সরেজমিন: চাক্তাই থেকে কালুরঘাট
যথাসময়ে অর্থ পাওয়াই বড় চ্যালেঞ্জ : সিডিএ
ভূঁইয়া নজরুল :
চান্দগাঁও থানাধীন হামিদচর। একসময়ের পরিত্যাক্ত ভূমি। যেখানে ছিল না মানুষের বিচরণ। কিন্তু এখন যদি কেউ এই এলাকায় যায় চোখে পড়বে বদলে যাওয়া দৃশ্যপট। কর্ণফুলীর তীরের বিশাল এই চরের মধ্য দিয়ে নির্মিত হচ্ছে সাড়ে আট কিলোমিটার দীর্ঘ ও চার লেনের সড়ক। এই সড়কের দুই প্রান্তে থাকবে দুই সেতুর ( কালুরঘাট ও শাহ আমানত) সংযোগ। আর এই সড়ক ঘেঁষে হামিদচরেই নির্মিত হচ্ছে দেশের একমাত্র মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়।
একটি সড়ক যে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে কিভাবে আন্দোলিত করতে পারে এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত রিং রোড কাম উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পটি। নির্মাণাধীন রাস্তার পাশের মানুষের অভিব্যক্তি ও তাদের উচ্ছ্বাস, বদলে যাবে পিছিয়ে পড়া এই এলাকাটি।
নির্মাণাধীন রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে কাজ দেখছিলেন পূর্ব বাকলিয়া বজ্রঘোনা এলাকার এনাম চন্দ্র সাহা। ৫৫ বছর বয়সী এ লোক বলেন, ‘এই সড়কটি বাস্তবায়ন হলে আমাদেরকে আর জোয়ারের পানিতে ডুবতে হবে না। এই যে দেখছেন স্লুইস গেট নির্মাণ হচ্ছে। এতে জোয়ারের পানি আটকে যাবে। একই সাথে যাতায়াত ব্যবস্থা অনেক সহজতর হবে।’
গত মঙ্গলবার এই রোডের কল্পলোক আবাসিক এলাকা প্রান্ত থেকে হামিদচর পর্যন্ত এলাকাটি সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রাস্তায় মাটি ভরাটের কাজ যেমন চলছে তেমনি স্ল্ইুস গেটগুলো নির্মাণের কাজও চলছে। একইসাথে ড্রামট্রাক দিয়ে দ্রুত গতিতে এক স্থান থেকে মাটি অপর স্থানে পরিবাহিত হচ্ছে। রোলার দিয়ে আবার চলছে মাটি চাপার কাজ। আরেকটি রোলার দিয়ে মাটি সমান করার কাজ। স্কেভেটর দিয়ে চলছে মাটি উত্তোলনের কাজ। অর্থাৎ মাটি উত্তোলন, পরিবহন এবং রাস্তা তৈরির কাজ সমান তালে চলছে।
কল্পলোক আবাসিক এলাকা ও পূর্ব বাকলিয়া চেয়ারম্যান ঘাটার মধ্যবর্তী এলাকায় দুটি স্ল্ইুস গেটের নিচের অংশের কাজ প্রায় শেষ। বজ্রঘোনা এলাকার স্লুইস গেটে কাজ চলছে। বলিরহাট এলাকায় ডোমখালী খালের মুখে একটি বড় স্লুইসগেট নির্মাণের কাজও এগুচ্ছে।
চান্দগাঁও বড়ুয়া পাড়া অংশে হামিদ চড়ে নির্মাণাধীন রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে ৬০ বছর বয়সী আবুল কাশেম বলেন, এ রোডটি বাস্তবায়ন হলে আমরা সহজে কালুরঘাট থেকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এলাকায় যাতায়াত করতে পারব। আর এখানে একটি মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠছে বলে এলাকার উন্নতি ঘটবে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অধীনে বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পের অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাশ বলেন, ‘এ পর্যন্ত ৪২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা ২০২২ সালের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগুচ্ছি।’
তিনি আরো বলেন, প্রকল্পটি একদিকে যেমন যাতায়াত ব্যবস্থায় যোগাযোগ রক্ষা করবে অপরদিকে বিশাল এলাকার মানুষকে জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করবে। এই প্রকল্পের আওতায় ১২টি খালের মুখে স্লুইস গেট বসছে। এতে জোয়ারের পানি আর নগরীতে প্রবেশ করতে পারবে না।
কিন্তু কালুরঘাট থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সাড়ে ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতার এই সড়কের সাথে মধ্যবর্তী কোনো সংযোগ থাকবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় একপাশে (হামিদচরে) থাকছে। এছাড়া কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকার দিকে একটি সংযোগ রাস্তা রাখা হচ্ছে। যেহেতু এটি মহাসড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হবে তাই বেশি সংযোগ রাখার সুযোগ নেই।’
তবে এই প্রকল্পে সীমাবদ্ধতাও রয়েছে বলে জানান সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস। তিনি বলেন, ‘২ হাজার ৩১০ কোটি টাকার প্রকল্পে আমরা যথাযথভাবে অর্থ পাচ্ছি না। আর এতে বিলম্বিত হচ্ছে প্রকল্পের কাজ। গত অর্থবছরে ১৯৫ কোটি টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও সম্পূর্ণ অর্থ ছাড় হয়নি। অর্থ ছাড়া প্রকল্প এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘এ সড়কটি সার্কুলার রোড হিসেবে কাজ করবে। এতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসবে। সব শহরেই এ ধরনের সার্কুলার রোড থাকে। ইতিমধ্যে ডিটি-বায়েজিদ সংযোগ সড়ক দিয়ে অনেক গাড়ি চলাচল করছে এবং জাকির হোসেন রোডের উপর চাপ কমছে। এভাবে এ সড়কটি চালু হলে শহরের অভ্যন্তরের রোডের উপর চাপ কমবে।’
উল্লেখ্য, নগরীর চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে সাড়ে আট কিলোমিটার দীর্ঘ রিং রোড কাম বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায় ২০১৭ সালে। ২০২০ সালের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। করোনাকাল এবং যথাসময়ে অর্থ ছাড় না হওয়ায় প্রকল্পটি চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। তবে তা আবারো বর্ধিত করে ২০২২ সাল পর্যন্ত হতে পারে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শেষে শাহ আমানত সেতু থেকে কালুরঘাট সেতু পর্যন্ত নদীর তীর ঘেঁষে মানুষ যাতায়াত করতে পারবে। নদীর তীরে থাকবে ব্লক বসানো। এতে সড়কটি পর্যটন শিল্পের বিকাশেও ভূমিকা রাখবে।