নাটকীয়তার অপেক্ষায় চট্টগ্রাম টেস্ট!

মুশফিকের সেঞ্চুরি ও ৫ হাজার রান

সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক »

একদিনে দুটি কীর্তি। বাংলাদেশ টেস্ট ইতিহাসে সবার আগে ৫ হাজারি ক্লাবের সদস্যপদের দিনটি মুশফিকুর রহিম রাঙিয়েছেন সেঞ্চুরিতে। তাতেই শ্রীলঙ্কার ৩৯৭-এর জবাবে বাংলাদেশ থেমেছে ৪৬৫ রানে। প্রথম ইনিংসে লিড নিয়েছে বাংলাদেশ ৬৮ রান। প্রথম ইনিংসের এই লিডকে জয়ে পরিণত করতে শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংসে স্পিন ত্রয়ী দিয়েছে চাপ। শেষ বিকেলে ৬১ মিনিটে শ্রীলঙ্কা ৩৯ রান যোগ করতে হারিয়েছে ২ উইকেট। বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘতম ইনিংস খেলেছে টাইগাররা। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস কাটিয়েছে ৭৯৩ মিনিট। সেশনের হিসেবে ৬টি কাটিয়েছে বাংলাদেশ দল। রাজিথার বাউন্সারে শরিফুল হাতে চোট পেয়ে রিটার্ড আউট না হলে বাংলাদেশের ইনিংসটা হতে পারত আরও লম্বা। এই টেস্টে আলোচিত মুশফিক করেছেন ৪৫৯ মিনিট ব্যাটিং। এক টেস্টে পাঁচ রানের মাইলস্টোনের হাতছানি ছিল তামিম-মুশফিকের সামনে। ৫ হাজার রান পূর্ণ করতে হলে চট্টগ্রাম টেস্টে করতে হতো তামিমকে ১৫২ রান।

কাজটা কঠিন কিন্তু মনে হয়নি তামিমের ব্যাটিং দেখে। বাংলাদেশের ইনিংসের শুরু থেকে তামিম যেভাবে আত্মবিশ্বাস নিয়ে ব্যাট করেছেন, তাতে শুধু প্রতীক্ষিত সেঞ্চুরিই নয়, ৬৬তম টেস্টে পূর্ণ করার সম্ভাবনা ছিল এই বাঁ হাতি ওপেনারের। তবে ৩৯ মাস পর টেস্টে ১০ম সেঞ্চুরি উদযাপনের ইনিংসটি যখন ১৩৩ পর্যন্ত এসেছে, আর মাত্র ১৯ রান হলে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ৫ হাজার রান পূর্ণ করবেন। প্রচন্ড তাপমাত্রায় ক্লান্ত হয়ে তৃতীয় তিনে গিয়েছিলেন বিশ্রামে। ফিরে ওই ১৯টি রান আর করতে পারেননি। ৪র্থ দিন লাঞ্চের পর রাজিথার এঙ্গেল ডেলিভারিতে বোল্ড হয়েছেন। তবে তামিমের প্রতীক্ষা বাড়লেও মুশফিক এই মাইলস্টোনে প্রথম বাংলাদেশি হয়ে রচনা করেছেন ইতিহাস। ৫ হাজার থেকে ৬৮ রান দূরে থেকে এ টেস্ট শুরু করেছিলেন মুশফিকুর রহিম। চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে ৫৩ রানে অবিচ্ছিন্ন থাকা মুশফিকুর রহিমের এই মাইলস্টোনে পা দিতে দরকার ছিল আর মাত্র ১৫টি রান। তামিমের মহানুভবতায় বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মধ্যে এই মাইলস্টোনে পা দেয়ার সুযোগটা হাতছাড়া করেননি মুশফিকুর রহিম। আসিথা ফার্নান্ডোকে শর্ট বলে গ্লান্স শট নিয়ে ২ রান করে পূর্ণ করেছেন এই মাইলস্টোন। ৮১ টেস্টে ১৫৯তম ইনিংসে যে মাইলস্টোনে পা দিতে মুশফিকুরের লেগেছে ১৭টি বছর।

প্রিয় ভেন্যু সাগরিকায় ৪র্থ দিনের প্রথম বলে রমেশ মেন্ডিজকে লং অনে খেলে সিঙ্গল নিয়ে শুরু করেছেন। ৬ষ্ঠ ওভারে এমবুলডুনিয়াকে প্রিয় সুইপ শটে বাউন্ডারি মেরে লক্ষ্য পূরণে সংকল্পের কথা জানিয়ে দিয়ে ছিলেন মুশফিক। সতর্ক ব্যাটিংয়ে দিনের প্রথম ঘণ্টায় করেছেন ১৪ রান। যার মধ্যে বাউন্ডারি মাত্র ১টি। খবর নিউজ জি ২৪ ডটকম’র

২০১৯ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুরে ডাবলের (২০৩*) পর সেঞ্চুরিহীন কেটেছে মুশফিকুরের লম্বা সময়। সময়ের হিসেবে আড়াই বছর, ইনিংসের হিসেবে ১৮টি। আসিথা ফার্নান্ডোর শর্ট বলে গ্লান্স শটে বাউন্ডারিতে ৮ম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন মুশফিক ৩৯৯ মিনিটে। যে ইনিংসে খেলেছেন মুশফিক ২৭০টি বল। সেঞ্চুরিতে ছিল তার মাত্র ৪টি বাউন্ডারি। চতুর্থ উইকেট জুটিতে মুশফিক-লিটন ২৭১ মিনিটে যোগ করেছেন ১৬৫ রান। ৪র্থ দিন লাঞ্চের পর কনকাশন সাব রাজিথ দিয়েছেন ব্রেক থ্রু। তার পর পর দুই বলে লিটন (১৮৯ বলে ১০ চার-এ ৮৮ রান), তামিম (২১৮ বলে ১৫ চার-এ ১৩৩) ফিরে যাওয়ার পর সাকিবও ইনিংস বড় করতে পারেননি। আসিথার শর্ট বলে উইকেটের পেছনে দিয়েছেন ক্যাচ (২৫)। ৪র্থ দিন বাংলাদেশ ১৪৭ রান যোগ করে হারিয়েছে শেষ ৭ উইকেট। মাইলস্টোন ম্যাচে সেঞ্চুরি করে থেমেছেন মুশফিক এমবুলডুনিয়ার বলে লেগ স্ট্যাম্পে বলের আঘাতে বোল্ড হয়ে। ব্যাটিং সহায়ক পিচে শ্রীলঙ্কার দুই পেসার আসিথা (৩/৭২), রাজিথা (৪/৪০) ছড়িয়েছেন আলো। এই দিনে পিচে ধরেছে ফাটল। বল নিচু হয়ে আসছে স্ট্যাম্পের দিকে। পড়ন্ত বেলায় স্পিন খেলা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই শেষ ঘণ্টায় তাইজুল ছড়িয়েছেন দ্যুতি। সাকিবের বলে দিমুথ করুনারত্নে খেলেছিলেন মিড উইকেটে। তাইজুলের ডাইরেক্ট থ্রো-তে হয়েছেন ওসাডা ফার্নান্ডো রান আউট। দিনের শেষ বলে তাইজুলকে ফ্রন্ট ফুটে ডিফেন্স করতে যেয়ে এমবুলডিনিয়া হয়েছেন বোল্ড। দু’দল মিলে ২৪ ঘণ্টা ৪৬ মিনিট ব্যাট করার পর অবধারিত ড্র ধরে নিয়েছেন যারা, পঞ্চম দিনে নাটকীয় কিছু দেখার কথাও ভাবতে হচ্ছে তাদের।