সুপ্রভাত ডেস্ক »
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের রাখাইনে ফেরত পাঠাতে গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। প্রত্যাবাসন শুরু করতে সহায়ক মাধ্যমগুলোতেও প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু পাঁচ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। বরং ক্যাম্পগুলোতে প্রতি বছর জন্ম নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুদের সংখ্যাও বাংলাদেশের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন সংকট। খবর ঢাকা পোস্টের।
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের তথ্য বলছে, প্রতিবছর ক্যাম্পগুলোতে ৩০ থেকে ৩৩ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্মগ্রহণ করছে। ফলে বাড়ছে রোহিঙ্গা জনসংখ্যা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বর্তমানে ১২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এদের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা সদস্য রয়েছে, যারা বাংলাদেশে এসে পৃথিবীর আলো দেখেছে।
এমন পরিস্থিতিতে প্রত্যাবাসনের পাশাপাশি বাংলাদেশকে নজর রাখতে হচ্ছে রোহিঙ্গাদের পরিবার পরিকল্পনার দিকেও। এরইমধ্যে রোহিঙ্গা শিবিরে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে জাতিসংঘকে অনুরোধ করেছে ঢাকা। এ সংক্রান্ত একটি খসড়া দলিলও তৈরি হয়েছে। দ্রুতই এটি চূড়ান্ত করতে চায় ঢাকা।
ইউএনএইচসিআরের তথ্য বলছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৭২ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসে। চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৩ জন। এ জনসংখ্যার মধ্যে ১ লাখ ৯৬ হাজার ১২১টি পরিবার রয়েছে। এদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা শতকরা ৫২ শতাংশ। আর পুরুষের সংখ্যা শতকরা ৪৮ শতাংশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে-এটাই বাংলাদেশের প্রধান অগ্রাধিকার। আর এটি তারা (রোহিঙ্গা) ফেরত না যাওয়া পর্যন্ত চলমান থাকবে। প্রত্যাবর্তন না হওয়ার বিষয়টি যেমন উদ্বেগের, তেমনি রোহিঙ্গা জনসংখ্যা যে প্রতি বছর বাড়ছে সেটিও উদ্বেগের। যে কারণে রোহিঙ্গা শিবিরে পরিবার পরিকল্পনার বিষয়টিতেও জোর দেওয়া দরকার। সেজন্য জাতিসংঘের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে প্রচারণা বা কাজ চলমান আছে। তবে রোহিঙ্গাদের যে জীবনমান তাতে করে তাদের দিয়ে সহজে এ কাজে ফল পাওয়া যাবে না। এটা অনেক দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। যেমন উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের কথাই বলা যেতে পারে। বাংলাদেশে জন্ম নিয়ন্ত্রণে আজকের যে অবস্থান সেটা করতে দীর্ঘ সময় লেগেছে।
রোহিঙ্গা শিবিরে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে শুরু থেকে কাজ চলমান রয়েছে বলে দাবি করেছেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা-ইউএনএইচসিআরের ঢাকা অফিসের কর্মকর্তারা। এক কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গাদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে প্রচারণা বা কাজ চলমান আছে। তবে রোহিঙ্গাদের যে জীবনমান তাতে করে তাদের দিয়ে সহজে এ কাজে ফল পাওয়া যাবে না। এটা অনেক দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। যেমন উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের কথাই বলা যেতে পারে। বাংলাদেশে জন্ম নিয়ন্ত্রণে আজকের যে অবস্থান সেটা করতে দীর্ঘ সময় লেগেছে।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, শুরুতে পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে রোহিঙ্গাদের খুব নেতিবাচক ধারণা ছিল। নেতিবাচক আচরণ ছিল। আমরা দেখলাম ১১ লাখ রোহিঙ্গা আছে, তার সঙ্গে যদি প্রতি বছর ৩৩ হাজার করে বাড়তে থাকে তাহলে এটা কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে। এটা তো একটা দুশ্চিন্তার কারণ। এ কারণে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সিভিল সার্জন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অন্য যারা আছে সবার একটাই টার্গেট পরিবার পরিকল্পনা কীভাবে জোরদার করা যায় এবং আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করি। আমরা প্রত্যেক এনজিওকেও সেভাবে টার্গেট দেই। আমরা সরকারের দিক থেকে যারা আছি তারাও সেভাবে কাজ করছি। ডে বাই ডে এটা ইমপ্রুভ হবে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বর্তমানে পরিবার পরিকল্পনার কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে কক্সবাজার সিভিল সার্জন বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের কার্যক্রম বর্তমানে যতটুকু চলমান আছে, চেষ্টা করছি আরও ভালোভাবে জোরদার করার। প্রথম যারা এলো তারাতো এগুলো বুঝতোই না। তাদের মোটিভেট করা এত সহজ না। আমরা যদি আমাদের দেশের কথা চিন্তা করি, আমরাও পিছু হটার লোক না। চেষ্টা চালিয়ে যাব।
শুরুতে পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে রোহিঙ্গাদের খুব নেতিবাচক ধারণা ছিল। নেতিবাচক আচরণ ছিল। আমরা দেখলাম ১১ লাখ রোহিঙ্গা আছে, তার সঙ্গে যদি প্রতি বছর ৩৩ হাজার করে বাড়তে থাকে তাহলে এটা কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে। এটা তো একটা দুশ্চিন্তার কারণ। এ কারণে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সিভিল সার্জন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অন্য যারা আছে সবার একটাই টার্গেট পরিবার পরিকল্পনা কীভাবে জোরদার করা যায় এবং আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করি। আমরা প্রত্যেক এনজিওকেও সেভাবে টার্গেট দেই। আমরা সরকারের দিক থেকে যারা আছি তারাও সেভাবে কাজ করছি।
