নিজস্ব প্রতিবেদক »
‘শহরটা যেন মরণ ফাঁদ। নালায় পড়ে, ড্রেনে পড়ে, খালে পড়ে এই শহরে মানুষ মরে। যে কোন সময় এই ধরনের ফাঁদে পড়ে মরে যেতে পারি। কিছুদিন আগেও মুরাদপুরে একজন এভাবে নালায় পড়ে মরে গেছে। এ ধরনের মৃত্যু তো মানা যায় না।’ আগ্রাবাদ মাজার গেটের পাশে খোলা ড্রেনের পাশে দাঁড়িয়ে দুঃখ ও ক্রোধ মিশ্রিত কণ্ঠে কথাগুলো বললেন মোহাম্মাদ আবু তাহের।
জানা গেছে, সোমবার রাত ১০টার দিকে মামার সাথে চশমা কিনে বাসায় ফেরার পথে ড্রেনে পড়ে নিখোঁজ হয় সেহেরীন মাহবুব সাদিয়া। ১৯ বছর বয়সী সাদিয়া চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্রী। আগ্রাবাদ মাজার গেট ও আগ্রাবাদ মোড়ের মাঝামাঝি এলাকায় ডায়মন্ড রেস্টুরেন্টের বিপরীত পাশের ড্রেনে পা পিছলে পড়ে যায় সাদিয়া।
স্থানীয়রা ঘটনার পরপরই তাকে উদ্ধারের চেষ্টা শুরু করে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও আসেন। কিন্তু নালার উপরে আবর্জনার স্তূপ জমে থাকায় এবং তার নিচ দিয়ে পানির স্রোত থাকায় তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার কাজে যোগ দেয়ার ৫ ঘণ্টা পর সোমবার রাত ৩টার দিকে ঘটনাস্থলের কাছে নালার অবর্জনার স্তূপে আটকে থাকা অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত সাদিয়া চট্টগ্রামের হালিশহর থানার মইন্যাপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
এর আগে ৩০ জুন সকালে নগরীর মুরাদপুর এলাকায় ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় চশমা খালে পড়ে পানির স্রোতে তলিয়ে যান এক সবজি ব্যবসায়ী সালেহ আহমদ (৫৫)। বর্জ্যে ভরা ওই খালে তারপর থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার কাজ চালালেও আজো সন্ধান পাওয়া যায়নি। সালেহ আহমদ চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নের মনসা এলাকার বাসিন্দা। তিনি নগরীর চকবাজারে সবজি বিক্রি করতেন।
এছাড়া চলতি বছরের ৩০ জুন নগরীর ষোলশহর চশমা হিল এলাকাতেও এমন দুর্ঘটনা ঘটে। সেখানে একটি অটোরিকশা খালে পড়ে গেলে মারা যান চালক সুলতান (৩৫) ও যাত্রী খাদিজা বেগম (৬৫)।
এর আগে ২০১৮ সালের ৯ জুন শনিবার বিকালে আমিন জুট মিল সংলগ্ন এলাকার নালায় পড়ে যায় দুই শিশু। মনি আক্তার (৬) নামের এক শিশুকে উদ্ধার করতে পারলেও বৃষ্টির পানির স্রোতে ভেসে যায় মো. আল-আমীন (৭)। বাসার কাছে খেলার সময় শিশু দুইটি নালায় পড়ে যায়। এসময় বৃষ্টি হওয়ায় নালায় পানির স্রোত ছিল। পরে আল-আমীন যেখানে পড়েছিল সেখান থেকে কিছুটা দূরে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
আরো আগে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চট্টগ্রাম নগরীতে এসে পা পিছলে নালায় পড়ে নিখোঁজ হয় হাটহাজারীর বাসিন্দা সাবেক সরকারি কর্মকর্তার শীলব্রত বড়ুয়া (৬২)। যেখানে তিনি পড়ে গিয়েছিলেন, সেখান থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে তার লাশ পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, নগরজুড়ে উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। একইসাথে পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা। কিন্তু তা হচ্ছে না বলে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে এবং প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ।
নগরে মৃত্যুফাঁদ
এবার নিহত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী