাও ফেলে রাখা হয়। সিট না পেয়ে কেউ কেউ সেখানেই বসতে বাধ্য হয়। সংরক্ষিত এসব আসনে মুখোমুখি বসলে পা রাখাটাই হয় বড় দায়।
এর পাশাপাশি নানা হয়রানিরও শিকার হতে হয় নারী যাত্রীদের। দীর্ঘদিন বাসে আসা-যাওয়া করা এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘সংরক্ষিত আসনগুলো বসার উপযোগী কিনা সেটা কেউ তদারকির প্রয়োজন মনে করছে না। গ্যালারির সিট এগুলোর চেয়ে একটু ভালো হলেও সেখানে বসতে গেলে পাশের সিটের পুরুষযাত্রীটি কখনও ঘুমের ভান করে গা এলিয়ে দেয়। নয়তো পিছনের সিট থেকে পা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পর্শ করতে চায়। আবার সিটের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষযাত্রী নানা ছুতোয় শরীরের ঝুঁকে কোণঠাসা করে ফেলে। প্রতিবাদ করলে বলে, এখানে বসলে এমন হবেই। বাধ্য হয়ে প্রতিদিন এসব হয়রানি সয়ে ভার্সিটি যাওয়া-আসা করতে হয়।’
সরকারি নীতিমালা অনুসারে নারীদের জন্য সংরক্ষিতভাবে ৯টি আসন বরাদ্দের কথা থাকলেও বেশিরভাগ পরিবহনে থাকে ৫ থেকে ৭টি। সেই আসনগুলোও কখনও-কখনও পুরুষযাত্রীর দখলে চলে যায়। ফলে নারীদের সিট পেতে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। শুধু বাসে নয়, এখানে সর্বক্ষেত্রে নারীদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে না পারলে যতই বলি, যতই লিখি অবস্থার পরিবর্তন হবে না।
তবে তা ভেবে আমাদের বসে থাকলে তো চলবে না। মহিউদ্দিন চৌধুরী মেয়র থাকাকলে নারীদের জন্য আলাদা বাসের ব্যবস্থা করেছিলেন। কয়েকটি রুটে কিছুদিন চলার পর সার্ভিসটি বন্ধ হয়ে যায়। কেন বন্ধ হয়েছিল তার কারণ সিটি করপোরেশনই ভালো বলতে পারবে। এখন প্রয়োজনের তাগিদে আবার সে ব্যবস্থা চালু করা যায় কিনা তা বর্তমান মেয়র মহোদয় ভেবে দেখতে পারেন। একটি নারীবান্ধব গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা সময়ের চাহিদা।
এ মুহূর্তের সংবাদ