রোববার (২১ আগস্ট) রোহিঙ্গাবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের জানান, প্রতিবছর গড়ে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্মগ্রহণ করছে। আমরা সব মিলিয়ে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার উপস্থিতির কথা বলে আসছিলাম। প্রতিবছর ৩০ হাজার শিশুর জন্ম হিসেবে গত ৪ বছরে আরও ১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বেড়েছে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম জোরদার করার জন্য জাতিসংঘকে অনুরোধ করেছি। তারা শিগগিরই কাজ শুরু করবে। এ সংক্রান্ত একটি দলিলের খসড়া তৈরি হয়েছে। শিগগিরই এটি চূড়ান্ত করার তাগিদ দিয়েছি।
পররাষ্ট্রসচিব জানান, সম্প্রতি জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। তাকেও বলেছি, প্রতিবছর ৩০ হাজার শিশু জন্ম নিচ্ছে। এর ফলে রোহিঙ্গাদের জনসংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা থেকে প্রত্যাশিত সহায়তা না আসায় রোহিঙ্গাদের তহবিলে টান পড়েছে। গত মঙ্গলবার ইউএনএইচসিআর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, চলতি বছর বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য ৮৮১ মিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠনের পদক্ষেপ নিয়েছিল জাতিসংঘ। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই তহবিলে জমা পড়েছে মাত্র ৪২৬ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার, শতকরা হিসেবে যা জাতিসংঘের প্রস্তাবিত অর্থের মাত্র ৪৯ শতাংশ।
গত চার বছরে না হলেও চলতি বছরের শেষ নাগাদ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন শুরুর আশা করেছেন পররাষ্ট্রসচিব।
ইউএনএইচসিআরের তথ্য বলছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৭২ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসে। চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৩ জন। এ জনসংখ্যার মধ্যে ১ লাখ ৯৬ হাজার ১২১টি পরিবার রয়েছে। এদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা শতকরা ৫২ শতাংশ। আর পুরুষের সংখ্যা শতকরা ৪৮ শতাংশ।
প্রত্যাবাসনের অগ্রগতি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দুইবার প্রত্যাবাসনের খুব কাছাকাছি গিয়েও মিয়ানমারের কারণে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হয়নি। প্রত্যাবাসন শুরু করতে সম্প্রতি মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের সঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। নেপিডোর সঙ্গে কাজ করছে ঢাকা। রোহিঙ্গাদের ভেরিফিকেশন বা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া নিষ্পত্তির কাজ চলমান রয়েছে। চলতি বছরেই রোহিঙ্গাদের একটি দলকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা সম্ভব হতে পারে।
দুইবার প্রত্যাবাসনের খুব কাছাকাছি গিয়েও মিয়ানমারের কারণে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হয়নি। প্রত্যাবাসন শুরু করতে সম্প্রতি মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের সঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। নেপিডোর সঙ্গে কাজ করছে ঢাকা। রোহিঙ্গাদের ভেরিফিকেশন বা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া নিষ্পত্তির কাজ চলমান রয়েছে। চলতি বছরেই রোহিঙ্গাদের একটি দলকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা সম্ভব হতে পারে
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, পুরো সময় তাদের অবস্থান রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বদলে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা এবং রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার জবাবদিহি নিশ্চিত করাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। সঙ্গে ছিল রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার ভুরি ভুরি প্রশংসা আর আশ্বাস।
এদিকে, বিশ্বের বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা থেকে প্রত্যাশিত সহায়তা না আসায় রোহিঙ্গাদের তহবিলে টান পড়েছে। মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) ইউএনএইচসিআর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, চলতি বছর বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য ৮৮১ মিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠনের পদক্ষেপ নিয়েছিল জাতিসংঘ। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই তহবিলে জমা পড়েছে মাত্র ৪২৬ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার, শতকরা হিসেবে যা জাতিসংঘের প্রস্তাবিত অর্থের মাত্র ৪৯ শতাংশ।
জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান-জেআরপি তহবিলের গত ৪ বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রতিবছরই রোহিঙ্গা মানবিক তহবিলের পরিমাণ কমেছে এবং কোনো বছরই জেআরপি তহবিলের প্রয়োজনের শতভাগ পাওয়া যায়নি। ২০১৭ সালে জেআরপি তহবিলের ৭৩ শতাংশ পাওয়া গেছে, ২০১৮ সালে ৭২ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৭৫ শতাংশ, ২০২০ সালে ৬৫ শতাংশ এবং ২০২১ সালে ৭২ শতাংশ পাওয়া গেছে।
২০১৮ সালের নভেম্বর এবং ২০১৯ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। ওই সময় রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ফিরতে রাজি হয়নি রোহিঙ্গারা।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা।
আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।
২০১৮ সালের নভেম্বর এবং ২০১৯ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। ওই সময় রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ফিরতে রাজি হয়নি রোহিঙ্গারা।