হুমাইরা তাজরিন
ফুলের সাথে যার সখ্য পাপের সাথে তার আড়ি। কারণ ফুল পবিত্রতার প্রতীক। সেই ফুল যখন ফেরি হয় ফুলের মতোই নিষ্পাপ কোনো শিশুর হাতে তা না কিনে আর উপায় কোথায়? আবার সেই ফুল যদি হয় বর্ষার কদম তাহলে যেন আর কথায় নেই। নগরীর ২ নম্বর গেইট ফিনলে স্কোয়ারের সামনে গত ২ দিন যাবত কদম ফুল ফেরি করছে নয়ন ইসলাম নামের এক শিশু।
ফিনলে স্কোয়ার নগরীর ২ নম্বর গেইট এলাকায় বিপ্লব উদ্যানের পাশে একটি বহুতল ভবন। যেখানে রয়েছে অভিজাত শপিং মল, সিনেপ্লেক্স, ফুডকোর্ট, এপার্টমেন্ট। রোজ সেখানে বহু মানুষের আনাগোনা। ভবনের নিচে বহু স্ট্রিটফুডসহ জামাকাপড়ের ভ্রাম্যমাণ দোকান দেখা যায়। ৮ জুলাই থেকে তাদের সাথে যোগ দিয়েছে ১০ বছর বয়সী নয়ন ইসলাম।
নয়নের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন এক সহযোগীসহ পূর্ব নাসিরাবাদের একটি গাছ থেকে কদম ফুল নিয়ে ফিনলের সামনে সে বিক্রি করে। রোজ সে ৫০-৬০ টি ফুল নিয়ে আসে। প্রতি ফুল ১০ টাকা দামে সে বিক্রি করে। এভাবে দুপুর ৩ টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তার সব ফুল বিক্রি হয়ে যায়। রোজ ৬ শ’ থেকে ৭শ’ টাকা তার বিক্রয় হয়। যে টাকা সহযোগীর সাথে সমান ভাগে ভাগ করে নেয় নয়ন। নয়নের বাড়ি গাইবান্ধা জেলায়। এখানে সে ষোলশহর রেলস্টেশনের কাছে মা ও ৯ বছর বয়সী বোনকে নিয়ে থাকে। নয়নের বাবা যক্ষা রোগে মারা গেছে ২০২১ সালে। এরপর থেকে বেশ টানাপোড়ন সংসারে। যদিও মা নূরজাহান বেগম বাসা বাড়িতে কাজ করেন কিন্তু তাতে ছোট এক বোনসহ তিনজনের সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যায়। তাই নয়ন কখনও পত্রিকা ফেরি করে ,কখনও ফুল ফেরি করে সংসারে খরচ বহনে মাকে সাহায্য করে থাকে। বিদ্যানন্দের অধীনে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করলেও বাবার মৃত্যুর পর সংসারের টানাপোড়নে তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। তবে আগামী বছরের জানুয়ারিতে পুনরায় স্কুলে ভর্তি হতে সে ইচ্ছুক।
৯ জুলাই বিকেলে ফিনলে স্কোয়ারের সামনে তাকে দেখা যায়। আধঘণ্টা সময়ের মধ্যে প্রায় ২০টি কদম ফুল বিক্রি হয়ে গেছে। কেউ কেউ ২টি কদম নিয়ে ১শ’ টাকার নোট দেয়ার পর নয়নের কাছ থেকে আর ফেরত চাইছেন না।
ফুল কিনতে এসে সাইদুল হক নামের একজন ক্রেতা বলেন, ‘কদম তো ভীষণ প্রিয় একটা ফুল। এর ঘ্রাণও খুব মিষ্টি। কিন্তু শহরে সচরাচর দেখা যায় না। ওর হাতে (নয়নের হাতে) ফুলটা দেখে নস্টালজিক হয়ে গেলাম। ও কষ্ট করে ফুলটা আমাদের হাতে তুলে দিচ্ছে; ওকে ১০টাকা দিলেও কম মনে হবে। এসব ফুল তো এখন তেমন দেখা-ই যায় না।’
নয়ন সুপ্রভাতকে বলে, ‘ প্রতিদিন তিন থেকে চার শ টাকা ফুল বিক্রি করে সেই টাকা আমার মাকে দেই। ঘর ভাড়া, বাজার সদাইয়ের অনেক খরচ আছে। আমার মাও বাসা বাড়িতে কাজ করে। কিন্তু তাতে চলেনা। তাই একেক সময় একেক কাজ করে ইনকাম করতে হয়। এ কাজে আমার পুরোটাই লাভ।’